বার্সেলোনার ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত প্রথম লেগ গোলশূন্য। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ, লন্ডনের দ্বিতীয় লেগে শেষ মিনিটে ইনিয়েস্তার গোলে চেলসির সঙ্গে ড্র করে (১-১) বার্সেলোনা। অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে উঠে যায় মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তার দল। শেষ পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ফাইনালে ২-০ গোলে হারিয়ে জিতে নেয় শিরোপা। ২০০৯ সালের সেই চ্যাম্পিয়নস লিগের পর ১১ বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনও ওই লিগের সেমিফাইনাল দ্বিতীয় লেগে রেফারির ‘অবিচার’ ভুলতে পারেননি সেই সময়কার চেলসি কোচ গাস হিডিঙ্ক।
ভুলবেন কী করে? পুরো ফুটবল বিশ্বেই শ্রদ্ধার পাত্র এই ডাচ কোচের হৃদয়ে এখনও রক্তক্ষরণ ঘটায় সেই ম্যাচ। তিনি এখনও মনে করেন সেই ম্যাচে ‘সন্দেহজনক’ কিছু ঘটেছিল। সারাজীবনই ফুটবলের নৈতিক চেতনাকে ওপরে তুলে ধরেছেন। এর আগে কখনও বিশ্বাসই করেননি ফুটবলে ম্যাচ পাতানো যায়। এ ম্যাচটাই ভেঙে দেয় সেই বিশ্বাস।
নেদারল্যান্ডসের টেলিভিশন জিগ্গো স্পোর্টকে হিডিঙ্ক সম্প্রতি বলেছেন, ‘রেফারির পারফরম্যান্স আমাকে অবাক করে তুলেছিল। কারণ অতীতে তার অনেক নিখুঁত পারফরম্যান্স দেখেছি। এটাই কি ছিল আমার দেখা সবচেয়ে বাজে রেফারিং? আমি মনে করি তাই। আর এই একটি মাত্র মুহূর্তেই আমার মনে হয়েছে ম্যাচ পাতানো সম্ভব।’
সেই ম্যাচে নরওয়েজিয়ান রেফারি টম হেনিং ওভরেবো চেলসিকে চারবার পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করেন। চেলসির ফ্লোরেন্ত মালুদা ও দিদিয়ের দ্রগবার পেনাল্টির চিৎকারে হয়তো গা করেননি রেফারি দেখেননি বলে। কিন্তু চোখে দেখেও বক্সের মধ্যে বার্সেলোনার জেরার্ড পিকে ও স্যামুয়েল ইতোর হ্যান্ডবল যেভাবে এড়িয়ে গেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
ম্যাচ শেষে দ্রগবা অফিসিয়ালদের দিকে যেমন অশ্লীলভাবে তেড়ে গিয়েছিলেন, সেটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসের একটি কুখ্যাত ছবি হয়ে আছে। গাস হিডিঙ্ক বলেছিলেন, এমন বাজে রেফারিং তিনি কখনও দেখেননি। রেফারি ওভরেবো পেয়েছিলেন প্রাণনাশের হুমকি। খোদ উয়েফার বিরুদ্ধেই ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে। উয়েফা নাকি আগের মৌসুমের মতো চেলসি-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফাইনাল এড়াতেই ফাইনালে তুলে দেয় বার্সেলোনাকে।
সমসাময়িক ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত রেফারিংয়ের দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে এ ম্যাচটি। দীর্ঘ নয় বছর পর ২০১৮ সালে স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কার কাছে ওভরেবো অবশ্য স্বীকার করে নেন তার ভুল, ‘সত্যি বললে, ওটা আমার সেরা দিন ছিল না। তবে রেফারির এমন ভুল হতেই পারে। কখনও কখনও এমন ভুল করতে পারেন খেলোয়াড় বা কোচরাও। কোনও কোনওদিন প্রত্যাশিত মানটা হয়তো আপনি ধরে রাখতে পারেন না। তবে এটা সত্যি, ওই পারফরম্যান্সের জন্য গর্বিত আমি হতে পারি না। কয়েকটি ভুল সে ম্যাচে হয়েছিল, আর প্রত্যেকেরই তা নিয়ে মতামত দেওয়ার অধিকার আছে।’