X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক কমিটির সচিব আখতার হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়ের ফ্রেমে নির্দিষ্ট করা উচিত না

আবিদ হাসান
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্বে আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা—পরিবর্তন, সংস্কার ও পরিমার্জন। এসব প্রত্যাশা নিয়ে গঠিত হয়েছে বিভিন্ন কমিটি। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্ব কী, কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তারা যে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছে—এটি কোন কোন মানদণ্ডে ঠিক হবে। এসব বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া আখতার হোসেনের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

বাংলা ট্রিবিউন: মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে শরিক হয়েছিল, সেই আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা রয়ে গেছে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো কী?

আখতার হোসেন: আন্দোলনে মানুষ যখন নেমেছে, তখন দেশে বিদ্যমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নেমেছিল। সর্বশেষ যখন এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছিল—তখন ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলা হয়। হাসিনার পতন হলেও তার ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনও অনেক জায়গায় রয়ে গেছে। আইন, আদালত, বিচার ব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ প্রশাসনসহ এখনও অনেক জায়গায় ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিদ্যমান। যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করলো, সেটা কিন্তু এখনও আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি।

আরেকটি জায়গা হলো—বাংলাদেশের মানুষ এ দেশের পলিটিক্যাল কালচারের পরিবর্তন চেয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা এখনও বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন লক্ষ করিনি। জায়গাগুলো এখনও অধরা রয়ে গেছে। মানুষের অনেক চাওয়ার জায়গা আছে। একজন রিকশাচালক, একজন চা শ্রমিক—তারও কিন্তু কিছু চাওয়ার জায়গা আছে। তার চাওয়াগুলো কি এখনও পূরণ হয়েছে? আমরা মনে করি এর জন্য সময় দরকার। তাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত, আমরা যারা নাগরিক কমিটিতে আছি, আমাদের লড়াইটা জারি রাখতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: ঘটে চলা মব ভায়োলেন্স, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কারণ কী বলে মনে করেন?

আখতার হোসেন: মব ভায়োলেন্সের মতো ঘটনাগুলো ঘটলো, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বাংলাদেশে আইনের শাসন, রুল অব ল’র পক্ষে সবসময় কথা বলে এসেছি। আপনারা দেখে থাকবেন যে বিভিন্ন জায়গায় মন্দির-মাজার ভাঙার ঘটনাগুলো ঘটেছে। সেখানে কিছু কিছু ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আর কিছু কিছু ঘটনায় ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

আমরা দেখলাম যে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন এখন পর্যন্ত ফাংশনেবল হয়ে উঠতে পারেনি— অনেক থানাতেই। যেহেতু পুলিশের প্রতি মানুষের যে আস্থার জায়গাটা, সে জায়গাটা একেবারে অচল অবস্থায় চলে এসেছে—গত আন্দোলনে পুলিশের নৃশংস ভূমিকার কারণে। তারা নিজেরাও নৈতিকভাবে যে বিপর্যয়, এখন পর্যন্ত পুলিশ মনোবল অর্জন করতে পারিনি। এটি থেকে সার্বিকভাবে একটি ব্যর্থতার জায়গা তৈরি হচ্ছে। আমরা মনে করি, পুলিশের সংস্কারের কাজটা খুব দ্রুত করা দরকার। ল অ্যান্ড অর্ডার দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা দরকার। সরকারে যারা আছেন, তারা যেন সেই বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যেখানে মব ভায়োলেন্স বা মব লিঞ্চিংয়ের মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে— সেখানে যারা জড়িত আছে, তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়, বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

আখতার হোসেন (ফাইল ফটো) বাংলা ট্রিবিউন: প্রতিবিপ্লবের কোনও সম্ভাবনা দেখছেন কিনা?

