রানা প্লাজা দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে অবিলম্বে আহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক আয়োজিত ‘রানা প্লাজা ভবন ধস: বিচারের অপেক্ষায় একযুগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, রানা প্লাজার ভবন ধসের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনাকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করা হয়নি। অথচ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সমস্ত মামলার প্রক্রিয়ার পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, এই ঘটনার মাধ্যমে দেশে একটা নিরাপত্তা সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। এতগুলো মানুষ আমরা এত বছর ধরে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি তবুও ঘটনাটির বিচার করা সম্ভব হয়নি। এটিকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করে ধারাবাহিকভাবে এর যাবতীয় আইনি কার্যক্রম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী বলেন, ২০১৩ সালের ঘটনাটি কী হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা তা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধ থাকলেও; ঘটনা পর্যবেক্ষণে একে হত্যাকাণ্ড বললে ভুল বলা হবে না। একযুগ পরেও নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিক এখনও আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পায়নি। এসময় তিনি তাদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দায়িত্বসমূহ নিয়ে সকলের সচেতনতা এবং সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়াকার্সের সভাপতি আবুল হোসাইন বলেন, ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন প্রয়োজন। এসময় রানা প্লাজার জমিতে পুনর্বাসন এবং প্রাণ হারানো সকলের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রানা প্লাজা মামলা মনিটরিং কমিটি গঠন করার দাবি জানান।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ভুক্তভোগী শ্রমিকের জন্য ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়। নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ তাদের এক বছরের মাথাপিছু আয়ের থেকে কম।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য এএকেএম নাসিম বলেন, শ্রম আইন সংস্কারের সাথে শ্রম আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়াতে হাশেম ফুডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা দিয়েছে। এসময় তিনি প্রাণ হারানো সকল শ্রমিকের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এবং রানা প্লাজা ভবন ধসে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে জুরাইন কবরস্থানে তাদের নামফলক স্থাপনের জন্য দাবি জানান।
দিক নির্দেশনা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, ন্যায় বিচার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। রানা প্লাজা নিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করা জরুরি। এছাড়া শ্রম আইনে পুনর্বাসনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এসময় তিনি শ্রম সংস্কার কমিশনকে রানা প্লাজার মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও জবাবদিহিতার জন্য কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন।