রবিনহো, ডেম্বা বা, মার্টিন স্কারটেল, গায়েল ক্লিশি- ফুটবলের এই নামগুলো একসময় আপনার কাছে নিশ্চিতই অনেক পরিচিত ছিল। ‘নতুন পেলে’ নামে ব্রাজিলের ফুটবলে উত্থান রবিনহোর। ইউরোপের মাঠ মাতিয়েছেন, বিখ্যাত হলুদ জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলেছেন। ডেম্বা বা, স্কারটেল বা ক্লিশি অতো বিখ্যাত না হলেও যার যার দেশের হয়ে খেলেছেন; সেনেগালের হয়ে একমাত্র ডেম্বা বা-ই বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। বাকি তিনজনই বিশ্বকাপ খেলেছেন। চেলসি-লিভারপুল-আর্সেনাল-ম্যানচেস্টার সিটির জার্সিতে দৃষ্টিও কেড়েছেন তারা। কিন্তু কোথায় তারা হারিয়ে গেছেন? সবার বয়স তো ৩৫-৩৬ বছর। নীরবেই বিদায় বলে দিয়েছেন ফুটবলকে? না, তারা এখনও খেলছেন এবং দাপটের সঙ্গেই। গত সোমবার তারা তুরস্কের লিগ চ্যাম্পিয়ন করে তুললেন ইস্তাম্বুল বাসাকসেহিরকে।
‘বুড়ো’ রবিনহো-বা-স্কারটেল-ক্লিশিদের এই জয়টা এ জন্যেই বেশি বড় হয়ে উঠছে যে তারা তুরস্কের ‘তিন মোড়ল’ গ্যালাতাসারাই, ফেনেরবাচে ও বেসিকতাসের আধিপত্য ভেঙে দিয়েছেন। ১৯৫৯ সালে তুরস্কের সুপার লিগ শুরুর পর বাসাকসেহির মাত্রই ষষ্ঠ ক্লাব হিসেবে শিরোপা জিতলো। ইস্তাম্বুল মিউনিসিপ্যালিটি নামে বাসাকসেহিরের প্রতিষ্ঠা ১৯৯০ সালে। ক্লাবটি স্থান বদলে ইস্তাম্বুলের নতুন স্টেডিয়ামে চলে আসে ২০১৪ সালে, যে জায়গাটি তুরস্কের লৌহমানব খ্যাত প্রেসিডেন্ট তাইয়িপ এরদোয়ানের দল একে পার্টির শক্ত ঘাঁটি। দলের কমলা রংয়ের জার্সি পরে এরদোয়ানই ১৭ হাজার ধারণক্ষমতার ছোট স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করে বলেছিলেন, ‘এটি আমার ক্লাব!’
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, বাসাকসেহির এদিন মেহমুত তেকদেমিরের একমাত্র গোলে কায়সেরিস্পোরকে হারিয়ে দেয়। তাতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। কারণ একইদিন ত্রাবজনোস্পোর ৪-৩ গোলে হেরে যায় কনিয়াস্পোরের কাছে। ত্রাবজনোস্পোর রানার্সআপ, সিভাস্পোর তৃতীয়, বেসিকতাস চতুর্থ, গ্যালাতাসারাই পঞ্চম এবং ফেনেরবাচে হয়েছে সপ্তম। অথচ তিন গ্যালাতাসারাই, ফেনেরবাচে ও বেসিকতাস মিলে লিগ জিতেছে ৫৪ বার।
করোনাভাইরাসের কারণে খেলা হচ্ছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই রবিনহোরা জয়ের উৎসবে ভেসেছেন। ফাতিহ তেরিম স্টেডিয়ামের বাইরে দূরে দূরে চেয়ার পেতে বড় পর্দায় ম্যাচ দেখেছেন কিছু দর্শক। তারাও পরে মেতেছেন বিজয়োৎসবে। তাদের হাতে ক্লাবের পতাকা, মুখে বাসাকসেহিরের নামে শ্লোগান আর চোখে আনন্দাশ্রু। তিন মোড়লের আধিপত্য ভেঙে শিরোপা জয় তো কম কথা নয়। আর সেই আধিপত্য ভাঙলেন ক্যারিয়ারের অস্তে পৌঁছে যাওয়া রবিনহো, ডেম্বা বা, স্কারটেল ও ক্লিশিরা। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী নামটি আসলে রবিনহো।