আখতার হোসেন: বিপ্লব-প্রতিবিপ্লব, অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান দুনিয়াজুড়ে হয়ে থাকে। তবে এটা নিশ্চিত কেউ আগেভাগে করে বলতে পারে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা ধরেই নিয়েছিল ক্ষমতা থেকে আর কখনও যাবে না। কিন্তু এখানে অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। এখানে প্রতিবিপ্লবের যে আশঙ্কা, সেটি নাই। কিন্তু একইসঙ্গে এই আশঙ্কা রয়েছে যে—বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ অসংখ্য অবৈধ অস্ত্র নিজেদের কাছে রেখেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আপনারা দেখেছেন, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অনেকেই এগুলো ব্যবহার করেছে, গুলি চালিয়েছে। সেই অস্ত্রগুলো এখনও তাদের কাছে রয়ে গেছে।

বিগত সময়ে তারা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছে। সেই টাকাগুলো তারা মিসইউজ করার চেষ্টা করছে। তা ব্যবহার করে তারা ম্যাসকিলিং চালিয়েছে। এই যে বিষয়গুলো, তার ভেতর দিয়ে তারা পাল্টা-অভ্যুত্থানের চেষ্টা করছে। অনলাইনে তারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। বিদেশ থেকে ফলস প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এই যে গণঅভ্যুত্থান, তাকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে উপস্থাপনের চেষ্টা না করে, তারা এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। দেশের সবাই সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। বাংলাদেশে যারা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, নৈতিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, বাংলাদেশের তারা আর এই ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দেবে না। এ আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন, তাদের মাঝে শহীদ হওয়ার ভয়ভীতি দূর হয়ে গেছে। এ কারণেই ফ্যাসিবাদীদের আর এই দেশে ফিরে আসা সম্ভব নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: সংবিধান সংস্কারে কমিশন করা হয়েছে। সেটা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করেন কিনা, করলে কেন? এ ক্ষেত্রে সরকারের কী করা উচিত?

আখতার হোসেন: সংবিধান সংস্কার ও সংশোধন এখন খুবই আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। তা থেকে বোঝা যায় যে আমাদের বর্তমানে যে সংবিধান, সে সংবিধানের প্রতি আর কারোরই আস্থা নেই। এই সংবিধানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো কোনও বিষয় আর অবশিষ্ট থাকছে না। এই সংবিধানে সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কুক্ষিগত করে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বাসস্থানের চেয়ে খাদ্যের নিরাপত্তা ও অধিকার দেওয়ার কথা, সেটাকে নিশ্চিত করতে পারিনি। সংবিধানে যে মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে, মানুষ কি তা পাচ্ছে! সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। নতুন একটি সংবিধান পাওয়ার লক্ষ্যে সরকার সংবিধান সংস্কার কমিটি ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপ করা, কমিটির প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে নাগরিক কমিটিও সারা দেশের মানুষের সঙ্গে—মাদ্রাসার যারা আছেন, যারা পাহাড়ে আছেন, সমতলে আছেন, সবার বক্তব্য আমরা শুনতে চাই। যাতে এই আন্দোলনে যাদের অংশগ্রহণ ছিল, সেসব মানুষের চাওয়াটা যেন নিশ্চিত হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: অন্তর্বর্তী সরকারকে কতদিন সময় দেওয়া উচিত?

আখতার হোসেন: অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে দায়িত্বের বিশাল পাহাড় জমে আছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান জঞ্জালগুলো তাদের পরিষ্কার করতে হবে। দেশকে পুনর্গঠনের জন্য তাদের বড় কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। সেজন্য যে সময়টুকু দরকার, আমরা তাদের তা দিতে চাই। কিন্তু এই সময়টা যেন কাজবিহীন পড়ে না থাকে। কাজের মধ্য দিয়ে যেন সময় পায়। ধরুন, দেশের পুরো একটা সেক্টরের পলিসি পরিবর্তন করা দরকার। তার জন্য একটা সময়সীমা প্রস্তাব করতে পারে যে তিন মাস বা ছয় মাস লাগবে। এটি দুই মাসে শেষ হতে পারে, আবার চার মাসেও শেষ হতে পারে, আবার আট মাসও লাগতে পারে। কিন্তু সময়টা কাজের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাদের যেন কোনও একটা নির্দিষ্ট সময়ের ফ্রেমে বাঁধা না হয়। আবার বিনা কাজে তাদের সময়ক্ষেপণও যেন না হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: নাগরিক কমিটি কোন কোন বিষয় নিয়ে কথা বলবে? কথা বলার পদ্ধতিটা কী হবে?

