বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ। যদিও শেষ কয়েক বছর সেভাবে পারফরম্যান্স করতে পারছিলেন না। ৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সংগ্রাম করছিলেন। তাই তো ভারত সিরিজে খেলেই হার্ডহিটারদের ফরম্যাট থেকে বিদায়ের আগাম ঘোষণা দিলেন। বিদায় বেলায় জানিয়ে দিলেন, তার কোনও আক্ষেপ নেই।
ক্যারিয়ার জুড়েই মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে আলোচনা-সমালেচনা ছিল। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা সেঞ্চুরি করে ফের আলোতে আসেন। ওই বিশ্বকাপের পর থেকেই মাহমুদউল্লাহর কাছে সবার প্রত্যাশা বেড়ে যায়। সেই প্রত্যাশার চাপ কখনও মেটাতে পেরেছেন, কখনও আবার পারেননি। যখন পারেননি, তখন ভক্তরা তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করেছে। যদিও মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন, তার কোন আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, ‘আমার কোনও আক্ষেপ নেই। বাংলাদেশের হয়ে খেলার সময় কোনও পর্যায়ে কখনোই আমার আক্ষেপ ছিল না। আমি সব সময় টিমম্যান হতে চেয়েছি, যে পজিশনেই খেলি না কেন। আমার দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট ছিলাম। কোনও আফসোস নেই।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ফিনিশারের তকমা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তার ক্যারিয়ারে দারুণ সব ফিনিশিংয়ের কীর্তি যেমন আছে, তেমন সহজ ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার হতাশাও আছে। নিজের ভূমিকাকে তাই ‘খুব কঠিন’ কাজ হিসেবে উল্লেখ করলেন মাহমুদউল্লাহ। সোমবার অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে অবসর ঘোষণা দিয়ে তিনি বললেন, ‘২০১৬ সালের আগে এই সংস্করণে আমার গড় ও স্ট্রাইকরেট আহামরি ভালো ছিল না। ২০১৬ সালের বিশ্বকাপ ছিল ভারতে। এখানে আসার আগে খুলনায় একটি অনুশীলন ক্যাম্প করি। সেই ক্যাম্প থেকে আমি ব্যাটিংয়ের ধরন পাল্টানোর চেষ্টা করি। ৬ বা ৭ নম্বরে নামতাম, সেই জায়গায় ব্যাট করতে আমাকে ধরন ও স্টাইল বদলাতে হয়েছে। তখন থেকে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করেছি। তবে এই জায়গাটা (ফিনিশার) খুব কঠিন। কখনও কখনও ব্যর্থ হবেন। মানুষ সেগুলোই বেশি মনে রাখবে যা ফিনিশ করতে পারেননি। এটাই ক্রিকেটের অংশ।’
অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিনে মাহমুদউল্লাহ যেন আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে গেলে আপনি যদি বেশি চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে পারফর্ম করতে পারবেন না। কোনোদিন সফল হবেন, কোনোদিন হবেন না। ছয় নম্বরে ব্যাট করাটা অনেক কঠিন, এখানে পাঁচটা ইনিংস খেললে খুব সম্ভবত ৩ ইনিংসে আপনি ব্যর্থ হবেন, একটা খুব ভালো হবে, আর আরেকটা মাঝারি হবে। তবে নির্দিষ্টভাবে, ওই পজিশনে ওই ব্যাটারদের জন্য এটাই কাজ। তাকে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে এবং বোর্ড থেকেও সমর্থন দিতে হবে। বাইরে কী কথা হলো, সেদিকে কান দেওয়া যাবে না। সে তার জায়গায় বাকি সবার আস্থা অর্জন করতে পারলে অনেক ভালো করবে।’
বিদায় ঘোষণার মঞ্চে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা মুহূর্তটির কথা স্মরণ করলেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলতে দারুণ এক ক্যামিও ইনিংস খেলেছিলেন। ওটাই মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। আবার ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সহজ লক্ষ্য ছুঁতে না পারার বেদনাও আছেন। দুইয়ের মিশ্রণেই মাহমুদউল্লাহর অনুভূতি স্বাভাবিক। তিনি বলছেন, ‘ক্যারিয়ারে কতটা সফল হয়েছি তা আমি বলতে পারবো না। তবে আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অনেক সময় সফল হয়েছি, অনেক সময় হইনি। তবে এসব নিয়ে এখন আর ভাবছি না। তবে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোকিত মূহূর্ত নিঃসন্দেহে নিদাহাস ট্রফির সেই ম্যাচটা। যে ম্যাচটা আমাদের জন্য সেমিফাইনাল হয়ে গিয়েছিল, শ্রীলঙ্কাকে হারানোর সেই ম্যাচ। হতাশাজনক মুহূর্ত বলবো বেঙ্গালুরুতে ২০১৬'র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই ম্যাচটা আমার জীবনকেও বদলে দিয়েছিল।’
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েই সংবাদ সম্মেলনের ইতি টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া না থাকলে এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই। যারা আমাকে পছন্দ করে না তাদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই।’