X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেবে না আ.লীগ

এমরান হোসাইন শেখ 
২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০১আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০১

আইন সংশোধন করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন পদ্ধতি চালু করেছিল আওয়ামী লীগ। আট বছরের ব্যবধানে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আইনগতভাবে না হলেও এখন দলীয়ভাবে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তারা। ২০১৫ সালে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি চালুর পর থেকে তৃণমূলে দলীয় কোন্দল ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এসব দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও সহিংসতা ঠেকাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখা অধিকাংশ সদস্যের দাবির আলোকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারকার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার অভিমত দিয়েছে কার্যনির্বাহী কমিটি। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জানানো হবে।

এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া পাঁচ সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, শুধু উপজেলা নয়, আগামীতে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কোনও পর্যায়ে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। দুই-একদিনের মধ্যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন একাধিক নেতা।

স্থানীয় সরকারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিধান আছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেই দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বিধান রয়েছে।

বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, কোন্দল ও সহিংসতা ঠেকাতে স্থানীয় সরকারে দলীয় মার্কা না দেওয়ার অভিমত দেন নেতারা। একই সঙ্গে তারা বলেন, কদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিলে অন্যরা স্বতন্ত্র ভোট করবে। এতে বিভেদ আরও বাড়বে। বরং উন্মুক্ত করে দেওয়াই ভালো হবে।

জবাবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, মার্কা না দিলেই যে গণ্ডগোল হবে না, তা নয়। দেখ তোমরা ক করবা, মার্কা দিও না। আমি মনোনয়ন দেবো না, আমারও ঝামেলা কমে গেলো।

তিনি বলেন, আপাতত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এতে ভোট উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক হবে। যিনি জনপ্রিয় প্রার্থী তিনিই জয়ী হয়ে আসবেন। বিষয়টি নিয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে বিধান চালুর সময় থেকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নানা সমালোচনা করা হয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এর কঠোর সমালোচনা করেন। তবে ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থানে অনড় থাকে। ওই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল—নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা অহংকারের বিষয়। নির্বাচনি মাঠে নৌকা প্রতীক থাকলে বিদ্রোহী প্রার্থী কম হবে। তবে বাস্তবে আওয়ামী লীগের এই ধারণা উল্টো হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগে নানা দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা দেয়। সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এদিকে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বেশ কিছু ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়। এছাড়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেবল চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় প্রতীকে রেখে ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। আসন্ন উপজেলা পরিষদের তিনটি পদও মুক্ত রাখা হচ্ছে।

সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিলেও দলের কেউ স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হলে তাতে কোনও বাধা দেয়নি। এতে দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২৫টির মতো আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৬২ জন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

অবশ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেকে স্বতন্ত্র ভোট করেছেন। তাদেরও একটি অংশ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে এসব বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ সময় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পশ্চিমা দেশগুলোকে ইঙ্গিত করে বলেন, ভোটার উপস্থিতির বিষয় নিয়েই তো ‘মাতব্বররা’ সবক দেন। উন্মুক্ত নির্বাচন হলে ভোটার বাড়বে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোট পরবর্তী সংঘাতের বিষয়টি আলোচনায় আসে। কেউ কেউ ঢাকায় একটি বর্ধিত সভা করে বিভেদ কমানোর প্রস্তাব দেন। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা একে অপরের মধ্যে বিরোধের মধ্যে বর্ধিত সভা না করার কথা বলেন। বরং দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিভেদ কমাতে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বর্ধিত সভা করার কথা বলেন।

সূত্র আরও জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর মন্তব্যের বিষয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও আল গোরের নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এখনও জো বাইডেনের জয় মেনে নেননি। তাদের দেশেই এ অবস্থা! তারা আবার বাংলাদেশে ওয়াজ-নসিহত করে কীভাবে, সেই প্রশ্নটা সবার করা উচিত।

/এমএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আ.লীগ নিষিদ্ধ না করলে দুই উপদেষ্টাকে অপসারণে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি এনসিপির
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
সর্বশেষ খবর
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
পুলিশ সপ্তাহ শুরু আজ
দেশের সব পলিটেকনিকে শাটডাউন ঘোষণা
দেশের সব পলিটেকনিকে শাটডাউন ঘোষণা
মোহাম্মদপুরে সেই ব্যবসায়ীর বাসায় আবার গুলি
মোহাম্মদপুরে সেই ব্যবসায়ীর বাসায় আবার গুলি
ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সাক্ষী ও বাদীর বক্তব্যে অসঙ্গতি
ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সাক্ষী ও বাদীর বক্তব্যে অসঙ্গতি
সর্বাধিক পঠিত
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু