ভারত ২০ ওভারে ২২১/৯ (ওয়াশিংটন ০*, মায়াঙ্ক ১*, আর্শদীপ ৬, বরুণ ০, হার্দিক ৩২, রিংকু ৫৩, নিতিশ ৭৪, সূর্যকুমার ৮, অভিষেক ১৫, স্যামসন ১০)
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৩৫/৯ (মোস্তাফিজ ১*, তাসকিন ৫*, মাহমুদউল্লাহ ৪১, তানজিম ৮, রিশাদ ৯, জাকের ১, মিরাজ ১৬, হৃদয় ২, শান্ত ১১, লিটন ১৪, ইমন ১৬)
ফল: ভারত ৮৬ রানে জয়ী।
টসে জিতে বোলিং নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে তাদের বিপক্ষে প্রথমবার দুইশ রান করার সুযোগ করে দেয়। নিতিশ কুমার রেড্ডি ও রিংকু সিংয়ের ব্যাটিং তাণ্ডবে ২২১ রানের বড় সংগ্রহ করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই রেকর্ড রানের জবাবে আগ্রাসী শুরু হলেও আরেকবার হতাশাজনক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শন। কেবল মাহমুদউল্লাহ কিছুটা লড়াই করলেন। অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ হারলো ৮৬ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বড় জয়ে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজ এক ম্যাচ আগেই নিশ্চিত করলো ভারত। ২০১৯ সাল থেকে ঘরের মাঠে টানা ১৬টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো মেন ইন ব্লুরা।
মাহমুদউল্লাহ ইনিংস সেরা ৪১ রান করে শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হন। ৩৯ বলে তিন ছয়ে রিয়ান পরাগের ক্যাচ হন তিনি। পরের সর্বোচ্চ স্কোর ১৬ রান করেন পারভেজ হোসেন ইমন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯ উইকেটে ১৩৫ রান করে বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে ৩৪ বলে ৭৪ রান করার পর বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা স্বাগতিক দলের নিতিশ।
নিতিশের শিকার তানজিম
২২১ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ ১২০ রানে ৮ উইকেট হারালো। ১৮তম ওভারে নিতিশ কুমার রেড্ডির বলে তানজিম হাসান সাকিব ৮ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার ক্যাচ হলেন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ২৭ রানের।
রিশাদ আউট
২২১ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশ ৯৩ রানে ৭ উইকেট হারালো। ১৪তম ওভারে বরুণ চক্রবর্ত্তীর তৃতীয় বলে রিশাদ হোসেনকে অবিশ্বাস্য ক্যাচে ফেরান হার্দিক পান্ডিয়া। ১০ বলে ৯ রান করেন বাংলাদেশের ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম হাসান সাকিব জুটিতে কেবল ব্যবধান কমাচ্ছে সফরকারীরা, তবে বড় হারের পথে তারা।
জাকেরের বিদায়
তার আগে ১২তম ওভারে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মায়াঙ্ক যাদবের বলে জাকের আলী ক্যাচ হন ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে। বাংলাদেশের ব্যাটার ২ বলে করেন ১ রান, দলের রান তখন ৮৩।
দলকে বিপদে ফেলে মিরাজের বিদায়
৪৬ রানে বাংলাদেশ চার উইকেট হারানোর পরই ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ম্যাচ। উইকেট যাওয়া আসার মিছিলে কিছুটা বাধ সাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনের জুটি ৩৪ রানের বেশি হলো না। দলগত ৮০ রানে বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারালো। রিয়ান পরাগের বলে ১১তম ওভারে বদলি ফিল্ডার রবি বিষ্ণয়ের ক্যাচ হন মিরাজ, করেন মাত্র ১৬ রান।
পাওয়ার প্লের পর হৃদয়ের বিদায়
দারুণ শুরুর পরও বাংলাদেশ বিপদে পড়েছে। সপ্তম ওভারে তারা হারিয়েছে চার উইকেট, ৪৬ রানে। অভিষেক শর্মার বলে মাত্র ২ রান করে বোল্ড হলেন তাওহীদ হৃদয়।
বড় শট খেলে আউট শান্ত, বরুণের বলে বোল্ড লিটন
