X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

সালামি পেয়ে দ্বিতীয় হলেই কাঁদতেন নিগার সুলতানা!

রবিউল ইসলাম
০৪ মে ২০২২, ১৮:১৯আপডেট : ০৪ মে ২০২২, ২০:৩৪

ঈদে সালামি দেওয়া-নেওয়ার আনন্দে শামিল হয় ছোট-বড় সবাই। বড়রা সালামি দিয়ে আনন্দ পান। আর সালামি পাওয়ার পর ছোটদের মধ্যে দেখা যায় খুশির ফোয়ারা। সালামি নিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ছোটবেলার অনেক মজার ঘটনা আছে। বড় খালার বাসায় ঈদের দিন ভাই-বোন ও কাজিনদের সঙ্গে সালামি নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতেন তিনি। কে কার আগে বড় খালার কাছ থেকে সালামি নিতে পারবেন তা নিয়ে তুমুল চেষ্টা চলতো। সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম না হলে কেঁদেকেটে মহল্লা মাথায় তুলতেন এই ক্রিকেটার! তার মুখেই শুনুন পুরানো সেই দিনের কথা। 

জামা লুকিয়ে রাখা 
ছোটবেলার ঈদের দিন সকালে নতুন কাপড় পরতাম। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত নতুন জামা-কাপড় কাউকে দেখাতাম না। অনেকটা লুকিয়েই রাখতাম। কেউ দেখালে জামা পুরনো হয়ে যাবে, এমন একটা চিন্তা ছিলো তখন।

সালামি নিয়ে প্রতিযোগিতা
ছোটবেলায় আব্বু-ভাইয়া ঈদগাহে যাওয়ার সময় জায়নামাজ এগিয়ে দিতাম। আম্মুর রান্না করা সেমাই খাইয়ে তাদের ঈদগাহে পাঠাতাম। এরপর অপেক্ষায় থাকতাম, তারা কখন ঈদগাহ থেকে ফিরবেন। তারা ঘরে ফেরার পরই মূলত আমার ঈদ আনন্দ শুরু হতো। একটা ঘটনা আমার কাছে অনেক স্মৃতিময়। আমার বড় খালা মারা গেছেন। তার কাছ থেকে কে আগে সালামি নেবে তা নিয়ে আমাদের ভাইবোন এবং কাজিনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো। আমি কোনো কারণে দ্বিতীয় হলেই ভীষণ মন খারাপ হতো, অনেক কাঁদতাম। সবসময় চাইতাম যেন বড় খালার কাছ থেকে প্রথম সালামি নিতে পারি।

ভাইবোনের সঙ্গে নিগার সুলতানা

এখন আর মেহেদি দেন না নিগার
চাঁদরাতে ঘটা করে হাতে মেহেদি দিতাম। মেহেদিতে হাত রাঙিয়ে শুয়ে-বসে কাটাতাম। নকশা যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ঘুমাতে পারতাম না ঠিকমতো। ঈদের দিন ভোরের আলো ফোটার পরপরই হাত ধুয়ে ফেলতাম। অবশ্য শুকিয়ে অনেক জায়গা থেকে মেহেদি আপনাআপনি খসে পড়তো। কার হাত সবচেয়ে বেশি রঙিন হয়েছে সকালে সবাই সেটা দেখাতো। যখন থেকে কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য বাজারে চলে আসে, তখন থেকে এসব আনন্দ আর ছিলো না। আমি তো গত তিন বছর ধরেই হাতে মেহেদি দেই না।

নিজের চোখে চাঁদ দেখা
আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছিল ঈদের চাঁদ দেখা। ঈদ আসার একসপ্তাহ আগে থেকে কাউন্টডাউন শুরু করতাম। চাঁদ দেখা নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা থাকতো। এখন তো টিভি দেখে জানা যায় কবে ঈদ। আগে নিজের চোখে চাঁদ দেখে ঈদের দিনের প্রস্তুতি শুরু করতাম।

নতুন টাকার নোটে দুর্বলতা
নতুন টাকার প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক, সেটা ২ টাকা হোক আর ১ হাজার টাকা হোক। ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন সালাম করবো আর সালামি পাবো। সালামির টাকা জমিয়ে দিন শেষে গুনতাম। গুনে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা ছিল ঈদের অন্যরকম আনন্দ। এরপর পরিকল্পনা করতাম িসেই টাকা দিয়ে কী খাবো, কী করবো। 

এখন সালামি দিয়েই আনন্দ  
এখন সালামি খুব একটা পাই না, উল্টো দিতে হয়। তবুও আব্বু-আম্মু তো অবশ্যই দেয়। আপু-ভাইয়ারাও সালামি দেয়। কারও কাছ থেকে সালামি পেলে বেশ ভালো লাগে। তবে এখন সালামি দিয়েই বেশি আনন্দ পাই। আমাদের জাতীয় নারী দলের জুনিয়র কয়েকজন ঈদের একসপ্তাহ আগে থেকেই আমার কাছে সালামি চাইতে শুরু করে। রীতিমতো হুমকির সুরে ওরা বলে, ‘সালামিটা পাঠিয়ে দিয়েন। বিকাশ নম্বর তো জানেনই!’ আমাদের দলে সবচেয়ে দুষ্টু মেয়ে সোবহানা মোস্তারি। নাহিদা অল্প অল্প চাপ দেয়। সোহবানা মনে করে সালামি ওর হক, দিতেই হবে! আমিও এরকম ‘হক’ বিভিন্ন জনের সঙ্গে দেখাই! পিংকি আপু, সুপ্তা আপু, শামীমা আপু, রুমানা আপুর কাছ থেকে সবসময় সালামি নিয়ে থাকি। সালামি নিয়ে আমাদের ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেক মজা হয়। ভালোই লাগে।

পরিবারের সঙ্গে নিগার সুলতানার সেলফি

ভাতিজির জন্য কেনাকাটা যেন শেষই হচ্ছে না
সবার জন্যই শপিং করেছি। আম্মুর জন্য শাড়ি ও বোরকা কিনেছি। আব্বু ফতুয়া পছন্দ করে, তাই তার জন্য বেশ কয়েকটি ফতুয়া কিনেছি। ভাইয়াকে পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছি। ভাতিজির জন্য অনেক কিছু কিনেছি। তারপরও যেন ওর শপিং শেষ হচ্ছে না। অনলাইন থেকেও অনেক কিছু কিনেছি। 

ঈদের সেরা অনুভূতি
আব্বু-আম্মুকে ছেড়ে সতীর্থদের সঙ্গে ২০০৫ সালে প্রথমবার উদযাপন করা ঈদ আমার কাছে স্পেশাল ছিলে। কারণ সিনিয়ররা আমার মতো জুনিয়রদের মন খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তারা অনেক সারপ্রাইজ দিয়েছেন আমাকে। সিনিয়র সবাই সালামি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ওই ঈদ আমার কাছে সবসময় স্পেশাল হয়ে থাকবে।

করোনার পর স্পেশাল ঈদ
গত দুটি ঈদ তো মোটেও ঈদের মতো যায়নি। বাইরে যেতে পারিনি, ঘরবন্দি হয়েই থাকতে হয়েছিল। ঈদের শপিং বলতে কিছুই ছিল না। এবার পুরো পরিবার একসঙ্গে ঈদের শপিং করেছি। আমার বড় ভাই করোনার কারণে গত দুটি ঈদে ঢাকায় আসতে পারেননি। তাকে ছাড়া ঈদে কোনও আনন্দ মনে হয়নি। এবার ভাইয়া, আপুরা সবাই আছে। এজন্য আমার কাছে এবারের ঈদ একটু বেশি ভালো লাগার।

ছোটদের মাঝে ঈদ আনন্দ খুঁজে নেওয়া
ছোটবেলার ঈদকে ঈদ মনে হতো। ঈদ আসলে ছোটদের। ঈদটা বড়রা সেই অর্থে উপভোগ করে না। ছোটদের আনন্দ দেখেই বড়রা ঈদের আনন্দ খুঁজে নেয়। এখনকার ঈদ আর আগের মতো রোমাঞ্চিত করে না। তারপরও যেহেতু বাড়ির বাইরে বেশি থাকা হয়, সেহেতু উৎসবে পরিবারের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। তবে আমার ঈদ প্রথম দিনেই শেষ হয়ে যায়, দ্বিতীয় দিন থেকে আর ঈদ থাকে না।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা
পাকিস্তানের কাছে হেরে অনিশ্চয়তার মাঝে বাংলাদেশ 
বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে ১৭৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ 
সর্বশেষ খবর
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জায়গায় আ.লীগ অফিস করেন সাবেক এমপি বাহার
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জায়গায় আ.লীগ অফিস করেন সাবেক এমপি বাহার
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত