X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

ডায়ালাইসিসের সুবিধা পান মাত্র এক-চতুর্থাংশ কিডনি রোগী

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৯আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:৪৬

কিডনি রোগীদের হালচাল প্রথম পর্ব

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, দেশে ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত পুরুষের হার ১২ শতাংশ আর নারীদের হার ১৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন দেশের হাসপাতালগুলোর যে সক্ষমতা তাতে ১৫ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া যায়। তবে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মাত্র ১০০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালভেদে ডায়ালাইসিসে একদিনে খরচ হয় ৮০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। ফলে ব্যয়বহুল হওয়ায় গরিব রোগীরা দীর্ঘমেয়াদে ডায়ালাইসিসও করাতে পারছেন না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বেশকিছু হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি বলছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি এই রোগে প্রতিবছর ২৪ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। দেশে নানা ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি বলে ধারণা করা হয়। এ কারণে এই রোগ প্রতিরোধ ও এর চিকিৎসায় ডায়ালাইসিসসহ আধুনিক সব সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, কিছু কিডনি রোগ আছে যেগুলো জন্মগত ত্রুটি। কিছু আছে জন্মের পর বিভিন্ন সময়ে হয়। জন্মগত ত্রুটির মধ্যে প্রশ্রাব করতে পারে না, থলি তৈরি না হওয়া, কিডনি ঠিকভাবে তৈরি না হওয়া ইত্যাদি। কিডনিও অনুপস্থিত থাকে। কিডনি নালীতে সমস্যা হয়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর কিছু আছে ইনফেকশনজনিত কারণে হয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে ইনফেকশনজনিত রোগ বেশি ছিল। এখন ডায়াবেটিসজনিত রোগ বাড়ছে। এদের চিকিৎসায় ডায়ালাইসিস করা লাগে। কিডনি অকেজো হয়ে গেলে এটি ফাংশন করার জন্য করা লাগে। ডায়ালাইসিস অনেক ব্যয়বহুল এবং অনেক কষ্টের। একটা পরিবারের ভোগান্তি।’

ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, একজন রোগীকে সপ্তাহে দুই-তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। একেকটা সেশনে লাগে চার-পাঁচ হাজার টাকা। একজন রোগীর পেছনে মাসে ন্যূনতম এক লাখ টাকা খরচ হয়। তিনি জানান, প্রতিটা জেলা সদরের হাসপাতালে এখনও ডায়ালাইসিস করার সুযোগ নেই। এ কারণে রোগী বিভাগীয় সদর বা রাজধানীতে আসলে তার খরচ আরও বেড়ে যায়। কর্মজীবী হলে তার অনেক সময় নষ্ট হয়।

ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তবে ডায়ালাইসিসের চেয়ে ট্রান্সপ্লান্ট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন রোগীর ট্রান্সপ্লান্ট সফল হলে তিনি সুস্থ জীবন পেতে পারেন। বেসরকারি উদ্যোগে অনেকেই এখন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করছেন।’

ল্যাবএইডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ এম শামীম জানান, তারা সারাদেশে ১০০টি ডায়ালাইসিস সেন্টার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
বিএসএমএমইউ’র নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আছিয়া খানম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা যারা নিচ্ছেন তারা মোট কিডনি রোগীর মাত্র ২০ ভাগ। বাকি রোগীরা চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে আরও ৫০ ভাগ চার-ছয় মাসের বেশি চিকিৎসা কন্টিনিউ করতে পারছেন না। কারণ, কোনও সরকারি অনুদান নেই। পুরোটাই পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে এফোর্ড করতে হয়। যে রোগীরা আসছেন না তারা হয়তো আল্টিমেটলি মারা যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘পাঁচ ভাগ রোগী কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করছেন। তারা ভালো জীবনযাপন করছেন। আমাদের কিডনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক। কারণ, রোগীরা এফোর্ড করতে পারে না। এটা অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা।’

ডায়ালাইসিসের রোগীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর সুপারিশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দ আব্দুল হামিদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ডায়ালাইসিস রোগীর ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে তিনটা ডোজ দিতে হয়। এখন দেশের হাসপাতালগুলোর যে সক্ষমতা তাতে ১৫ হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া যায়। কিন্তু রোগী আছে ৬০ হাজারের মতো। বাকি রোগীদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। এখন যারা ট্রিটমেন্ট নিচ্ছেন না বা নিতে পারছেন না, তাদের আমরা কীভাবে সাহায্য করবো?’

তিনি বলেন, ‘এর জন্য আমাদের সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে। হসপিটালে রোগীর রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে, বায়োমেট্রিক্স থাকতে হবে, তার কার্ড থাকতে হবে। যাতে সব তথ্য পাওয়া যায়, যেন একটা স্বচ্ছতা থাকে।’

সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘রোগীর হাতে কোনও অর্থ দেওয়া যাবে না। সার্ভিস প্রোভাইডারদের মাধ্যমে দিতে হবে। তারপর প্রোভাইডার যখন ক্লেইম করবে তখন সে হাসপাতাল থেকে টাকাটা পাবে। এভাবে আমরা কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা ডায়ালাইসিস করছেন তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারবো।’ 

 

/এইচআই/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজবাড়ীর সাবেক এমপি কেরামত আলীর রিমান্ড
রাজবাড়ীর সাবেক এমপি কেরামত আলীর রিমান্ড
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ
বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার
বিশ্বে সামরিক ব্যয় রেকর্ড বেড়ে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার
এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে অধিদফতরে শূন্য পদে বদলির দাবি
এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে অধিদফতরে শূন্য পদে বদলির দাবি
সর্বাধিক পঠিত
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
রিজার্ভ আরও বাড়লো
রিজার্ভ আরও বাড়লো
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’