দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে জনকল্যাণমুখী প্রশাসন গঠন এবং গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইশতেহার ঘোষণার সময় তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাগরিকমুখী, কল্যাণমূলক দক্ষ ও স্মার্ট প্রসাশন গড়ার মাধ্যমে জনগণকে উন্নত সেবা দেওয়া এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক প্রশাসন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে সরকারের তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্যোগী ও জনবান্ধব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হচ্ছে। সততা ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারীদের পুরস্কার ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলবো।’
তার সরকার সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। বর্তমান সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠক্রমে এর কুফল সংযোজন করে ছোটবেলা থেকেই তাদের সচেতন করে গড়ে তোলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দমন, সব নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানকে প্রাধান্য ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন আমাদের কাম্য, যেখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। কেন্দ্রীয় বাজেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্তরে সরকার কর্তৃক বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূমিব্যবস্থা এখন ডিজিটাল করা হচ্ছে। জায়গা স্বল্পতা, ব্যবস্থাপনাগত দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতার কারণে ভূমিব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতার চাহিদা দীর্ঘদিনের। প্রশাসনিক সংস্কার, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা প্রয়োগের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার কার্যকর সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১টি জেলায় ২০১৯ থেকে শতভাগ ই-নামজারি নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস দমন, সব নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সূচনা বক্তব্য রাখেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক।