বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি আগেও বলেছি—ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র দিবসের সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমার আহ্বান, কোনও প্রলোভন কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্বদানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।’
‘হাজারো শহীদের রক্তস্নাত এই রাজপথে আজ আপনাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির অর্থ, ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে হয়তো আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার নয়। সেই পথ হবে ধৈর্য-সহনশীলতা এবং সমঝোতার’- বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনি রোডম্যাপে উঠবে দেশ’
তারেক রহমান বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনি রোডম্যাপে উঠবে দেশ। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণের সঙ্গে থাকি। জনগণকে সঙ্গে রাখি।’
রাজনৈতিক দমন-পীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ও আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়া পল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সারা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে আজ সমাবেশ ও র্যালি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান কিংবা সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানারকম কথা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন, এটিই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’
‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয়, ঠিক তেমনই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে’- বলেন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। তবে মাফিয়া চক্রের প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লাখো কোটি জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের কোনও কোনও কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা, বাংলাদেশের পক্ষের গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। এটি আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে।’
‘সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি’
তারেকের ভাষ্য, ‘সুতরাং, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশ থেকে নানারকম উসকানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। ’
‘বাংলাদেশ কিংবা যেকোনও দেশেই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে। তবে কোনও একপর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়।’
‘সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি’- বলেন তারেক।
এ জন্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া, সংস্কার কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া— উন্নয়ন ও গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয় না। একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করে ভোটারদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।’
আরও পড়ুন:
মামলা প্রত্যাহার ও নিরাপদ ভোট আয়োজনের দাবি বিএনপির
সংস্কারে জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে ফল পাওয়া যাবে না: তারেক রহমান