চাইলে বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিতেই পারেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা। কেননা চার বছর ধরে টেস্ট জিততে না পারা দলটি জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কল্যাণেই তো। ২০২১ সালের মার্চে আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের টেস্টে জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর ১০টি টেস্ট খেলে তিনটিতে ড্র করলেও জয়ের দেখা নেই। অবশেষে ক্রেইগ আরভিনের দলের সামনে এলো মাহেন্দ্রক্ষণ! সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম দুই হাত ভরে দিলো জিম্বাবুয়েকে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের বদান্যতায় ৩ উইকেটে সিলেট টেস্ট জিতে হারের বৃত্তটা ভাঙতে পারলো তারা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এই সিলেটেই বাংলাদেশকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। টেস্টটি ছিল সিলেটের অভিষেক ম্যাচ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে কথার লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন, তাদের প্রস্তুতিরও কোনও ঘাটতি নেই। জিম্বাবুয়েকে ছোট না করে অন্য দলের মতো দেখছেন তারা। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে যেন হয়ে উঠলো মহাপরাক্রমশালী কোনও দল। যাদের বিপক্ষে ২২ গজে ব্যাটারদের ব্যাটিং করাটা রীতিমতো কঠিন কাজ! টপ অর্ডার ব্যাটার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার ব্যাটার কেউই প্রতিরোধ গড়তে পারলেন না ব্লেসিং মুজারাবানি-ভিক্টর নিয়াউচিদের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যাটিং দেখে মনে হতে পারে কঠিন কোনও বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে যেন লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদেরকে।
আদতে জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণ মোটেও তেমন কিছু ছিল না। দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার শট বলের বিপক্ষে খাবি খেয়েছেন। সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয় কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। দুই ইনিংসে মুমিনুল হক ভালো শুরুর পর সেট হয়ে আউট হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৫৬ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ করে আউট হন। মুমিনুলের দুটি আউটই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এদিকে মুশফিকুর রহিম দুই ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যাচ্ছেতাই শটে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। প্রথম ইনিংসে পুল শটে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। পরের ইনিংসে তো আরও বাজে শট খেলেন মুশফিক। অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন মুশফিক। দলের সবচেয়ে সেরা ব্যাটারদের যখন এই অবস্থা, বাকিদের জন্য কাজটা নিশ্চয়ই আরও কঠিন হওয়ার কথা!
কঠিন কাজটাতে ভালোই করছিলেন অধিনায়ক শান্ত। প্রথম ইনিংসে অস্বস্তি নিয়ে ৪০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে সাবলীল ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। আগের দিন জাকের আলী অনিকের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটিতে অপরাজিত ছিলেন তিনি। বুধবার চতুর্থ দিনে মাঠে নেমে প্রথম ওভারেই আউট হন শান্ত। মূলত তার আউটের পরই বাংলাদেশের ৩০০ রানের লক্ষ্য দেওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তবুও জাকেরের একার লড়াইয়ে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ১৭৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিতে পারে।
অথচ বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল জিম্বাবুয়েকে ৩০০ রানের লক্ষ্য দেওয়া, সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ২৭০ রান। সেই জায়গায় বাংলাদেশ দিতে পারে ১৭৪। অনেকটা সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করে। দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারানের জুটিতে ৯৫ রান তুলে ফেলে। তবে এরপরই বাংলাদেশের দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে রান যেহেতু খুব বেশি ছিল না, ফলে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেট হাতে রেখে চার বছরের জয়খরা কাটানোর সুযোগ পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তাতে করে বাংলাদেশের আরও একটি হতাশার গল্প রচিত হয়ে যায় সিলেটে। ম্যাচ হারলেও মিরাজ এক ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে দুইশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। এই টেস্টে অর্জন বলতে কেবল এটিই হতে পারে বাংলাদেশের!