‘বাংলাদেশ যে জায়গায় ছিল সেখান থেকে একটা সহনশীল, মধ্যপন্থি জায়গায় এসেছে বলে আমি মনে করি। এর উল্টোটা যারা বলছে, তারা মূলত বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ এবং অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর দুরভিসন্ধি থেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছে’– বলছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের এই আমির আরও উল্লেখ করেন, আমরা এখনই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর কোনও ধরনের অনাস্থা জ্ঞাপন করতে চাচ্ছি না। এখনও পরিবেশ আস্থা রাখার মতোই আছে। মামুনুল হক মনে করেন, আগামী নির্বাচনে নামে-বেনামে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় নিজস্ব দফতরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে মামুনুল হকের একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব আলাপ উঠে আসে। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি গ্রেফতার হন। মুক্তি পান এ বছরের মে মাসে।
ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাৎকারে কওমি মাদ্রাসার সার্টিফিকেট, ২৪-এর অভ্যুত্থানে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, নতুন দিনের ইসলামি রাজনীতি, ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন ইসলামিক এই স্কলার। সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ করেছেন মো. মাসুম ও মুহূর্তবন্দি করেছেন সাজ্জাদ হোসেন। আজ সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব।
বাংলা ট্রিবিউন: এই আন্দোলনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল, শিক্ষার্থীদের অনেকে দেয়াল লিখনও করেছে।
মামুনুল হক: হ্যাঁ। বিপুল সংখ্যক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল এবং দেয়াল লিখনও তারাই করেছিল।
বাংলা ট্রিবিউন: সেখান থেকে বের হয়ে আপনারা পরের কার্যক্রম সরকার গঠনের দিকে গেলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কি কোনও আলোচনা হয়েছিল?
মামুনুল হক: পরবর্তী সময়ে ওই দিন (৫ আগস্ট) এ কথা হলো যে সরকার গঠনের জন্য পরবর্তীতে আবার সব রাজনৈতিক দলের সংলাপ করবেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এর মধ্যে একটা কথা এলো, এই আন্দোলনে প্রধান ভূমিকা পালন করা ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব, সেখানে ঠিকঠাকভাবে হয়ে ওঠেনি, তাই আমরা তখন প্রস্তাব করলাম, তাদের প্রতিনিধিত্বটা সেখানে প্রত্যক্ষভাবেই হওয়া উচিত। আসিফ নজরুল সাহেব তাদের সেটা উত্থাপন করছিলেন এবং আমরাও গুরুত্বের সঙ্গে সেটাই বলছিলাম যে তাদের অবশ্যই এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার, তাদের মতামত নেওয়া দরকার। এই প্রস্তাব তখন রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধান গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন। বঙ্গভবনে আমাদের বৈঠক চলার সময়েই কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হলেন। তবে তারা ওই বৈঠকে ওভাবে উপস্থিত হতে পারেনি।
তখন আমরা সেনাপ্রধানকে বিশেষভাবে বললাম যে আপনিসহ ছাত্রদের সঙ্গে বসেন। সেনাপ্রধান আমাদের এই কথাটাও গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন। তখন রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানসহ ছাত্রনেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হলো। বৈঠক হবার পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতা তাদের পক্ষ থেকে কিছু রোডম্যাপ দিলো যে কত দিনের মধ্যে তারা তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা দেবে। ওদের প্রস্তাবনা এবং তাদের ভূমিকাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বৈঠকের কথা ছিল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে সেই বৈঠকটি আর ওভাবে হয়ে ওঠেনি। তো আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পেছনে রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বই মূল ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলা ট্রিবিউন: ৮ আগস্ট থেকে ১ অক্টোবর—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মামুনুল হক: মূল্যায়নের জায়গা থেকে বলবো—অনেক প্রত্যাশা যেমন পূরণ হয়েছে, আবার অনেক প্রত্যাশা অপূরণ থাকার বেদনাও যে নাই তা না। তবে আমরা এখনই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর কোনও ধরনের অনাস্থা জ্ঞাপন করতে চাচ্ছি না। আস্থা রাখার মতোই এখনও পরিবেশ আছে। তবে মনে হচ্ছে খুব সঠিকভাবে তারা ধর্মীয় জায়গাগুলো পরিচালনা করতে পারছেন না। যে জায়গাগুলোতে ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন, তারা যে ভুলটা বারবারই করছেন, সেটা হলো তারা তাদের সিলেকশনের মাধ্যমে একজন-দুজনকে হয়তো কোনও একটার প্রতিনিধি রাখছেন। কিন্তু যাকে রাখছেন তিনি আসলে ধর্মীয় অঙ্গনের প্রতিনিধিত্ব করছেন কিনা!
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কি পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত যে কমিটি হয়েছে সেটিকে বোঝাতে চাইছেন?
মামুনুল হক: অবশ্যই। সেখানে ইসলামিক স্কলার হিসেবে একজন ব্যক্তিকে রাখা হলো, বাংলাদেশের যত ইসলামিক অঙ্গন আছে কেউই তাকে সমর্থন করে না। শুধু সমর্থন করে না তা নয়, তার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি রয়েছে। আপনি আমাদের হেফাজতে ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামী বলেন, আহলে হাদিস বলেন, এমনকি যারা তরিকতপন্থি আছেন, পীর-মুরিদ লাইনে কাজ করেন, তারাও ওই ব্যক্তিকে সমর্থন করে না। অর্থাৎ বাংলাদেশে চারটা যে মূল ঘরানা তাদের সবাই—কওমি, আলিয়া, জামায়াত, হেফাজত, চরমোনাই সব লোকজনই একজন হাদিস অস্বীকার করা ব্যক্তি, যার ইমান নিয়ে প্রশ্ন আছে সে ধরনের একজন ব্যক্তিকে ইসলামিক স্কলার হিসেবে পাঠ্যপুস্তক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রাখাকে মানতে পারেনি।
বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম প্রধান দেশ– পাঠ্যসূচি প্রণয়নে ইসলামিক বিশেষজ্ঞ রাখতে হবে বলে আলেম ও ইসলামি দলগুলো দাবি করছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য ধর্মের যেসব বই আছে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে?
মামুনুল হক: এখানে আমার দুটো কথা– একটা হলো, ধর্ম শিক্ষার যে বই থাকবে, পাঠ্যপুস্তক থাকবে, মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম ধর্মের পাঠ্যবই থাকবে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হিন্দু ধর্ম শিক্ষার বই থাকতে পারে এবং সেটা থাকাই যৌক্তিক, সেটির ব্যাপারে আমার কোনও কথা নাই। ইসলাম ধর্ম শিক্ষার যে বইটা থাকবে সেখানে ইসলামিক পণ্ডিতদের ভূমিকা থাকতে হবে। দ্বিতীয় কথা হলো– ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বইয়ের বাইরে অন্য যেসব পাঠ্যপুস্তক থাকবে সেই পাঠ্যপুস্তকে এমন কোনও কথা বা লেখা যেন না আসে, যেটা সরাসরি ইসলামের মূল চেতনা কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সেটা যে নামেই হোক, ইতিহাসের নামে বা বিজ্ঞানের কোনও তত্ত্বের নামে, সমাজবিজ্ঞানের কোনও গল্পের আকারে বা অন্য যেকোনও নামেই হোক।
বাংলা ট্রিবিউন: এই মতাদর্শিক বিভাজন তো বাংলাদেশে আছে?
মামুনুল হক: না, আমরা কোনও বিভাজনের কথা বলছি না। বাংলাদেশে যারা ইসলাম অনুসরণ করে তাদের মধ্যে মৌলিকভাবে যে অঙ্গনগুলো, একটা বড় অঙ্গন হলো কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক, যেটাকে আমরা দেওবন্দি সিলসিলা বলি। আরেকটা বড় অঙ্গন হলো আহলে হাদিস-সালাফি অঙ্গন। বাংলাদেশে প্রায় ১ দেড় কোটি বা তারচেয়ে বেশি হবে সালাফি আছেন, আহলে হাদিস আছেন।
বাংলা ট্রিবিউন: সালাফি বিষয়টা যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।
মামুনুল হক: আহলে হাদিস সুনির্দিষ্ট কোনও মাজহাব মানে না। ইসলাম ধর্মে চারটা প্রধান মাজহাব রয়েছে– হানাফি মাজহাব, শাফিঈ মাজহাব, মালেকি মাজহাব এবং হাম্বলি মাজহাব। আহলে হাদিস অনুসারীরা এই চারটি মাজহাবের বাইরে গিয়ে শুধু কোরআন-হাদিস থেকে বক্তব্য কালেক্ট করেন, তারপর আমল করেন। এটা হলো আহলে হাদিস। আহলে হাদিসের কাছাকাছি হলো সালাফি। তারা বলেন যে তারা কোনও একজন বিশেষ ইমামকে মানেন না, কোনও একটা মাজহাব মানেন না। সব মাজহাবের যে বিষয়গুলো যুক্তিসঙ্গত মনে হয় তা-ই তারা মানেন। সালাফি এবং আহলে হাদিসের মধ্যে মৌলিক কোনও বড় পার্থক্য নেই। আমরা সালাফি এবং আহলে হাদিসকে একই ঘরানার বলে বুঝি।
সালাফিরা বলেন আমরা সব মাজহাবই মানি। শুধু একটি মাজহাবকে আমরা অনুসরণ করি না। সালাফি বলতে মদিনা ইউনিভার্সিটির যে মূল চিন্তা-দর্শন, যেটা মদিনা ইউনিভার্সিটি থেকে পুরো বিশ্বে প্রচার হয়, সেই চিন্তা এবং দর্শনকে আমরা সালাফি বলি। সালাফি-আহলে হাদিস ঘরানার দেড় বা ২ কোটি বা আরও বেশি মানুষ আছে বাংলাদেশে। ঠিক একইভাবে আমাদের দেওবন্দি বা হানাফি সিলসিলার যারা লোক আছেন তারা সংখ্যায় আরও বেশি। তারপর আছে আরেকটা ঘরানা, যাদের আমরা তরিকতপন্থি বলি। ইসলামিক ফ্রন্ট আছে, ফুরফুরা, শর্ষিনাসহ পীর সাহেবদের যে দরবার হয়, সেই কেন্দ্রিক যারা আছে– যারা নিজেদের ‘সুন্নি’ বলে তাদের আমি তরিকত বলছি। তিনটি ঘরানা গেলো– এর বাইরে আরও বড় একটা ঘরানা রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে আহলে হাদিস ও সালাফি আছে।
বাংলা ট্রিবিউন: জামায়াতে ইসলামী কি মাজহাব অনুসরণ করে?
মামুনুল হক: জামায়াতে ইসলামীর মূল চিন্তা– তারা মাজহাবও মানে আবার যারা মাজহাব মানে না এ ধরনের লোকজনও তাদের মাঝে অনেক আছে। তারা যেহেতু বড় একটি গ্রুপ সে হিসেবে তাদের ভিন্ন একটা গুরুত্ব দিলাম। সে হিসেবে আমি বলতে পারি, বাংলাদেশে চারটা ঘরানা। এই চার ঘরানার কোনও ঘরানার কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে না– সেটাকে আপনি কীভাবে ‘ইসলাম’ বলে বাংলাদেশের মানুষকে মানাবেন?
বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু সংবিধানে নাগরিকের অধিকারের মধ্যে বলা হয়েছে যে কোনও নাগরিকের ওপর জোরপূর্বক কোনও মত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
মামুনুল হক: আমি চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলছি না, আমি বলছি– আপনি যখন ইসলামের নামে কথা বলবেন এখন সেটি তো ইসলামের ভেতর থাকতে হবে। আপনি ইসলামের নামে একটা অনৈসলামিক কথা চাপিয়ে দিতে পারবেন না। এটা তো সরাসরি প্রতারণা। আমাদের কথাতো ওই জায়গাতেই, যেহেতু সংবিধানে প্রত্যেক ধর্মের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। আপনি আমার সন্তানকে এমন কিছু পড়াতে পারেন না, যেটা আমার ইসলামি অনুভূতিতে আঘাত করে। ইসলামের মূল চিন্তার সঙ্গে, ইসলামের মূল বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও বিষয় আপনি এখানে রাখতে পারেন না।
আমাদের মূল কথা এই জায়গায়, পাঠ্যপুস্তক যখন রচনা করা হবে তখন সেটাকে বিভিন্নভাবে রিভাইজ দেওয়ার একটা ব্যবস্থা থাকে। বিভিন্নভাবে এটাকে পর্যালোচনা-পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রিভিশনের ব্যবস্থা থাকে। একটা রিভিশন কী ধর্মীয় যারা স্কলার- ধর্মবেত্তাদের মাধ্যমে করানো যায় না? এটা তো আহামরি কোনও বিষয় না। কোনও জায়গাতে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বড় ধরনের যদি কোনও বিষয় থাকে তাহলে সেটি তারা ভাগ করবেন যে এই জায়গাটা ‘এভাবে না, এভাবে হোক’। আসলে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামকে খুবই অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ হিসেবে ইসলামি আকিদা, বিশ্বাস, চিন্তা, চেতনার যে গুরুত্ব রয়েছে, তারা এ বিষয়টাকে কখনও গুরুত্বের চোখে দেখতেই চায় না– এটাই মূল কথা।
বাংলা ট্রিবিউন: এটা কি আপনি বিশেষ কোনও শ্রেণিকে উদ্দেশ করে বলছেন?
মামুনুল হক: শিক্ষার ক্ষেত্রে হোক বা রাজনীতির ক্ষেত্রে হোক– সেক্যুলার চিন্তা-চেতনার যারা ধারক তারা ইসলামের জায়গাটাকে খুবই অবহেলা করেন। শুধু অবহেলা না, উপেক্ষাও করেন, আবার শুধু উপেক্ষা নয়, বিরোধিতাও করেন।
বাংলা ট্রিবিউন: অনেকে আলোচনা তুলছেন, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি বা পাঠ্যবই নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষা থেকে কাউকে নেওয়া হয় না, মনোনীত করা হয় না। সেক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষায় কেন মাদ্রাসার একজনকে যুক্ত করতে হবে?
মামুনুল হক: এখানে মাদ্রাসা বলতে মাদ্রাসার দুটো শিক্ষাব্যবস্থা। একটা হলো– কওমি মাদ্রাসা, অন্যটা আলিয়া মাদ্রাসা। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা কারিকুলামে কী বই আসবে– সেটি সেই বিষয়ক বিশেষজ্ঞরাই করছে। আলিয়া মাদ্রাসার বিজ্ঞানের বই কোনও হুজুর বা কোনও আলেম লিখে দিচ্ছে না। বিজ্ঞানের যারা শিক্ষক তারাই লিখছেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তারাই এই পাঠ্যপুস্তকগুলো করছেন। এখন যদি কওমি মাদ্রাসা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, কওমি মাদ্রাসা হলো বেসরকারি মাদ্রাসা। তাই এখানে পুরো কারিকুলামই বেসরকারিভাবে পরিচালিত।
আমাদের এখানেও জেনারেল শিক্ষা আছে, বিজ্ঞান, বাংলা, গণিত, ইংলিশ, ইতিহাস, ভূগোল আছে– যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞরাই লিখছেন। সেখানে যদি কোথাও কোনও তথ্য সম্পর্কে, কোনও অধ্যায় বা কোনও পাঠ সম্পর্কে কারও কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে যে কেউ বলতে পারেন কওমি মাদ্রাসা সেই বিষয়টা ভুল পড়াচ্ছে। একজন বৈজ্ঞানিক যদি বলেন আমাদের বিজ্ঞান বইয়ে বা কওমি মাদ্রাসা বোর্ড প্রণীত কোনও বইয়ের মধ্যে ভুল আছে, গণিত বা ইংলিশ গ্রামারে ভুল আছে, বিজ্ঞানের কোনও পাঠে ভুল আছে– সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটা কারেকশন করবো এবং আমরা জবাবদিহি করবো। তো সেই জায়গা থেকে আমরা বলবো– তাদের পাঠ্যপুস্তক তৈরি করার দায়িত্ব আমরা আলেমদের দিতে বলছি না।
আমরা দুটি জায়গায় কথাটা বলছি। একটা হলো, ইসলাম শিক্ষা যে বইটা থাকবে সেই বইটা একজন ইসলামি বিশেষজ্ঞ লিখবেন। দুই নম্বর কথা হলো, অন্য সব বইয়ে ইসলামবিরোধী কোনও কথাবার্তা থাকতে পারবে না। সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এখন সেটা আপনারা যদি পারেন করেন। আর না পারলে সেটা আপনারা একজন ইসলামি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে বা একটা বোর্ড তৈরি করে রিভিশন করিয়ে নেন। তাহলে তো এই সমস্যা থাকে না।
বাংলা ট্রিবিউন: ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সার্টিফিকেটকে মাস্টার্স সমমানের মর্যাদা দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই মর্যাদা কি বা এটা দিয়ে কোনও কাজ হবে?
মামুনুল হক: মূলত কওমি মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিটা অনেক পুরনো। আমাদের দাবি সর্বপ্রথম আমলে নেন ২০০১ সালের জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এটা প্রথম আমলে নেন তিনি। আমলে নিয়ে ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলেমদের নিয়ে একটা সম্মেলন করেন। সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দেন যে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সম্মান দেওয়া হবে। এরপরে সেটা প্রজ্ঞাপন আকারেও চলে আসে। তো স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সেটাই হলো রাষ্ট্রীয় একটা প্রথম পদক্ষেপ। এবং সেটাই পরে ২০১৭ সালে বিগত সরকারের আমলে সংসদে আইন আকারে পাস হয়। তো, আপনার যে প্রশ্ন এই সনদ বা স্বীকৃতি দিয়ে কাজটা কি!
বাংলা ট্রিবিউন: জি, একজন কওমি শিক্ষার্থী যখন এই সার্টিফিকেট পাবেন তখন সেটা দিয়ে কী করবেন? মানে এই সার্টিফিকেট দিয়ে দেশে বা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারছেন না।
মামুনুল হক: আমাদের একটা জিনিসই চাওয়ার ছিল, সেটা হলো– আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা, এই ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী যখন পড়াশোনা করবে, সে শিক্ষিত এবং এটার শুধু আমরা রাষ্ট্রীয় একটা স্বীকৃতি চাই। রাষ্ট্র বলুক, যারা দাওরায়ে হাদিস পড়েছে তারা কোন স্তরের শিক্ষিত। রাষ্ট্র আমাকে আইন করে বলে দিয়েছে, যে দাওরায়ে হাদিস পাস করবে সে এমএ সমমান শিক্ষিত। কাজেই আমার যে চাহিদা বা চাওয়াটা ছিল সেটা পূরণ হয়ে গেছে। এই সার্টিফিকেট দিয়ে কোথাও চাকরি করা বা বাইরে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও উচ্চতর পড়াশোনা কোনোটাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। এই স্বীকৃতির আগ পর্যন্ত আমরা এত পড়াশোনা করার পরেও রাষ্ট্রের বিবেচনায় অশিক্ষিত ছিলাম।
বাংলা ট্রিবিউন: এখন কি সেই বিবেচনায় শিক্ষার হারে যুক্ত হবে?
