ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে টেস্টে নতুন ধরনের ক্রিকেট খেলার বার্তা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে সেই পুরানো বাংলাদেশের দেখা মিললো। প্রথম ইনিংসে শান্তর দল অলআউট হয়েছে মাত্র ১৯১ রানে। এরপর বোলারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ৬৭ রান তুলে। সময়ের স্রোতে অন্য দলগুলো উন্নতি করলেও বাংলাদেশ কেবল পিছিয়েই পড়ছে। যে জিম্বাবুয়েকে আগে বলেকয়ে হারানো যেত, তাদের সামনে এখন অসহায় আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
রবিবার প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশের সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দলের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে দার্শনিক হয়ে উঠলেন তিনি, ‘আপনাদেরকে একটা কথা বলি। ধরেন, একটা দেশের অর্থনীতি খুব শক্তিশালী। তাহলে আপনি কি শুধু একটা সেক্টর দিয়েই শক্তিশালী হতে পারবেন? আপনার ভালো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লাগবে, রাস্তাঘাট লাগবে ভালো, ভালো মানুষ লাগবে। সবকিছুই লাগবে।’
সালাউদ্দিন আরও বলেছেন, ‘আমাকে যদি বলেন প্লেয়াররা ভালো করার চেষ্টা করছে না, এটা ভুল। কারণ আমি কাছে থেকে দেখছি। তাদের সেই চেষ্টা আছে। কিন্তু এটার সঙ্গে তো আনুষঙ্গিক অনেক ব্যাপার-স্যাপার থাকে। ভালো কোচ লাগবে, আমরা ভালো কোচিং করাই না। একাডেমিগুলোতে কী ফ্যাসিলিটিস আছে? একটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যায়, ক্রিকেটও সেভাবে এগোয়। শুধু ক্রিকেটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।’
নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে সেই পুরানো কথাই বললেন বাংলাদেশের এই কোচ। বাংলাদেশে ক্রিকেট জনপ্রিয় হলেও ক্রিকেট কাঠামো বেশ দুর্বল। সেই ব্যাপারে বলতে গিয়ে সালাউদ্দিনের কথা, ‘একটা দেশের ক্রিকেট আসলে নির্দিষ্ট কয়েকজন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে না। পুরো দেশের ক্রিকেটের স্ট্রাকচারটা কেমন এবং ওরা কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে সামনে আসছে, সেই চ্যালেঞ্জ ফেস করার জন্য অনেক খেলা খেলতে হবে। হ্যাঁ, প্রিমিয়ার লিগ খেলে আসছে। কিন্তু এখানে এসে ডিফারেন্ট বল গেম খেলতে হচ্ছে। এগুলোতে কতটা চ্যালেঞ্জ ফেস করে আসছেন এবং কীভাবে ছেলেগুলো বড় হচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করবে ক্রিকেট স্ট্রাকচার। আমাদের রিসোর্স খুবই কম আছে। কিন্তু ওইটা নিয়েও চিন্তা করলে হবে না যে আসলে কী নেই। এর মধ্যে থেকে আমরা কীভাবে বের হতে পারি সেটা নিয়ে জরুরি কাজ করা উচিত।’
সালাউদ্দিনের দাবি ক্রিকেটাররা তাদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন। যদিও বাস্তবে এর কিছুই দেখা যায় না। একই ভুল বারবার করছেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টার কথা বহুবারের মতো আরও একবার জানালেন বাংলাদেশের এই স্থানীয় কোচ, ‘মানসিক দিক থেকে ছেলেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। নিজেদের উন্নতির ব্যাপারে তারা অনেক বেশি সচেতন। হয়তো আমরা খুবই খারাপ খেলেছি। কিন্তু এটা বলা যাবে না যে আমরা চেষ্টা করছি না। বা তাদের বড় হওয়ার ইচ্ছা নেই, এটা বলা যাবে না। নতুন কিছু আমরাও চাচ্ছি। আমাদের অ্যাবিলিটি যেন আরও ভালো হয়। সেদিকে আমরা চেষ্টা করছি। যে জায়গাগুলোতে আমাদের উন্নতি করার দরকার, চেষ্টা করছি সেই জায়গায় যেন উন্নতি করতে পারি। আজকে ব্যাটিং মোটেও ভালো হয়নি। বোলিংও ভালো হয়নি। চেষ্টা করবো এই জায়গা থেকে আমরা কীভাবে ম্যাচে তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।’
সালাউদ্দিন নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে আরও বলেছেন, ‘আমিও মনে করি টেকনিক্যালি আমরা কিছু মিসটেক করেছি। ম্যাচের মধ্যে হঠাৎ করে বাজে শট খেলে ফেলেছি। যখনই কামব্যাক করছি তখনই একটা সেট ব্যাটার আউট হয়ে গেছে। এটা পুরোটাই আসলে মেন্টাল সেট। আমি মনে করি ওদের হয়তো রুটিন বা প্রসেস ভালো হয়নি। প্রতিটি বল কীভাবে ফেস করতে হবে সেই প্রক্রিয়ায় ওরা থাকেনি। এখানে আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। প্রতিটি বল ফেস করার আগে কীভাবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক করার কথা সেটা আমাদের করতে হবে। অন্য ফরম্যাটে আপনি একবারই সুযোগ পাবেন। টেস্ট ক্রিকেটে আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়। সেখানে ভালো করাটা অনেক বেশি জরুীর।’