আখতার হোসেন: আমরা বলেছি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। কিন্তু এর উপাদানগুলো আমাদের সংবিধানের মধ্যে রয়ে গেছে, আইনি কাঠামোর মধ্যে রয়ে গেছে। আমাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক পরিমণ্ডলের মধ্যে এর উপাদান রয়ে গেছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে একত্রিত করে, যেসব জায়গায় ফ্যাসিবাদের উপাদান আছে, রয়ে গেছে, সেগুলো বিলোপে কাজ করবো। সেটা আমাদের যেমন একটা রাজনৈতিক সংগ্রাম, একইসঙ্গে আমাদের সামাজিক সংগ্রামেরও অংশ। আবার একইসঙ্গে যারা এই গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্যে আমাদের একটা ফাইট থাকবে।

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের পক্ষে নীতিনির্ধারণের যেসব বিষয় আছে, সেগুলো অধরাই থেকে গেছে। সামনের দিকে সব নীতি যেন প্রো-পিপল হয়, সেজন্য নাগরিক কমিটি কাজ করবে। আরেকটা বিষয় হলো—নাগরিক কমিটি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতন গোষ্ঠী তৈরি করেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে এমন একটা সচেতন প্রজন্ম দেখতে চাই, যে রাজনৈতিক সচেতন প্রজন্ম সত্যিকার অর্থে দায়িত্ব পালন করতে সর্বাত্মক যোগ্য হয়।  আমরা সে জন্যই আমাদের কার্যক্রমগুলো জারি রেখেছি। আমরা সবসময় বলেছি যে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সব জায়গায় যেন গণ-আলোচনার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে আমরা যেন সবাই একসঙ্গে থাকতে পারি। সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছেন। সেটা আসলে কোন মানদণ্ডে ঠিক করবেন?

আখতার হোসেন: দেখুন, বাংলাদেশে সাত চল্লিশ ঘটে গেলো, একাত্তরে ঘটে গেলো, নব্বই ঘটে গেলো। দেশের মানুষের ভাগ্যের যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, সেটা এখনও হলো না। এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টিও অর্জিত হলো না। বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রো-পিপল যে নীতির কথা ছিল, সেটি এখানে অর্জিত হলো না। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিকভাবে মানবিক মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল, সেটাও তারা অর্জন করতে পারলো না। সব মিলিয়ে আমরা মনে করি, আগের যা কিছু কাঠামোর ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছিল, যা কিছু এখানে ঘটে গেছে, এখানে এক- এগারো ঘটে গেছে,  যার ভেতর দিয়ে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা করে পরে ‘মাইনাস ওয়ান’ করা হয়েছে। এর কোনও কিছু যেন আবারও ফিরে না আসে। এই যা কিছু এখানে করা হয়েছে, বাংলাদেশে যেন মাইনাস টু’র কথা মাইনাস ওয়ান হয়ে সামনের দিনে অন্য কোনও পার্টি যেন আবারও স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারে। আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে যেন আমরা সোচ্চার ভূমিকা নিতে পারি। তেমন করেই যেন বাংলাদেশের বন্দোবস্তগুলো ঠিক করা হয়। সে বিষয়ে আমরা দৃষ্টি রাখছি এবং সেটাই হবে আমাদের মানদণ্ড।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা জাতীয় নাগরিক কমিটির মাধ্যমে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কাজ শুরু হয়েছে কিনা, হলে সেটা কোন পর্যায়ে আছে?

