X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কেমন চলছে ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনীতি?

আবিদ হাসান
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:০৮

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিভিন্ন দলের কার্যক্রম, সভা, সমাবেশ, সেমিনার ও গণসংযোগ দেখা যাচ্ছে অহরহই। কখনও কখনও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেখা দিচ্ছে বিতর্কও। তবে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এটিকে ‘রাজনৈতিক সংকট’ বলছেন বামপন্থি ছাত্রনেতারা। অবশ্য অনেকেই আবার এটিকে ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী’ ব্যবস্থার প্রতিফলনও বলছেন। তাদের দাবি, দ্রুতই সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা বলেছেন তরুণ ছাত্র নেতারা। তাদের বক্তব্য, যেই ফরম্যাটে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, সে কারণে কিছু বিশৃঙ্খলা হওয়ার কথা ছিলই। তবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যে রাজনৈতিক ম্যাচুরিটির দরকার ছিল, তার পরিচয় দিতে পারেনি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তবে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন বা ফিরে আসতে যেন না পারে, সে বিষয়ে তারা সচেষ্ট রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের পর রাষ্ট্রকাঠামো ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সেই জায়গা থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে। নিঃসন্দেহে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পর রাষ্ট্র সংস্কার অতীব জরুরি। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদবিতে এখনও ফ্যাসিবাদের দোসরেরা রয়ে গেছেন, যারা বিভিন্ন উপায়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে তাড়ানোর বিষয়ে ১৭-১৮ জুলাই থেকে আমরা ক্লিয়ার ছিলাম। এবং সেখানে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়ে আমরা একমত ছিলাম। একইসঙ্গে আমরা এটাও জানতাম, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানটা হচ্ছে এর ফলে পরবর্তীতে একটা সংকট তৈরি হতে পারে। সেটা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুটা। এ থেকে উত্তরণের জন্য যে রাজনৈতিক ম্যাচুরিটি দরকার সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা সমন্বয় করছেন বা এ সংক্রান্ত কাজ করছেন, তাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না। তবে এক্ষেত্রে আমাদের কনসার্ন আছে, আমরা কোনোভাবে চাই না আওয়ামী লীগ ফিরে আসুক বা এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটি সময়ে আছি। গণঅভ্যুত্থানে সব রাজনৈতিক দল-মত একসঙ্গে ছিল, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সব দল-মত নিয়ে একটি কাউন্সিল করা দরকার ছিল। তাহলে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। সেটা না হওয়ায় উপদেষ্টা নিয়োগ কীভাবে হচ্ছে, কারা (নিয়োগ) দিচ্ছে; সেটা নিয়ে সাধারণের মাঝে একটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কাউন্সিল না করে তারা রাজনৈতিক গতির মধ্যে একটি সংকট তৈরি করেছে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগ বিতাড়িত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে তুলনামূলকভাবে রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজমান আছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্ত্রাস-দখলদারবিরোধী মনোভাব দৃঢ় আছে, এটা ভালো ব্যাপার। হলগুলো মোটামুটি প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানেই চলছে। প্রত্যেক সংগঠন স্ব স্ব জায়গায় কাজ করছে। তবে এখনও কিছু লোকজন তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে গোপন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ এখনও কার্যকর হয়নি, তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়া দরকার।’

সাংগঠনিক কার্যক্রম ডাকসু-কেন্দ্রিক, দল গোছানো, পাঠচক্র ও বিভিন্ন ইস্যুতে দাবি

গত আওয়ামী সরকারের আমলে তেমন কোনও সংগঠন সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর সবার সমানভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর তাই তারা এই মুহূর্তে নিজেদের সংগঠন গোছানো, নতুন ইউনিট গঠন, নতুন কর্মী সংগ্রহ কেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে তারা দাবি উপস্থাপন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যে প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ডাকসু কেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়ে বেশি ভাবছেন। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তারা বসবেন বলেও জানিয়েছেন।

বর্তমান রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে মেঘমল্লার বলেন, ‘আমাদের (ছাত্র ইউনিয়ন) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটা ভাঙনের রাজনীতি চলছিল, সাংগঠনিক কিছু অস্থিরতা ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, আমরা তাদের সংগঠিত করে দলকে গোছানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছি, সারা দেশে আমাদের নতুন ইউনিট গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আমাদের মূল কাজ ক্যাম্পাসকে গণতান্ত্রিক করার বিষয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা ডাকসুকে ফোকাস করে কাজ করছি। ডাকসুর গণতন্ত্র পুনর্গঠনের বিষয়ে আমরা খুব শিগগিরই কর্মসূচি দেবো।’

ছাত্রফ্রন্টের নেতা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হয়েছে তা বাস্তবায়নে ছাত্র-জনতার সক্রিয় ভূমিকা লাগবে, না হলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য। কেননা আন্দোলন বা সংস্কার কোনোটাই মৌসুমি বিষয় নয়, চলমান বিষয়। তাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সাংগঠনিক কাজ হিসেবে আমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য আন্দোলন চলমান রাখার চেষ্টা করছি। এর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, পাচারকারীদের সুষ্ঠু বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সাম্প্রদায়িক হামলা, শ্রমিক হত্যা, নারী নিপীড়ন, বিভিন্ন জাতিসত্তার ওপর হামলা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা প্রতিবাদ জারি রেখেছি।’

সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ছাত্রদল নেতা শিপন বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও দুর্দিনের নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করেছি, যারা আগামী দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সন্ত্রাসী সংগঠনের দীর্ঘদিনের কলুষিত ছাত্র রাজনীতির বিপরীতে গিয়ে উৎপাদনমুখী ছাত্র রাজনীতি উপহার দেবে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত মুক্ত বুদ্ধির চর্চা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চলমান সংকটগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পেছানোতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান গুরুত্বপূর্ণ সংকট যেমন- আবাসন, যানজট, ক্যান্টিনের খাবারের মানোন্নয়ন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের দাবি জানাচ্ছি।’

সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আরিফ বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আমরা অনেক সংগঠনই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারিনি, সে অর্থে কোনও সাংগঠনিক কাজ ছিল না। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা নিজেদের সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার কাজগুলো পরিচালনা করছি। আগস্ট পরবর্তী যে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে পাঠচক্র পরিচালনা করছি, ক্যাম্পাসে রাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে সেটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছি, তাদের কথাগুলো আমরা শুনছি এবং আমাদের কথাগুলো তাদের বলছি। আন্দোলনে আহতদের নিয়েও আমরা নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

/আরআইজে/ইউএস/
সম্পর্কিত
মোহামেডানের প্রথম নাকি আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা?
ঢাবিতে আভাই জাপানি ভাষা বক্তৃতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলন শুরু 
সর্বশেষ খবর
গাইবান্ধায় এলজিইডি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
গাইবান্ধায় এলজিইডি কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
যেসব কারণে এই সময়ে ত্বকে বরফ ঘষবেন
যেসব কারণে এই সময়ে ত্বকে বরফ ঘষবেন
বাংলাদেশে পেপাল, ওয়াইজ ও স্ট্রাইপ চালুর দাবি ফ্রিল্যান্সারদের
বাংলাদেশে পেপাল, ওয়াইজ ও স্ট্রাইপ চালুর দাবি ফ্রিল্যান্সারদের
১২ লাখ চিংড়ির রেণু পোনা জব্দ, ডাকাতিয়া নদীতে অবমুক্ত
১২ লাখ চিংড়ির রেণু পোনা জব্দ, ডাকাতিয়া নদীতে অবমুক্ত
সর্বাধিক পঠিত
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়