বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। সর্বশেষ গত শুক্রবার (২১ জুন) শেষ রাতে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা সেখানে কাউকে প্রবেশ করতেও দিচ্ছেন না।
রবিবার (২৩ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটা-নাগাদ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। চিকিৎসকেরা দফায় দফায় পর্যালোচনা করে তার পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার হার্টে পেসমেকার লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে রবিবার (২৩ জুন) এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। যদিও বিএনপির দায়িত্বশীলরা তা অস্বীকার করেননি। এক নেতার ভাষ্য, ‘আজ পেসমেকার লাগানো হতে পারে, কিংবা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন চিকিৎসকেরা। স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে, গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার নয়া পল্টনে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। শনিবার (২২ জুন) রুহুল কবির রিজভী সারা দেশে রবিবার (২৩ জুন) দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বার বার বলেছেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে, তার চিকিৎসা করাতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন…. বার বার একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেও— দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে এমনকি বিদেশি মিশনগুলো এখানে (বাংলাদেশে) আছে, তারাও বার বার বলেছে, বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে।’
‘কিন্তু শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে, তাকে কোনোভাবে (বিদেশে) চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’
প্রসঙ্গত, দলের ও পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকবার বিদেশে নেওয়ার জন্য চিঠি ও আবেদন করা হলেও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কোনও সায় আসেনি। এমনকি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার আবেদন করার কথা বলার পর চিঠি দেওয়া হলেও কোনও কারণে তা সামনে এগোয়নি।
গত বছরের (২০২৩) শেষ দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিঠি দেওয়া হয় পরিবারের তরফে। ওই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় গত বছরের ১ অক্টোবর সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে আগে কারাগারে যেতে হবে এবং তারপর আদালতে আবেদন করতে হবে।’ এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তা ‘তামাশা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
হঠাৎ অসুস্থতার কারণে শুক্রবার (২১ জুন) গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে তিনি চিকিসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিসাধীন আছেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় বিএনপি রবিবার ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় দোয়া মাহফিল করছে। দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্র্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারাসহ কয়েকশ কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।
এদিকে, খালেদা জিয়াকে দেখতে রবিবার এভার কেয়ারে যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. জাফর ইকবালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বাসায় ফেরেন। এর আগেও একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এ বছরের ৩১ মার্চ তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। পরে ২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন তিনি। সর্বশেষ গত ১ মে এভার কেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপির চেয়ারপারসন। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পরদিন ২ মে ফেরেন বাসায়।
আরও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?