আখতার হোসেন: আমরা নাগরিক কমিটিতে দেশের কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষিত- স্বশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, পাহাড়ি-সমতল সব ধরনের সব পেশার মানুষের এখানে (নাগরিক কমিটি) অংশগ্রহণ চাই। সবার ভয়েস শুনতে চাই। বাংলাদেশের নতুন যে রাষ্ট্র বিনির্মাণ, সেখানে যেন তার এই ভয়েসের প্রতিফলন থাকে, এটি আমরা দেখতে চাই। এ কারণেই ঢাকা শহর থেকে শুরু করে রংপুর, খাগড়াছড়ির গ্রাম পর্যন্ত আমাদের কমিটি বিস্তৃত করতে চাই। যেন মানুষের ভয়েসগুলো শুনতে পারি। আমাদের কাজ চলমান। প্রতিনিধিদের নিয়ে সমাবেশ করছি। খুব দ্রুতই আমরা সব কমিটি বাস্তবায়ন করা শুরু করবো।

আখতার হোসেন (ফাইল ফটো) বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা আত্মপ্রকাশের দিন আট দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। সেগুলোর কাজ কতদূর?

আখতার হোসেন: আমরা আট দফা  কর্মসূচিতে আন্দোলনে শহীদ এবং আহত যারা আছেন, তাদের পক্ষে বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছি। আমরা ইতোমধ্যে একটি লিগ্যাল টিম গঠন করেছি। এর মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রতিক আন্দোলনে যত মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি—তারা যেন তাদের সন্তানদের হত্যার কথাগুলো বলেন। আমাদের লিগ্যাল টিমের সদস্যরা তাদের এই মামলা প্রস্তুত এবং পরিচালনা করতে সহযোগিতা করবেন। আমরা একটা হেল্প টিম গঠন করেছি। সারা দেশের সব মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই। এ কারণে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাচ্ছি। আমরা বেদেপল্লি থেকে শুরু করে আলেম সমাজ এবং সর্বত্র, সবার ভয়েসটা যেন থাকে। সে জায়গাটা আমরা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। আমরা মনে করছি যে মানুষের চাওয়া যে বাংলাদেশ, সেই নতুন বাংলাদেশের চাওয়াগুলো কী হতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম সচল রেখেছি। একইসঙ্গে আমরা গণপরিষদের বা গণভোটের মধ্য দিয়ে নতুন এক সংবিধানের প্রচারণার কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এর মধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরেক অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি চায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আপনারা কীভাবে তৈরি করবেন?

