বনানীর ফারুক-রূপায়ন (এফ আর) টাওয়ার নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে ৩০ প্রতিষ্ঠানের নথি ও ৩০ কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ৩০ কর্মকর্তা এবং এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল ও এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলামের সম্পদের হিসাবও নেবে দুদক।
সূত্র বলছে, যে কর্মকর্তাদের দুদকে তলব করা হয়েছে তাদের অনেকেই রাজধানীতে বিধিবহির্ভূত বহু ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। এফ আর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সেসব তথ্যও বেরিয়ে আসছে। গত ২৫ এপ্রিল রাজউকের অথরাইজড অফিসার নুরুজ্জামান জহিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন শরিফকে ২ মে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক। এই দুই কর্মকর্তা বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক বলে তথ্য পেয়েছে দুদক।
এফ আর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে কিনা এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা অনুসন্ধানের বিষয়ে গত ৩ এপ্রিল সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিককে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা ওয়াসা, ডেসা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ৩০টি প্রতিষ্ঠানের নথি ও ৩০ কর্মকর্তাকে তলব করে দুদক। কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনই রাজউকের কর্মকর্তা।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। এ ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন। গুরুতর আহত হন আরও অনেকে। তারা এখনও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, এফ আর টাওয়ারের জমির মালিম এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল ও এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলাম। এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভির উল ইসলাম গ্রেফতার আছেন। মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় মোট ২৭ জন নিহত হন। ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে এফ আর টাওয়ারটি ২৩ তলা নির্মাণ করা হয়েছে।