মামুনুল হক: হ্যাঁ, যুক্ত হতে বাধ্য। এখন যদি বাংলাদেশে সরকারি আইন হয় যে মিনিমাম যেকোনও একটা কাজের জন্য আপনাকে এমএ পাস হতে হবে অথবা এমএ পাস হলে চলবে- এরকম কোনও আইন বা ধারা যদি জারি হয়, হতে পারে সংসদ নির্বাচন করার জন্য এমএ পাস করতে হবে– তাহলে আমার দাওরায়ে হাদিসের একজন আলেম তার সনদটা পেশ করে বলতে পারবে- হ্যাঁ, আমার তো এমএ'র সনদ আছে। কাজই এই জায়গাটুকু আমার চাওয়ার ছিল। অনেক জায়গায় ইসলামি স্টাডিজ এবং আরবি এই দুটো জায়গায় সমমান দেওয়া হয়েছে। আরবি এবং ইসলামি স্টাডিজে এমএ করার পর সার্টিফিকেট দিয়ে যে জায়গাগুলোতে ভ্যালুয়েশন দেওয়া হয় সেই জায়গাগুলোতে দাওরায়ে হাদিসের সার্টিফিকেট দিয়ে অনেক জায়গায় চাকরি হয়, কাজ হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের অবস্থান কী? আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলছেন। বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আপনি জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে গিয়েছেন। আগামী নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য করে একই মঞ্চে আসার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা?
মামুনুল হক: এখানে প্রথম দুটো কথা। এক নম্বর হলো–বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সবচেয়ে নিগৃহীত ছিলাম আমরা ইসলামিক অঙ্গন। ওই জায়গা থেকে আমাদের সবার মজলুম হওয়ার কারণে এক ধরনের পারস্পরিক সহমর্মিতা-সহানুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সে জায়গা থেকে আমাদের পরস্পরের মাঝে যোগাযোগ বা একটা সম্পর্কের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো– আমাদের শাখাগত কিছু মতপার্থক্য থাকলেও মৌলিক বিষয়ে আমরা সবাই একমত। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা ইসলামি রাষ্ট্র দেখতে চাই। রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে আমরা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। অর্থাৎ, আমরা যারা ইসলামি রাজনীতি করি– এই পয়েন্টকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলো যে করেই হোক, যেভাবেই হোক ঐক্যবদ্ধ থাকুক। এবং তাদের সবার পক্ষ থেকে যেকোনও জাতীয় প্রেক্ষাপটে বা জাতীয় নির্বাচনে অন্তত একজন যেন ইসলামি-জনতার পক্ষ থেকে আসতে পারে।
বাংলা ট্রিবিউন: ইসলামি রাষ্ট্রের বিষয়টায় কি জামায়াতে ইসলামী একমত হয়েছে যে এজন্য একটা ঐক্য চায়?
