অ্যাথলেটিকস-হ্যান্ডবলসহ অন্য খেলার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই জড়িয়ে ছিলেন সালমা আক্তার। কিন্তু কখনও ভাবেননি ফুটবলে রেফারিং করবেন। মাঠে থাকবেন বিচারকের ভূমিকায়। ২০১৪ সালে সুযোগটি চলে আসায় সেটি লুফেও নেন। ৮ বছরের মাথায় এখন সবকিছু ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি হয়ে এএফসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছেন। অথচ তার এই অর্জনের পথটুকু মোটেও মসৃণ ছিল না। পথ চলতে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গত ১৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি এএফসির এলিট প্যানেলের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সালমা সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার কাছে সুখবরটি আসে ২০ ফেব্রুয়ারি। ফিটনেস টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, ভিডিও টেস্ট ও ম্যাচ পরিচালনা- প্রতিটি বিভাগেই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
অথচ এই পথচলায় কতো কথাই না শুনতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সালমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেয়েরা খেলাধুলায় কেন আসবে, রেফারিং কেন করবে- এ নিয়ে শুরু থেকে কম কটু কথা শুনতে হয়নি। তবে আমি হতোদ্যম হইনি। সব বাধা পেরিয়ে নিজের কাজ করে গেছি। আজ সাফল্য এসেছে, পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’
এই সাফল্য প্রাপ্তির পাশাপাশি এখন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও একটু একটু করে বদল এসেছে। সালমা তাই উচ্ছ্বসিত, ‘এখন সবকিছু সয়ে গেছে। সাফল্য পাওয়ায় আগের মতো কটু কথা সেভাবে শুনতে হয় না। বরং সবাই প্রশংসা করেন। এটা দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে। অন্তত দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসছে।’
নেত্রকোনায় ২০১৩ সালে রেফারিং করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সালমা। যন্ত্রণাদায়ক পুরোনো দিনের কথা মনে করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সাত দিনের রেফারিং কোর্সে অংশ নিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার বয়স ছিল কম- এমন প্রশ্নও তুলেছিল কেউ কেউ। শেষ পর্যন্ত অংশ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে পাস করি।’
২৫ বছর বয়সী সালমা বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের শারীরিক শিক্ষক। পাশাপাশি রেফারিং করতে গিয়ে অনেক শ্রম দিতে হয় তাকে। এমনকি নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে রাস্তায় অনুশীলনও করছেন। সালমা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘স্কুলে ৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া লাগে। অনেক সময় ক্লান্ত লাগে, ইচ্ছা না থাকলেও অনুশীলন করতে হয়। আমি যেখানে থাকি সেখানে কাছাকাছি কোনও মাঠ নেই। ফিটনেস ধরে রাখতে তাই রাতে রাস্তায় অনেক সময় অনুশীলন করতে হয়। সবকিছুই আসলে রেফারিংয়ের জন্য। এখন ফল পেয়ে খুশি।’
সালমার বাবা শহর আলী ২০২১ সালে কিডনি জটিলতায় মারা গেছেন। বেঁচে থাকলে মেয়ের এমন সাফল্য দেখে অনেক খুশিই হতেন। বাবা সবসময় চাইতেন মেয়ে সাফল্য পাক। বিশেষ করে মেয়ের ছবি টিভি বা পত্রিকাতে দেখলে অনেক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। তাই সালমা চাইছেন আরও এগিয়ে যেতে, ‘আমার স্বপ্ন এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে একসময় ম্যাচ পরিচালনা করবো। আসলে মুসলিমপ্রধান দেশের মেয়ে হয়ে রেফারিং করাটা খুব চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ফুটবলের মতো রেফারিংয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা যে পারে, সেটা দেখিয়ে দিয়েছি। এখন আমাকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।’