আখতার হোসেন: ক্যাম্পাসগুলোতে বিগত সময়ে ছাত্ররাজনীতির রূপ হচ্ছে—ছাত্রলীগের দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি। শিক্ষার্থীদের জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে এসেছে। সন্ত্রাস করেছে, চাঁদাবাজি করেছে, আমাদের ওপরে অসংখ্যবার হামলা করেছে, এই বিষয়গুলো দেখে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছিল এবং তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আর বঞ্চিত হতে চায় না। সে কারণে ছাত্রলীগের যে সন্ত্রাসী রাজনীতি, সেই রাজনীতির প্যাটার্নকে তারা আর প্রশ্রয় দিতে চায় না। তারপর অন্যান্য যে ছাত্র সংগঠন আছে, তারা যখন ক্ষমতায় আসবে—তখন তারা কী ধরনের আচরণ করবে, সেটা নিয়েও শিক্ষার্থীরা ভয়ে আছে এবং এই ভয় অমূলক নয়। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলো যারা আছে, তাদের প্রস্তাবনা হাজির করা দরকার শিক্ষার্থীদের সামনে। সেই প্রস্তাবনা যদি শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করে  এবং পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে এই বিষয়টা সমাধান হওয়া দরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনৈতিক তৎপরতা থাকা দরকার আছে। রাজনৈতিক তৎপরতার অর্থ এই যে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক বোঝাপড়া থাকবে। তারা দেশের বিভিন্ন সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশে অতীত থেকে বর্তমান, এবারের গণঅভ্যুত্থান শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত ছাত্রদের একটা জোরালো ভূমিকা আছে। সেটাকে কেউই অস্বীকার করে না। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির কারণে যেন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাটা নষ্ট না হয়ে যায়, মারধরের শিকার না হতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এহসানের মতো কাউকে যেন চোখ হারাতে না হয়, কাউকে যেন আবু বকরের মতো মরে গিয়ে, এখান থেকে না চলে যেতে হয়, সেটা যেন নিশ্চিত থাকে। সে জায়গায় প্রশাসনের একটা বড় দায় আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি, যারা অপকর্মগুলো করতো প্রশাসন সবসময় তাদের প্রশ্রয় দিতো। প্রশাসনকে হতে হবে শিক্ষার্থীদের প্রতি সৎ। যখনই এমন কোনও ঘটনা ঘটে, সঙ্গে সঙ্গে যেন আইনি প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে একটা বিষয় খেয়াল করার মতো, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলা। অধিকার, দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলার যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্বাধীনতা, সেটা যেন কোনও ক্যাম্পাসে কোনোভাবেই লঙ্ঘিত না হয়।  বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ছাত্র সংসদ রয়েছে, কিন্তু নির্বাচন হচ্ছে না। আমরা মনে করি, ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রতিবছরই হতে হবে। তাহলে ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারে যে নেগেটিভ অবস্থা তৈরি হয়েছে, সে জায়গাটা আর থাকবে না। দেশের সব শিক্ষার্থীর মধ্যেই আমরা দেখেছি— ছাত্র সংসদের প্রতি তাদের একটা আগ্রহ আছে। আমরাও চাই যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কলেজ প্রশাসন নিয়মিত নির্বাচনগুলো দিক।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আসলে সম্পর্কটা কী রকম?

আখতার হোসেন: উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের ক্ষেত্রে আমাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে।  কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্ররা তাদের মতো করে সংগঠিত হচ্ছে। আমরা তরুণ-যুবক নাগরিকরা তাদের মতো করে নাগরিক কমিটিতে আছি। দুটি সংগঠনই তাদের জায়গা থেকে স্বতন্ত্র। কিন্তু প্রধান লক্ষ্যের কথা যদি বলি, সেই লক্ষ্যের জায়গায় গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে সেটাকে রক্ষা করা এবং তাকে বাস্তবায়ন করে সামনে নিয়ে আসার জায়গায় আমাদের মিল রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আত্মপ্রকাশের পর থেকে এখন পর্যন্ত আপনাদের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কী কী পালন করেছেন?

আখতার হোসেন: আমরা নিজেদের মধ্যে কর্মসূচি পালন করেছি, কর্মশালা করেছি। আমরা সম্মেলন করে মানুষকে আমাদের পরবর্তী করণীয়গুলো কী হবে—সেগুলো জানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা ঢাকা শহরের যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বনানী, গুলশানসহ ভিন্ন জায়গায় গণসংযোগ করেছি। এখানে নাগরিকদের  বিভিন্ন যে পক্ষগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। আমাদের নাগরিক কমিটির কলেবর আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!

আখতার হোসেন: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আ.লীগ নিষিদ্ধ না করলে দুই উপদেষ্টাকে অপসারণে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি এনসিপির
‘এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সে’র প্রস্তুতি কমিটি
ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ ২ মে
সর্বশেষ খবর
ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সাক্ষী ও বাদীর বক্তব্যে অসঙ্গতি
ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সাক্ষী ও বাদীর বক্তব্যে অসঙ্গতি
ইউআইইউ’র সমাধান কোন পথে?
ইউআইইউ’র সমাধান কোন পথে?
সিলেটে ঘরের দরজা ভেঙে মামা-ভাগনের লাশ উদ্ধার
সিলেটে ঘরের দরজা ভেঙে মামা-ভাগনের লাশ উদ্ধার
ইউনাইটেড পাওয়ারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন বন্ধ
ইউনাইটেড পাওয়ারের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু