ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুহাররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিন রোজা পালন করা ফরজ ছিল। কিন্তু পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজিয়্যত বাতিল হয়ে যায়। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পরও আল্লাহর রাসুল (সা.) আশুরার রোজাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এ জন্য আশুরার দিন রোজা রাখা সুন্নাত।
এ রোজার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর যদি তোমরা রোজা রাখতে চাও, তবে মুহাররম মাসে রোজা রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা একটি সম্প্রদায়ের তাওবা কবুল করেছেন। সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তাওবাও কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৭৪১)
তবে এই রোজা পালনে যেন বিধর্মীদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়, সে জন্য আশুরার আগে-পরে একটি রোজা যোগ করে নিতে বলা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো। তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও।’ (আহমদ: ২১৫৪)
আশুরার দিন রোজা রাখা ছাড়াও আরও একটি আলোচিত বিষয় রয়েছে, সেটি হলো, দিনটিকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবার-পরিজনের জন্য স্বচ্ছলতার (ভালো খাবারের) ব্যবস্থা করবে আল্লাহ তাকে পূর্ণ বছর স্বচ্ছলতার সঙ্গে রাখবেন। (আল মু’জামুল কাবির, তাবারানি, শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী)
এই হাদিসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসরা দুইভাগে বিভক্ত। কেউ কেউ এটিকে জাল আখ্যায়িত করলেও অনেকে বলেছেন, এটি জঈফ বা দুর্বল। একইসঙ্গে তারা এটিও বলেছেন, একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে হাদিসটি হাসান পর্যায়ের। যারা এটিকে জঈফ ও হাসান বলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন– ইমাম সুয়ূতি, মোল্লা আলি কারি, ইবনে আররাক, আবদুল হাই লাখনোভী (রহ.) প্রমুখ। শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) মুহাদ্দিসদের বক্তব্যগুলোকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, হাদিসটি জাল নয়; বরং জঈফ।
কোনও বিষয়ের মর্যাদা ও ফজিলত প্রমাণের ক্ষেত্রে জঈফ হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করা সর্বজনবিদিত। আর সাধারণ জঈফ হাদিস বলতে বানোয়াট হাদিসকে বোঝায় না; বরং হাদিসের সনদ বা সূত্রগত দুর্বলতা থাকলে সেটাকে জঈফ বলা হয়। তাই এ হাদিসের ওপর আমল করে আশুরার দিন পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে।
কিন্তু যেহেতু অনেক মুহাদ্দিস হাদিসটিকে জাল তথা বানোয়াট বলেছেন, এ জন্য হাদিসটির ওপর বেশি গুরুত্ব না দেওয়া উচিৎ। তবে যদি কেউ অন্য মুহাদ্দিসদের কথা (হাদিসটি জঈফ ও আমলযোগ্য) মেনে নিয়ে আশুরার দিন পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করেন, তাহলে তাকে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।