লম্বা সময় থেকেই জাতীয় দলের বাইরে মোসাদ্দেক হোসেন। ২০২০ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশের জার্সিতে খেলেন এই অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের বাইরে থাকা মোসাদ্দেক ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মাতিয়েছেন আবাহনীর জার্সিতে। দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়েও সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। মঙ্গলবার মোহামেডানকে হারানোর ম্যাচে ব্যাট ও বল হাতে অলরাউন্ডস পারফরম্যান্স করে ম্যাচসেরা হন। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডার টুর্নামেন্ট সেরাও হন।
মঙ্গলবার মোহামেডানকে হারানোর ম্যাচে মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে মোসাদ্দেক গড়েন ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। এই জুটিতেই মূলত ম্যাচ হেরে যায় মোহামেডান। ৬ উইকেটের জয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে উচ্ছ্বাসে মাতেন আবাহনীর ক্রিকেটাররা। ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাস পর্ব শেষ করে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক। শুরুতেই মিঠুনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আপনি যখন ভালো খেলতে থাকবেন এবং আপনার জোনের যে শটগুলো আছে, সেগুলো খেলতে থাকবেন, তখন সেটা আপনাকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস দেবে। একই সময়ে মিঠুন ভাইয়ের যে ইনিংসটা ছিল, সেটা আমাদের কাজ সহজ করে দিয়েছে। তো আমি বলব, এটা পুরো টিমের এফোর্ট এবং আমরা ডিজার্ভিং চ্যাম্পিয়ন।’
‘আবাহনীর মোসাদ্দেক’ নামেই এখন পরিচিতি এই অলরাউন্ডার। লম্বা সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটির সঙ্গে জড়িয়ে তার নাম। তাদের জার্সিতে আরও একটি শিরোপা জিতে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তিনি, ‘আমি আবাহনীর ক্রিকেটার। পরের বছরও চাইবো এই দলটির হয়ে খেলতে। ২০১৩ সালে আবাহনীতে যোগ দিয়েছিল স্পষ্ট মনে আছে। এই ১৩ বছরে (মোট) নয়টা শিরোপা জিতলাম। আমার কাছে এটা বিশেষ কিছু।’
মোসাদ্দেক আরও বলেছেন, 'আমি চেষ্টা করেছিলাম আবাহনীতে থাকতে। সব কিছু মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি ছিল যে, আমাদের দল বানানোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ওই সময়ে আমার ওই ডেডিকেশন ছিল যে, আমি আবাহনীতেই খেলবো। শেষ পর্যন্ত খেলতে পেরেছি, টিম ম্যানেজমেন্টকে খুবই ধন্যবাদ তারা আমাকে রাখতে পেরেছে, তারা সেই সাপোর্টটা আমাকে করেছে।’
আবাহনী সবসময় সুবিধা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। গত কয়েক বছরে ক্রিকেট অঙ্গনে এমন কথা বেশ চর্চিত। এবার মাঝারি মানের দল নিয়েও দারুণ ক্রিকেট খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনী। এবারের শিরোপা জেতার মাহাত্ম্য কেমন, এমন প্রশ্নে মোসাদ্দেক বলেছেন, ‘আমি আবাহনীর ঘরের ছেলে, সেটা শুনতে আমার কখনোই খারাপ লাগে না, ভালো লাগে। আরও অনেক দিন খেলতে চাই যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। বিগত বছরগুলোতে আমরা যে ধরনের টিম করতাম, সেখানকার প্লেয়ারদের নামগুলো দেখবেন। আর এই বিতর্ক নিয়ে যে কথাগুলো আসে, তার সঙ্গে আমি একমত না। এখানে আপনারা মাঠ থেকে খেলা দেখেন, আপনারাই প্রমাণ। এগুলা কোনও প্রভাব ফেলে না।’
মোসাদ্দেক আরও বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই স্পেশাল, কারণ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের সামনে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি, এটা অনেক বড় ব্যাপার আমার কাছে।’
অনেক কিছু বদলে যাওয়ায় বাড়তি জেদ চেপেছিল কিনা? মোসাদ্দেকের উত্তর, ‘দেখুন, আমরা প্রফেশনাল প্লেয়ার। আজকে আমি মোহামেডানে খেলতে পারতাম। মোহামেডানের প্লেয়াররা এই টিমে খেলতে পারতো। তো একজন খেলোয়াড় হিসেবে এগুলা আমাদের জন্য ম্যাটার করে না। আমাদের কাজটা ছিল মাঠে ভালো খেলা।’
ঢাকা লিগে দারুণ পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়েছেন মোসাদ্দেক। আগামী মাসের শুরুতেই বাংলাদেশ সফরে আসছে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দল। স্বাভাবিকভাবেই দারুণ ছন্দে থাকা মোসাদ্দেকের কাছে প্রত্যাশাটা বেশি থাকবে। ১৪ ইনিংসে ৪৮৭ রানের পাশাপাশি ১৬ ইনিংসে ৩০ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে বোলিংয়ের শীর্ষে আছেন তিনি। এমন পারফরম্যান্সে তিনি হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। তাতে ‘এ’ দলের সিরিজের স্কোয়াডে। সেখানে ভালো করতে পারলে হয়তো জাতীয় দলের দরজা খুলে যাবে মোসাদ্দেকের।
তবে এই ব্যাপারে মোসাদ্দেকের ভাবনা, ‘আসলে ভালো খেলতে থাকলে সুযোগ আসবে। আমি মনে করি, এ দলে খেলার একটা সুযোগ এসেছে। সেখানে ভালো খেলতে পারলে অবশ্যই সিলেকশন প্যানেল আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে। তাই আমার কাজ ভালো খেলা, আমি সেটা চেষ্টা করবো। বাকিটা উনাদের কাজ।’