দেশের টেলিকম খাতে ২০২৭ সালের পরে সংকট তৈরি হতে পারে। অন্তত তিন ধরনের লাইসেন্স আর ওই সময়ের পরে নবায়ন করা হবে না। যেসব লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২৩ সালের মাঝামাঝি উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে সেগুলো ২০২৭ সাল পর্যন্ত নবায়নের সিদ্ধান্ত হলেও ২০২৭ সালে যেসব লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলো আর নবায়ন করা হবে না। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ওই সময়ের পরে আসতে পারে ইউনিফায়েড লাইসেন্স।
নবায়ন না করার সিদ্ধান্তের মধ্যে লাইসেন্সগুলোর মধ্যে রয়েছে আইজিডাব্লিউ, আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ)। তবে ইন্টারনেট সেবা দাতাদের (আইএসপি) লাইসেন্সের বিষয়ে কোনও কিছু বলা হয়নি। ফলে আইএসপি অপারেটররা ভাবছে এই লাইসেন্স থাকবে। তারা মনে করছে, তাদের লাইসেন্স পৃথকই থাকবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউনিফায়েড লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, লাইসেন্সিং নিয়ে কী হবে ২০২৭ সালের পরে? সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও গুঞ্জন আছে, ২০২৭ সালের পরে টেলিকম খাতে ইউনিফায়েড লাইসেন্স দেওয়া হবে। এতে করে লাইসেন্সের সংখ্যা তথা জঞ্জাল কমবে।লাইসেন্স গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমবে।
গত বছরের ৩১ মে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত আইএসপিএবির সমাপনী অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেছিলেন, নতুন আইএলডিটিএস পলিসি অনুযায়ী যে ইউনিফায়েড লাইসেন্স প্রবর্তন করা হবে, তাতে আইএসপিদেরও স্বার্থ রক্ষা ও ব্যবসা সুরক্ষিত করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইজিডাব্লিউ কল এখন ডাটাতে চলে গেছে। এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে আইসিএক্সও প্রয়োজন হবে না। এসব লাইসেন্স থাকার কোনও প্রয়োজন দেখি না। থাকবে শুধু আইআইজি। আইআইজিকে শুধু মনিটরিংয়ের জন্য রাখলে চলবে না। যদি এর থেকে রেভিনিউ শেয়ারিং বাদ দেওয়া যায় তাহলে সরাসরি গ্রাহক উপকৃত হবে। আইএসপির ব্যয় কমবে। ব্যয় কমলে সেই সুবিধা গ্রাহকরাই ভোগ করবে। তিনি আরও বলেন, আইএসপি লাইসেন্স নিয়ে আমরা কিছু শুনিনি। আশা করছি, এই লাইসেন্স নিয়ে কিছু হবে না।
জানা গেছে,২০০৮ সালে ১৫ বছর মেয়াদে ৪টি আইজিডাব্লিউ,৩টি আইসিএক্স ও ২টি আইআইজির লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছর উত্তীর্ণ হবে। ফলে মেয়াদ পূর্তির আগেই প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। ১৫ বছর মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদের জন্য লাইসেন্স নবায়ন করা হতে পারে বলে ক্লজে উল্লেখ রয়েছে।
বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে বলা হয়, যেসব আইজিডাব্লিউ,আইসিএক্স ও আইআইজির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত আছে সেগুলো তাদের কার্যক্রম ওই সময় পর্যন্ত চলমান রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর যেসব আইজিডাব্লিউ,আইসিএক্স ও আইআইজির মেয়াদ ২০২৭ সালের আগেই উত্তীর্ণ হবে সেসব লাইসেন্স অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদও ২০২৭ সাল পর্যন্ত নবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯টি আইজিডাব্লিউ,২২টি আইসিএক্স ও ৩১টি আইআইজি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ আগামী ২০২৭ সালের ১১ এপ্রিল তারিখে উত্তীর্ণ হবে। ফলে নবায়নের বেলায় ২০২৭ সাল (৩১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিবেচনা করা হবে। জানা গেছে,২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে এমন ৪টি আইজিডাব্লিউ,৩টি আইসিএক্স ও ২টি আইআইজি পরবর্তী মেয়াদের নবায়ন ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি এবং এগুলোর জন্য আনুপাতিক হারে লাইসেন্স নবায়ন ফি ধার্য করা হবে। অপরদিকে ২০২৭ সালের ১১ এপ্রিলের পরে যেসব আইজিডাব্লিউ,আইসিএক্স ও আইআইজির লাইসেন্সের মেয়াদকাল শেষ হবে না তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ ওই একই সময় তথা ১১ এপ্রিল (২০২৭) তারিখ পর্যন্ত চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৭ সালের পরে যেগুলো থাকবে সেগুলোর বিষয়ে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।
ইউনিফায়েড লাইসেন্সের বিষয়ে সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আরিফ আল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে ইউনিফায়েড লাইসেন্সের গাইডলাইন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি এখনও আমাদের কাছে ধারণা পর্যায়ে আছে। লাইসেন্সে বিভিন্ন লেয়ার থাকার চেয়ে ইউনিফায়েড লাইসেন্স থাকা ভালো। তাহলে দেশের বাইরেও ভাবমূর্তি ভালো থাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এতগুলো লাইসেন্সের বিষয়গুলোকে জটিল বলে মনে করেন। তবে এই খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে কীভাবে কাজটি করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ধারণাগত দিক দিয়ে এটা একটা ভালো উদ্যোগ।
