সোমবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশ ফুটবল টিমের সানজিদা আখতারের ফেসবুক স্ট্যাটাস। বিকালে সাফ চ্যাম্পিয়নের লড়াই, আর সকাল থেকে আলোচনায় সানজিদা ও নারী ফুটবল টিম। কী ছিল স্ট্যাটাসে? সানজিদার সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে।’
সন্ধ্যা হতেই ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলার মেয়েরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন—এবার কি সানজিদাদের জন্য ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসের আয়োজন হবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি উঠেছে, মেয়েরা মর্যাদাও রাখলো, জাতির জন্য শিরোপাও আনলো। এবার তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিক বাফুফে।
একইসঙ্গে নারী ক্রিকেট ও ফুটবল দলের প্রতি বৈষম্যের ইঙ্গিত করে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিতে আর যেন কার্পণ্য না থাকে। সিনিয়র সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক লিখছেন, ‘অভিনন্দন, মেয়েরা। সবচেয়ে বেশি টাকা ঢালা হয় যেখানে, সেই ক্রিকেটে আমাদের ছেলেরা আজ পর্যন্ত কোনও ট্রফি জিততে না পারলেও তোমরা ক্রিকেট-ফুটবল দুই খেলাতেই পারলে। তোমাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিতে এবার যদি কর্মকর্তাদের মন গলে।’
এনভায়রনমেন্টাল প্রকৌশলী শুভ্রা কর লিখেছেন, ‘আমি জানি না, কবে শেষ আমার এভাবে আনন্দে চোখে জল এসেছে। এই আনন্দ যে শুধুই খেলা জেতার নয়, এই আনন্দ আরও অনেক কিছুর বিপরীতে জয়। আরও অনেক অনেক সানজিদা, সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া, রুপনার জয়। তবে আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে সঙ্গে এবার অন্তত মেয়েগুলোর ভাগ্যে কিছু সম্মানও জুটুক। একটা রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা, এয়ারপোর্ট থেকে একটা নিরাপদ বাস, মাসিক একটা সম্মানি, আর সেই সঙ্গে সামনে খেলা চালিয়ে যেতে পারার সামাজিক অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা।’
ব্র্যাক জেন্ডার কর্মসূচির পরিচালক নবনীতা চৌধুরী ফেসবুকে জয়ের প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েদের দাবায়ে রাখা যায় না। আমাদের ঘর, সমাজ আর রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি, সম্ভাবনা আর বাস্তবতা এটাই। ঘরে আর দেশে এর স্বীকৃতি নাই। আমাদের মেয়েরা বিশ্বদরবার থেকে সেই স্বীকৃতি জিতে আনতে শিখে গেছে।...’
মেয়েরা ছাদখোলা বাস পাবে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ সোমবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নারী দলকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা দেবো। পুরো পরিকল্পনাটা কী হতে পারে, তা এখনই বলতে পারছি না। ছাদখোলা বাসে করে আনতে পারলে তো ভালো হতো। তবে এখানে নিরাপত্তাসহ অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা দেখতে হবে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিকালে এই বিষয়ে সবকিছু জানাতে পারবো।’