পারভেজ হোসেন ইমন আউট হওয়ার পর তিন নম্বরে নেমেই প্রথম দুই বলে চার মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে বড় শট খেলতে গিয়ে লং অনে হার্দিক পান্ডিয়াকে ক্যাচ দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৭ বলে ১১ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার হন শান্ত। ৪০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো বাংলাদেশ। পাঁচ বলের মধ্যে আরেকটি উইকেট হারায় সফরকারীরা। বরুণ চক্রবর্ত্তীর নিচু বলে বোল্ড হন লিটন দাস। ষষ্ঠ ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট পেলেন ভারতীয় স্পিনার। ১১ বলে ১৪ রান করেন তিনি। ৪২ রানে তিন উইকেট পড়লো তাদের। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৪৩ রান।
আর্শদীপকেই উইকেট দিলেন ইমন
২২২ রানের লক্ষ্য দিয়ে পারভেজ হোসেন ইমনের মারকুটে ব্যাটিংয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল ভারত। প্রথম ওভারে আর্শদীপ সিংকে তিনটি চার মারেন বাংলাদেশের ওপেনার। ভারতীয় পেসারের পরের ওভারেই তিনি উইকেট হারালেন বোল্ড হয়ে। ১২ বলে ১৬ রান করেন ইমন। ২০ রানে সফরকারীরা প্রথম উইকেট হারালো।
প্রথম ওভারে ১৪ রান তুললো বাংলাদেশ
আর্শদীপ সিংকে প্রথম ওভারে তিনটি চার মেরে ১৪ রান তুলে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ২২২ রান
তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব শুরুতেই ভারতকে আঘাত করেছিল। কিন্তু ৫ রানে জীবন পাওয়া নিতিশ কুমার ভোগালেন বাংলাদেশকে। ৩৪ বলে ৭৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। তার সঙ্গে রিংকু সিং শতাধিক রানের জুটি গড়ে ভারতকে চালকের আসনে বসান। দুজনেই ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ভারত প্রথমবার দুইশ রান করে। শেষ ওভারে রিশাদ হোসেন ৩ উইকেট নিলেও সর্বোচ্চ ৫৫ রান দেন চার ওভার বল করে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেটও তার। তানজিমও ৪ ওভারে দেন ৫০ রান, পান দুটি উইকেট। ৯ উইকেটে ভারত করেছে ২২১ রান। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাঁচাতে বাংলাদেশকে করতে হবে ২২২ রান।
ভারতের পক্ষে ২৯ বলে ৫৩ রান করেন রিংকু। হার্দিক ১৯ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায়ত্বের দিনে তাসকিন ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমানও।
প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের দুইশ, এক ওভারে রিশাদের ৩ উইকেট
১৯তম ওভারে টানা দুটি ছক্কা মেরে রিয়ান পরাগ তানজিম হাসান সাকিবের শিকার হলেন। ৬ বলে ১৫ রান করে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ হন তিনি। একই ওভারের দ্বিতীয় বলে মিডউইকেট দিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া চার মারলে প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ভারত দুইশ রান করে। শেষ ওভারে রিশাদ হোসেন দুটি উইকেট পান। ১৯ বলে ৩২ রান করে হার্দিক মিরাজকে ক্যাচ দেন। তৃতীয় বলে বরুণ চক্রবর্ত্তী ডাক মারেন পারভেজ হোসেন ইমনকে ক্যাচ দিয়ে। পঞ্চম বলে আর্শদীপ সিংকে ৬ রানে লিটন দাসের ক্যাচ বানান বাংলাদেশের লেগস্পিনার।
তাসকিনের শিকার রিংকু
বড় শট খেলে বাংলাদেশের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়া রিংকু সিং থামলেন তাসকিন আহমেদের বাউন্সারে। দুটি স্লোয়ার ডেলিভারির পর বুক সমান উঁচুতে আসা বল পুল করে লেগ সাইডে জাকের আলীর ক্যাচ হন তিনি। ২৯ বলে ৫৩ রান করেন ভারতের ব্যাটার। ১৮৫ রানে পাঁচ উইকেট হারালো ভারত। অন্য বোলারদের অসহায়ত্বের দিনে তাসকিন ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে কিছুটা হলেও সফল।
টানা চার-ছক্কায় রিংকুর হাফ সেঞ্চুরি
তানজিম হাসান সাকিবকে ১৬তম ওভারের শেষ তিন বলে টানা দুটি চার ও এক ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি করলেন রিংকু সিং। ২৬ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ফিফটির দেখা পান ভারতের ব্যাটার।
নিতিশ ঝড় থামালেন মোস্তাফিজ
১৩তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে নিতিশ কুমার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৬ রান তোলেন। বাংলাদেশি অফস্পিনারের হাতেই ধরা পড়লেন ভারতের ব্যাটার। বোলিংয়ে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৪তম ওভারে বাংলাদেশি পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ হলে থামে নিতিশের ৩৪ বলে চারটি চার ও সাত ছয়ে সাজানো ৭৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। ১৪৯ রানে চার উইকেট হারালো ভারত। রিংকু সিংয়ের সঙ্গে ৪৯ বলে ১০৮ রানের জুটি গড়েন নিতিশ।
জীবন পাওয়া নিতিশের হাফ সেঞ্চুরি
পঞ্চম ওভারে লিটন দাসের গ্লাভস ফসকে জীবন পাওয়া নিতিশ কুমার রেড্ডি ২৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন, নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। তিন চার ও এক ছয় মারেন তিনি।
রিংকু-নিতিশের ব্যাটিং তাণ্ডব
রিংকু সিং ও নিতিশ কুমার রেড্ডি ব্যাটিং তাণ্ডব চালালেন। অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনকে ছক্কা মেরে শুরু, ওই ওভারে ১১ রান দেন বাংলাদেশি স্পিনার। ১৪ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ৪৬ রান তুলেছে ভারত। রিশাদ ইনিংসের দশম ওভারে ২৪ রান দেন। মাঝে নবম ওভারে মাহমুদউল্লাহ দেন ১৫ রান।
নিতিশ জীবন পেলেও মোস্তাফিজের শিকার সূর্যকুমার
পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট পেলো বাংলাদেশ। দিয়েছে ৪৫ রান। লিটন দাস ক্যাচ না ফেললে সফরকারীদের ঝুলিতে থাকতো চার উইকেট।
পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে তানজিম হাসান সাকিবের বলে গতি থাকায় নিতিশ কুমার রেড্ডির গ্লাভস ছুঁয়ে আসা বল ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশি কিপার। ভারতীয় ব্যাটারের তখন রান ছিল ৫।
তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানিয়ে সূর্যকুমার যাদবকে ৮ রানে থামান মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিষেকের স্টাম্প ভাঙলেন তানজিম
মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের পর তৃতীয় ওভরে বোলিংয়ে আসেন তানজিম হাসান সাকিব। শরিফুল ইসলামের বদলে একাদশে ঢুকে শুরুটা ভালো হয়নি তার। অভিষেক শর্মার কাছে টানা দুটি চার হজম করার পর শেষ বলে তার স্টাম্প ভাঙলেন এই পেসার। ইনসাইড এজ হয়ে অফ স্টাম্প উপড়ে যায়। ১১ বলে ৩ চারে ১৫ রান করেন ভারতীয় ওপেনার। ২৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো স্বাগতিকরা।
মিরাজের ওভারে ১৫ রান, দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের সাফল্য
মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম ওভারে বল হাতে নেন। দ্বিতীয় বল থেকেই মারমুখী ভারত। সাঞ্জু স্যামসন টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন। শেষ বলে অফস্পিনারকে চার মারেন অভিষেক শর্মা। প্রথম ওভারে ১৫ রান দেয় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ বোলিংয়ে আসেন। প্রথম পাঁচ বলে তার কাছ থেকে মাত্র দুটি সিঙ্গেল আদায় করেন অভিষেক ও স্যামসন। শেষ বলে ভাঙে এই জুটি। ৭ বলে ১০ রান করে স্যামসন ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। ১৭ রানে প্রথম উইকেট হারালো ভারত।
টসে জিতে বোলিং নিয়েছে বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির পড়তে পারে। দিল্লির এই উইকেটে বড় স্কোরের প্রত্যাশা তার, ‘দিল্লিতে দুটি জয় আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে। কিন্তু আজ আমাদের ভালো খেলতে হবে। প্রথম ছয় ওভারে টপ অর্ডারকে ভালো করতে হবে।’ দলে একটি পরিবর্তন। শরিফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে তানজিম হাসান সাকিবকে নেওয়া হয়েছে।
ভারত অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে নামছে।
ভারত স্কোয়াড: অভিষেক শর্মা, সাঞ্জু স্যামসন (উইকেটকিপার), সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), রিয়ান পরাগ, নিতিশ কুমার রেড্ডি, হার্দিক পান্ডিয়া, রিংকু সিং, ওয়াশিংটন সুন্দর, বরুণ চক্রবর্ত্তী, মায়াঙ্ক যাদব, আর্শদীপ সিং।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: লিটন দাস (উইকেটকিপার) পারভেজ হোসেন ইমন, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।