দুই বছর আগে মুশফিকুর রহিম এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘অভিজ্ঞতার দাম নেই, ১৭ বছর কাটিয়েছি এটাই বড় ব্যাপার!’ সিলেট টেস্টে তার দুই ইনিংসের ব্যাটিং দেখে ভক্তরাও হয়তো বলেছেন, আসলেই অভিজ্ঞতার দাম নেই, থাকলে কি দলের বিপদে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হতে পারেন? ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিজ্ঞতাই বড় মানদণ্ড! যদি সত্যিকার অর্থেই অনভিজ্ঞ, কম অভিজ্ঞ আর মহাঅভিজ্ঞদের পারফরম্যান্স এক পাল্লায় মাপতে পারতেন নির্বাচকরা, তাহলে মুশফিকের মতো অনেকেই দলে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতেন। কিন্তু নির্বাচকদের মানদণ্ড হয়ে যাচ্ছে অভিজ্ঞতা! কে কত বেশি ম্যাচ খেলেছে, সেটাই বড়!
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিজ্ঞতার দাম দেন বলেই মুশফিক এত বছর ক্রিকেট খেলতে পারছেন? নয়তো ক্যারিয়ার শুরুর কয়েক টেস্টেই তিনি বাদ পড়ে যেতেন। নির্বাচক-টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের অভিজ্ঞতার মূল্য দিলেও মুশফিকরা কি তার প্রতিদান দিতে পারছেন? বিশ্বের সব দেশে টেস্ট খেলে বেড়ানো মুশফিক ১০০ টেস্টে খেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, ক্যারিয়ারে বহু বাঘা বাঘা বোলারদের বিপক্ষে লড়াই করেছেন। সেই মুশফিককে কিনা এখন খাবি খেতে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে! প্রথম ইনিংসে না হয় ভুল করেছেন, অভিজ্ঞ এই ব্যাটার সেই শিক্ষা কাজে লাগালেন না দ্বিতীয় ইনিংসেও। একই ভুল করে ফিরেছেন খুব দ্রুত!
সিলেটে প্রথম ইনিংসে ওয়েলিংটন মাসাকাদজার শর্ট বল গায়ের জোরে খেলতে গিয়ে আকাশে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মিড উইকেটে ব্রায়ান বেনেট তালুবন্দি করে মুশফিককে সাজঘরের পথ দেখান। আজকে দ্বিতীয় ইনিংসে তো আরও বাজে শট খেলেছেন। ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি খোঁচা মেরে স্লিপে সহজ ক্যাচ তুলে দেন। যেন স্লিপে ফিল্ডিং শেখানোর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। সুযোগটা হাতছাড়া করেননি ক্রেইগ আরভিন, সহজ ক্যাচ নেন।
আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও মাথাটা নিচু করে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। যাওয়ার পথে মুশফিক নিশ্চয়ই ভেবেছেন, শুধু অভিজ্ঞতার কারণেই তার ওপর আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবুও সেই আস্থার প্রতিদান মুশফিকের মতো অভিজ্ঞরা দিতে পারছেন না। টপ অর্ডারে টানা খেলছেন মাহমুদুল হাসান জয়। ১৭ ইনিংস আগে সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর ৮ টেস্ট খেলে তার সর্বোচ্চ রান ৪০। জয়ের মতো ক্রিকেটাররাও টিকে যাচ্ছেন অভিজ্ঞ হচ্ছেন বলে! ১৭ টেস্ট খেলা জয়কে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে সুযোগ দিলে তো অভিজ্ঞতার ঘাটতি হবে, সেই ঝুঁকি নিতে চান না নির্বাচকরা।
অভিজ্ঞদের ওপর নির্বাচকদের আস্থা দোষের কিছু না। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও যখন তাদের ওপর আস্থা রাখা হয়, তখনই প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় হচ্ছে, ‘এই সিরিজ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, যা পরের সিরিজে কাজ লাগবে!’ বিস্ময়করভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা পরের সিরিজেও শুধরে নেন না। একই ভুল, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েই যান। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে একই ভুল বারবার করাটা বেমানান। সেখানে যদি অভিজ্ঞরা একই ভুল বারবার করে, সেখানে তো প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা অভিজ্ঞতার মূল্য কতখানি দিচ্ছেন?