শিরোপা স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না মোহামেডানের সামনে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে হারতে বসেছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। তবে শেষ পর্যন্ত নাসুমের বীরত্বে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ম্যাচ জিতেছে তাওহীদ হৃদয়ের মোহামেডান। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২ রান। এক ছয় ও এক চারে শেষ ওভারের সমীকরণ মিলিয়ে মোহামেডানকে শিরোপা জয়ের আরও একটি সুযোগ করে দিলেন নাসুম। আগামী মঙ্গলবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে আবাহনী ও মোহামেডান। ওই ম্যাচের জয়ী দলই চলতি মৌসুমের শিরোপা জিতবে।
মোহামেডানের অধিনায়ক হৃদয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গত কয়দিনে নাটক কম হয়নি। দুই দিন আগে টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছিলেন আজ অনুষ্ঠিত গাজীর বিপক্ষে ম্যাচে নিষিদ্ধ থাকবেন হৃদয়। তবে গতকাল শুক্রবার তামিম ইকবালসহ ক্রিকেটারদের দাবির মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিসিবি। হৃদয়ের এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পিছিয়ে যায় এক বছরের জন্য। এমন সব জটিলতা নিয়েই শনিবার গাজীর বিপক্ষে মাঠে নামে মোহামেডান।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় গাজী গ্রুপ। মুনিম শাহরিয়ারের ৮০ রানের ইনিংসে গাজী ২৩৬ রানের সংগ্রহ করে। জবাবে খেলতে নেমে মোহামেডান শুরুতেই আনিসুল ইসলাম (২) ও তৌফিক খান তুষারকে (১৪) হারায়। এরপর তৃতীয় উইকেটে রনি তালুকদার ও হৃদয় প্রতিরোধ গড়েন। তাদের ৭৫ রানের জুটি পর রনি ওয়াসি সিদ্দীকির লেগস্পিনে কাবু হন। আউট হওয়ার আগে খেলেন ৮৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। এরপর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে হৃদয় ৩১ রানের জুটি গড়ে আউট হন। মোহামেডানের অধিনায়কের ৩৭ রানে আউটের পর চাপে পড়ে যায় মোহামেডান। চাপটা আরও বাড়ে যখন কোনও অবদান না রেখেই আরিফুল ইসলাম (১) সাজঘরে ফেরেন।
ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও সাইফউদ্দিন মিলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের স্লো ব্যাটিংয়ে দল আরও চাপে পড়ে যায়। মাহমুদউল্লাহও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৬২ বলে ৪৯ রান করে আউট হন। মূলত গাজীর দুই স্পিনার শামীম মিয়া ও পারভেজ হোসেন জীবনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ৫৪ বলে ৫১ রানে থাকা সমীকরণ গিয়ে দাঁড়ায় ১২ বলে ২৩ রানে। সাইফউদ্দিন খোলসে বন্দি থাকায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নাসুম। তার দৃঢ়তায় অসাধারণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান। শেষ ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন সাইফউদ্দিন। শেষ ৫ বলে নাসুম এক চার, ছক্কা ও সিঙ্গেলে ১১ রানের সমীকরণ মিলিয়ে ফেলেন। ১৩ বলে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন।
দারুণ ইনিংসে খেলেও ম্যাচ সেরা হতে পারেননি নাসুম। বোলিংয়ে তিন উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ৩০ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলা সাইফউদ্দিন হন ম্যাচ সেরা।
গাজীর বোলারদের মধ্যে শামীম ও ওয়াসি সিদ্দীক দুটি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট নেন সোহেল রানা।
১৫ ম্যাচে মোহামেডানের পয়েন্ট এখন ২৪। সমান ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষে রয়েছে আবাহনী। আগামী মঙ্গলবার মিরপুরেই অঘোষিত ফাইনালে রূপ নেওয়া সুপার লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ও মোহামেডান। ম্যাচটিতে যারা জিতবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। গত আসরেই চ্যাম্পিয়ন আবাহনী চাইবে শিরোপা ধরে রাখতে, অন্যদিকে মোহামেডানও চাইবে লম্বা সময়ের বিরতি কাটাতে। সর্বশেষ ২০০৯-১০ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল সাদা-কালো জার্সিধারীরা।