বাংলাদেশি বাবা মাসুদুর রহমান ও জাপানি মা তমোমি মাৎসুশিমার একমাত্র মেয়ে মাৎসুশিমা সুমাইয়া। জন্ম জাপানে। তবে ফুটবলের টানে অনেক আগেই বাংলাদেশে আসা। বছর দুই আগে লাল-সবুজ দলের ক্যাম্পে জায়গা করে নেন। এরপর থেকে ২৩ বছর বয়সী উইংগারের আবাসস্থল বাফুফে ভবন। সেখানে থেকেই জাতীয় দলের হয়ে অনুশীলন করছেন… খেলছেন। এবার তো নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয়ী অন্যতম সদস্য সুমাইয়া। যদিও মাত্র একটি ম্যাচে বদলি খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তবে তাতে কোনও খেদ নেই। শিরোপা উচ্ছ্বাসে এখনও ভাসছেন। মেয়ের এমন সাফল্যে বাবার পাশাপাশি জাপানি মায়ের আনন্দ কম নয়।
জাপানে জন্ম ও বাল্যকাল কেটেছে সুমাইয়ার। তাই জাপানিজ ভাষাটা ভালো করে রপ্ত করেছেন। তবে বাংলাদেশে এসে বাংলাটা রপ্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেকটা বলতে ও বুঝতে পারলেও পড়তে পারেন না। জাপানে থাকতেই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। ৯ বছর বয়সে বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। ফুটবল নিয়ে চর্চা চলতে থাকে। তারপর একপর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান। মাঝে মালদ্বীপ লিগে খেলে এসেছেন। এখনও নিজের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
যদিও সাফে অনেকটাই বসে থাকতে হয়েছে সুমাইয়াকে। তাতে কী! এ নিয়ে কোনও আফসোস নেই তার। বাংলা ট্রিবিউনকে তেমনটাই জানিয়েছেন, ‘আমি মাত্র একটি ম্যাচে বদলি হয়ে খেলতে পেরেছিলাম। ভুটানের বিপক্ষে। এ নিয়ে আমার কোনও কষ্ট নেই। আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতেই আমরা অনেক খুশি। সবাই মিলে এখনও আনন্দ করে যাচ্ছি।’
সুমাইয়ার পজিশনে খেলা ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে ট্রফি এসেছে। সুমাইয়া জানালেন, ‘ঋতুর সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। সবার সঙ্গে তেমনই। এখন ও ওই পজিশনে ভালো খেলছে। আমিও চেষ্টা করছি। খেলতে না পেরে খারাপ লাগেনি। প্রথমবার ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছি, এই আনন্দ অন্যরকম।’
গত বছর নেপালের বিপক্ষে অভিষেক হয় সুমাইয়ার। ফুটবলের জন্য নিজের আরাম আয়েশের বাড়ি ছেড়ে বাফুফে ভবনে উঠেছেন আগেই। সেখানে গাদাগাদি করে থাকা। একটি বাথরুম সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়া। খাবার নিয়েও আছে সমস্যা। তারপরও ফুটবলই তার ধ্যান-জ্ঞান, ‘বাসায় তো অনেক আরামে থাকি। ক্যাম্পে এক রুমে অনেকেই থাকে। বাথরুম তো একটা। এছাড়া খাওয়া দাওয়া সমস্যা হয়। মসলা যুক্ত খাবার থাকে। আমার মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। সবসময় তা খেতেও পারি না। তারপরও নিচ্ছি।’
সুমাইয়া বাফুফে ভবনে জাতীয় দলের আবাসিক ক্যাম্পে এসে জাপানি খাবার মিস করেন। বিশেষ করে তার মা অনেক কিছু বানিয়ে দিতেন। সুমাইয়া নিজেই বলেছেন, ‘জাপানি সুশি ও রামেন খুব মিস করি। ক্যাম্পে ঠিকমতো ঝাল মসলা যুক্ত খাবার খেতে না পারলে তখন নিজেই অন্য কিছু রান্না করে খাই। পাস্তার ওপর নির্ভর থাকতে হয়। মাও প্রায় খাবার নিয়ে আসে। অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি বলতে পারেন।’
তবে এই পর্যন্ত আসার পেছনে বাবার চেয়ে মায়ের অবদান বেশি বললেন সুমাইয়া, ‘আমার বাবার চেয়ে মা-ই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। মা আমাকে দামি বুট কিনে দেন। খেলার জন্য সবসময় উৎসাহ দেন। মাঠে যান মাঝে মধ্যে। তিনিও চান আমি যেন ভালো ফুটবলার হয়ে উঠি। বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারি। সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি শুনে বাবা ছাড়াও মা-ই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন মনে হলো। তার আনন্দ ছিল দেখার মতো।’
সুমাইয়ারা তিন ভাই-বোন। এর মধ্যে সুমাইয়া শুধু বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছেন। সাফ জেতার পর ওই রাতে ট্রফি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি এখনও ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই ছবির প্রসঙ্গে কথা উঠতেই সুমাইয়ার হাসি, ‘আসলে মেসিকে দেখেছিলাম এভাবে ঘুমিয়ে ছবি তুলতে। আমার রুমমেট হলো অধিনায়ক সাবিনা। তিনি ট্রফি নিয়ে আসার পরই মেসির মতো করে ট্রফি উদযাপন করেছি।’
আজ রাতে জাপানে ফিরে যাচ্ছেন সুমাইয়া। অসুস্থ নানীকে দেখতে। আবার ফিরবেন ক্যাম্পে। তখন লড়াই চলবে একাদশে জায়গা করে নেওয়ার। কঠোর পরিশ্রম করে একসময় হয়তো জায়গা হলেও হতে পারে।