মামুনুল হক: আমি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের যে কথাটি বলেছি সেটা হলো, ইসলামি রাষ্ট্র চাই। এই কথাটা তো জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিরও মূল কথা। আমাদেরও মূল কথা। আমরা যারা যারা ইসলামি রাজনীতি করি তাদের সবার মূল কথাটাই হলো একটা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই পয়েন্টে যারা একমত আমরা পর্যায়ক্রমে নির্বাচনকেন্দ্রিক একটা প্ল্যাটফর্মে এক জায়গায় থাকতে চাই। এটা শুধু আগামী নির্বাচন না, ভবিষ্যতেও একসঙ্গে থাকতে চাই। আগামী নির্বাচনটা কেমন হবে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা কেমন জোটবদ্ধ হবো বা জোটের পরিধি কী পর্যন্ত হবে বা আদৌ জোটবদ্ধ হবো কিনা– প্রশ্নগুলোর এই মুহূর্তে উত্তর হলো, জোটবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটা ধাপে চিন্তা করছি।
প্রথম একটা ধাপ হলো, ইতোমধ্যে বেশ কিছু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ আমাদের সম্মিলিত একটা প্ল্যাটফর্ম আছে– সমমনা ইসলামি দলসমূহ। এই পরিসরটাকে আরেকটু বৃদ্ধি করতে চাচ্ছি। এটাকে আরও বৃদ্ধি করে আমাদের মধ্যে ঐক্যটাকে আরও সঙ্ঘবদ্ধ করে ইসলামি আন্দোলন, চরমোনাই পীর সাহেব, উনাদের সঙ্গেও একটা ঐক্যের জায়গায় পৌঁছতে চাই। সেকেন্ড স্টেপে গিয়ে আমরা জামায়াতে ইসলামী, ইসলামিক ফ্রন্টসহ সুন্নিদের যে ‘ইসলামী ফ্রন্ট’ আছে, সেটাসহ যারা ইসলামি রাষ্ট্র চায়—এই কথায় একমত সবাইকে একটা ছাতার নিচে আসতে চাই। এরপর যে কথাটা আসবে সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটা কেমন হবে। সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো– বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে মৌলিক ভিত্তিতে বিভাজন করলে তিনটা পক্ষ দাঁড়ায়। আমরা একটা পক্ষ, যারা ইসলামি রাষ্ট্র চাই। আরেকটা পক্ষ হলো– যারা রাজনীতিতে কোনোভাবেই ইসলামকে সহ্য করতে চায় না, এরকম একটা পক্ষ আছে, সেই পক্ষটা একেবারে কম না।
বাংলা ট্রিবিউন: সেই পক্ষকে কি এখনও সক্রিয় মনে করেন?
মামুনুল হক: এই মুহূর্তে তারা সক্রিয় না থাকলেও তারা ভ্যানিশ হয়ে যায়নি। হয়তো তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে এই মুহূর্তে চাপের মুখে আছে। কিন্তু তাদের যে জনসমর্থন তাতে কিন্তু ৩০-৩৫ শতাংশ মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। এবং তাদের আশ্রয়ে সব ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো– যারা চরম ইসলামবিরোধী সবাই, নাম ধরেই বলি– আওয়ামী লীগের আশ্রয়েই তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করে। তারা এখন সবাই তাদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।
আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের ওপর আঘাত মানেই হলো সব ইসলামবিরোধী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের ওপর আঘাত। এ জন্য তারা আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে নামে হোক, বেনামে হোক, আগামী দিনে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ কোনও প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে। যদি তৈরি করে তখন সেটা আরেকটা পক্ষ হয়ে গেলো। এর মাঝে আরেকটা পক্ষ আছে, যারা নিজেরা ইসলামি রাজনীতি করে না এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও বলে না, আবার ইসলামি রাজনীতি বা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকামীদের প্রতিহতও করে না।
বাংলা ট্রিবিউন: এটা কি বিএনপির কথা বলছেন?
মামুনুল হক: আমি বিএনপির কথাই বলতে চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যে–ইসলামপন্থি এবং ইসলামপন্থিদের জন্য তুলনামূলক সহনীয় তারা। যদি আমরা সম্পূর্ণরূপে অনেক বেশি মুখোমুখি অবস্থানে থাকি, সেই ক্ষেত্রে আমাদের সমর্থনগুলো বিভক্ত হয়ে চরম ইসলামবিরোধী যে শক্তিটা আছে, তারা আবার ফিরে আসার একটা সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টা আমরা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে মাথায় রাখবো। এজন্য এই মুহূর্তেই আমাদের কথা বলার সময় হয়নি যে আমরা কীভাবে নির্বাচনকে মোকাবিলা করবো।
বাংলা ট্রিবিউন: ছাত্রনেতারা জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেছেন, সমন্বয়করা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তাদের এই উদ্যোগ বা তারাও যে একটা রাজনৈতিক উদ্যোগের ভেতর দিয়ে আছেন, আপনার মূল্যায়ন কী?
