পুস্কর খিসা মিমোর আনন্দটা এবার অন্যরকম। টানা ১৬ বছরের জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে এই প্রথম অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। ইন্দোনেশিয়াতে এএইচএফ কাপ হকিতে রাঙামাটির ফরোয়ার্ডের নেতৃত্বে টার্ফে লড়াই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মিমোর অবয়বে তাই খুশির ঝিলিক। বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। নতুন দায়িত্ব। তারওপর শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি কিছুটা চাপা শঙ্কাও কাজ করছে।
আসছে জুনে ৩২ বছরে পা দেবেন আবাহনী লিমিটেডের তারকা। হকি ফেডারেশন সাম্প্রতিক সময়ে প্রথমবারের মতো অলিখিত আইন করেছে। বয়স ৩২ বছরের ওপর হলেই ছাঁটাই! এই আইনের বেড়াজালে পড়ে রাসেল মাহমুদ জিমির মতো অভিজ্ঞ স্টাইলিশ খেলোয়াড় বাদ পড়েছেন। এনিয়ে শোরগোল হলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি। জিমি ব্রাত্যই থেকে গেছেন!
আর কিছু দিন পর মিমোর ৩২ এ পা দেওয়ার পর জিমির মতো ভাগ্য বরণ করতে হয় কিনা এ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। যদিও তিনি এ নিয়ে ভাবছেন না। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ঘাম ঝরিয়ে এক ফাঁকে বাংলা ট্রিবিউনকে নিজের ভাব প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘দেখুন এ নিয়ে আমি ভাবছি না। বয়স নয়, আমার কাছে পারফরম্যান্সই বড়। আমার যত চিন্তা এখন এএইচএফ কাপ নিয়ে। কীভাবে দলকে চ্যাম্পিয়ন করাবো তা নিয়েই আমরা ছক কষে চলেছি। তবে হ্যাঁ। একদম যে এই বিষয়টি মগজে নেই তা কিন্তু নয়। আমার কাছে মনে হয় বয়স নয়, পারফরম্যান্স দেখে একজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া উচিত। আমার বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। পৃথিবীর কোথাও শুধু বয়সের কারণে কেউ বাদ পড়েছে বলে শুনিনি। আর জিমি ভাইয়ের বিষয়টা আসলে ফেডারেশন ভালো বলতে পারবে। সামনের দিকে কী হবে তা সময় বলে দেবে।’
মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে কোচ মামুনুর রশীদের অধীনে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ঘাম ঝরাচ্ছেন মিমো-রোমান-শিতুলরা। লক্ষ্য তাদের ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এএইচএফ কাপের শিরোপা ধরে রাখা। এটা এশিয়া কাপের বাছাইপর্বও। এই প্রতিযোগিতার শেষ চার আসরের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ। তাই এবারও তা ধরে রাখার মিশন। হকিতে সাধারণত প্রতিটি টুর্নামেন্টে আলাদা করে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়। মিমো এই দলে সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড়। তবে তার আগেই রোমান-শিতুলরা অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পড়েছেন।
২০০৯ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলে আসা বিকেএসপির খেলোয়াড় মিমোর এ নিয়ে কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করলেও তা মেনে নিয়েই টার্ফে ঝড় তুলে যাচ্ছেন। এবার যখন সত্যিকার অর্থে নেতৃত্বে থাকছেন। তখন খুশির ফোয়ারা। মিমোর কথাতে পরিষ্কার, ‘বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলে ১৬ বছর ধরে খেলছি। দীর্ঘ এই পথচলায় অনেক মুহূর্ত এসেছে, কিন্তু এ দিনটা আমার জন্য সত্যিই বিশেষ। এই প্রথমবার জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়াটা আমার জন্য এক বিশাল সম্মানের,আবেগের মুহূর্ত। দেশের পতাকা বুকে নিয়ে খেলাটা সব সময় গর্বের, আর আজ সেই গর্বের সঙ্গে যোগ হয়েছে দায়িত্বের ভার। আমার আগে অনেক জুনিয়র খেলোয়াড়রা অধিনায়কত্ব পেলে তখন কিছুটা খারাপ লাগা কাজ করছিল। তবে তা মেনে নিয়েছিলাম। এখন অবশেষে দেরিতে হলেও আমার ওপর দায়িত্ব চেপেছে। অনেক খুশি বলতে পারেন।’
জাতীয় দলে ১০০ এর ওপরে ম্যাচ খেলে গোলও করেছেন ৪০ এর বেশি। মিমোর নেতৃত্বে দল এবারও সেভাবে প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই জাকার্তা যাচ্ছে। যেখানে জাকার্তায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ওমান খেলছে পাকিস্তানে। মিমো তা মেনে নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি সব সময় ছিল। মানে বাইরের দলের বিপক্ষে ম্যাচ না খেলার। এটা মেনে নিয়েই আমরা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলছি। এবারও খেলবো।’
দেশে বিমানবাহিনীর বিপক্ষে ম্যাচ খেলছে মিমো-ওবায়দুররা। ওমান শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাদের হারিয়েই টানা পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জেতার মিশন বাংলাদেশের। অধিনায়কের কথাতে আত্ববিশ্বাসের সুর, ‘আমরা জাকার্তায় যাবো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। ওমান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও তাদের হারানোর সামর্থ্য আছে।’
মিমোর সতীর্থ অনেকেই সার্ভিসেস দলে চাকরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মিমো সেই জায়গায় ব্যতিক্রম। কেন চাকরি করেননি তা বলতে গিয়ে জানালেন, ‘আসলে আমি বিকেএসপি থেকে বেরিয়ে কোনও ঘেরাটোপের মধ্যে থাকতে চাইনি। এখন মনে হচ্ছে চাকরি করলে হয়তো ভালো হতো। তবে আমি খারাপ নেই। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় দিন চলে যাচ্ছে।’
কাছের আত্মীয় সাবেক ফুটবলার পরিতোষ দেওয়ানের মাধ্যমে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে মিমোর জীবন পাল্টে গেছে। এখন হকি দলের অধিনায়ক হয়ে দেশের বাইরে লাল-সবুজ পতাকার জন্য লড়বেন। এটাও বা তার জন্য কম কীসে!