মামুনুল হক: এটা ভালো হিসেবে মূল্যায়ন করছি।
বাংলা ট্রিবিউন: তাদের অংশগ্রহণ সরকারেও আছে। সরকারে থেকে রাজনৈতিক দল গঠন–এই জিনিসটা আপনি কীভাবে দেখছেন।
মামুনুল হক: হ্যাঁ, থাকুক। সরকারের আশ্রয়ে থেকে রাজনৈতিক দল তো অনেকই হয়েছে। যখন যারা সরকারে থাকে তখন তারা সরকারি একটা সুবিধা নেয়। কাজেই এটাকে খুব বেশি আপত্তিকর দৃষ্টিতে দেখার প্রয়োজন মনে করি না। তারা যদি সুন্দর করে একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে পারে, জনগণের আস্থা যদি তারা অর্জন করতে পারে, বিকল্প একটা ধারা যদি তারা গড়ে তুলতে পারে– মোস্ট ওয়েলকাম। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের সাথেও আলাপ করবো। আমাদের শুধু একটাই কথা– সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা থেকে, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ইসলামকে উৎখাত করার কোনও সুযোগ আমরা কাউকে দেবো না। এটার জন্য আমাদের যখন যে ভূমিকা রাখতে হয় আমরা সেই ভূমিকায় রাখবো, ইনশাআল্লাহ।
বাংলা ট্রিবিউন: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বেশ কিছু দিন পরেই হিন্দুদের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীর ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এরপর বিভিন্ন মাজারে হামলা হয়েছে। কোথাও কোনও জায়গায় মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন—তাকে কেউ বিচার করছেন পার্সোনালি। এই দৃশ্যগুলো নিয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে বা বাইরে- আমরা দেখেছি এই বিশ্লেষণে যেতে যে এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে বাংলাদেশ উগ্রপন্থিদের হাতে চলে গেছে বা বাংলাদেশ যে উদারপন্থি, সহনশীল জায়গা সেটি এখন নেই। আপনি কী মনে করেন? আপনি কীভাবে এই ঘটনাগুলো বিচার করবেন?
মামুনুল হক: এই ঘটনাগুলো আমি মনে করি, যতটা না ঘটেছে তার চেয়ে বেশি প্রচার হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান বিরোধীরাই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মাজারের ঘটনাটা এক-দুদিন ঘটেছে এবং এটা থেমে গেছে। এটা অতি উৎসাহীরা করতে পারে। হতে পারে এটাকে যারা অনেক বেশি প্রচার করছে তাদের কোনও ইন্ধন থাকতে পারে। সরল মানুষকে উসকে দিয়ে যেকোনও কাজ করা তো কঠিন কোনও কাজ নয়। এ দেশের ইসলামপন্থি মহল, আমরা সবাই কিন্তু এক-দুইটা ঘটনার পর বলেছি—এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সবাই সোচ্চার হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে এই তৎপরতা কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশ যে জায়গায় ছিল সে জায়গা থেকে একটা সহনশীল, মধ্যপন্থি জায়গায় এখন আছে। এর বিপরীতে যারা ওসব বলছে, তারাই মূলত বাংলাদেশকে ব্যর্থ এবং অকার্যকর রাষ্ট্র করার দুরভিসন্ধি ও পরিকল্পনা থেকে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন?
মামুনুল হক: আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি।
বাংলা ট্রিবিউন: বাংলা ট্রিবিউনকে দীর্ঘ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মামুনুল হক: বাংলা ট্রিবিউন এবং বাংলা ট্রিবিউনের সব পাঠককে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব :
শাপলা চত্বরে নিহতদের তালিকা দেবে হেফাজত, মামলা হবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে