X
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
১৬ বৈশাখ ১৪৩২

‘স্মার্ট অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখবে ব্যাংকগুলো’

গোলাম মওলা
১৩ মে ২০২৪, ১৮:২০আপডেট : ১৩ মে ২০২৪, ১৯:০৭

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট লেনদেনে মনোযোগ দিচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রোডাক্টস অ্যান্ড সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের ক্যাশলেস পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাংকটি এগিয়ে রয়েছে। স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ইসলামী ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা প্রদান বৃদ্ধি করা হবে বলে জানালেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নে অচিরেই ডিপোজিট অটোমেশন, পর্যায়ক্রমে ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পেমেন্ট পরিচালিত হবে। স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ইসলামী ব্যাংক ডিজিটাল সেবা বাড়াবে।

বাংলা ট্রিবিউন: স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নে ব্যাংকিং খাত কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: স্মার্ট অর্থনীতি একটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির রূপরেখা। এই রূপরেখা বাস্তবায়নে ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নে ব্যাংকের গ্রাহক হবেন ফাইভ-জি ইন্টারনেট, শতভাগ মোবাইল ও উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা একটি শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেনের সূচনা করবে। ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা প্রদান, ডিপোজিট অটোমেশন, ক্লাউডভিত্তিক ক্ষমতা বৃদ্ধি, চতুর্থ বিপ্লবের প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট অর্থনীতি" ত্বরান্বিত হবে। ব্যাংক একটি ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতের স্মার্ট অর্থনীতির ব্যাংকিং সিস্টেমে আজকের মতো ব্রাঞ্চভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। ব্যাংক কেবল লেনদেন সংক্রান্ত ডাটা সংগ্রহ করবে। ব্যাংক একটি রেগুলেটরি গেটওয়ের মতো কাজ করবে। ব্লকচেইন টেকনোলজির কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বহুগুণ বেড়ে যাবে। একটি শতভাগ নিরাপদ, ক্যাশলেস আর্থিক ব্যবস্থা, স্মার্ট অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় ব্যাংকগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

বাংলা ট্রিবিউন: মোবাইল অ্যাপ দিয়ে লেনদেন হচ্ছে, কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট হচ্ছে। বলা চলে মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন হাতের মুঠোয় এসেছে।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ সব কিছুকে সহজ করে দিয়েছে। মোবাইল অ্যাপ দিয়েই কেনাকাটা, বিল পেমেন্ট, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট এমন নানামুখী ডিজিটাল লেনদেন জীবনে এনে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য। নগদ টাকা বহনের আর ঝামেলা নেই। আর প্রতিটি লেনদেনে থাকছে ডিজিটাল রেকর্ড। গ্রাহক প্রয়োজন মতো যেকোনও সময় তা ব্যবহার করতে পারছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মানুষ এখন কার্ডের পরিবর্তে মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কিউআর কোড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন একটি অ্যাপভিত্তিক বহুমুখী ব্যাংকিং সেবা। বর্তমানে গ্রাহক এই অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটা থেকে শুরু করে পরিষেবা বিল, ক্রেডিট কার্ড বিল, বাস ও ট্রেনের টিকিট কাটার মতো কাজ অনায়াসেই সেরে নিচ্ছেন ।

বাংলা ট্রিবিউন: আমরা কতটুকু ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ক্যাশলেস লেনদেন বলতে আমরা বুঝি ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার, কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ও এমএফএস-এ লেনদেন। তবে এমএফএস-এর লেনদেন এখনও পুরোটা ক্যাশলেস হয়ে ওঠেনি। টাকা জমা করতে গ্রাহকদের এখনও নগদ টাকা নিয়ে এজেন্টদের কাছে যেতে হচ্ছে। আবার সমপরিমাণ নগদ টাকাও এজেন্ট থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এক পরিসংখ্যান মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এমএফএস-এর মাধ্যমে এক লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও ক্যাশলেস লেনদেন হয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এমএফএস দিয়ে কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ আর পরিষেবা বিল পরিশোধ হচ্ছে কেবল ক্যাশলেসে। একইভাবে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয় প্রায় ৩৯ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত ক্যাশলেস তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কারণ, কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা বেশি উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কার্ডের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেলস ও ই-কমার্সে যে কেনাকাটা হয়, তা ক্যাশলেস লেনদেন।

সরকারি বেতন ভাতা, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেন ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া হয়, যা এক প্রকার ক্যাশলেস লেনদেন। প্রতিমাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে লেনদেন প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। আমরা একটি ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছি। তবে তা শতভাগ করতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাশলেস সমাজ গড়ে উঠতে কতদিন লাগতে পারে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ১০টি ব্যাংক, ৩টি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা এবং তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমকে এ কাজে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে। 'সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে প্রথমে মতিঝিল এলাকায় চা-দোকান, মুদি দোকান, হোটেল, মুচিসহ ভাসমান বিক্রেতাদের কিউআর কোড সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বিভিন্ন বিভাগীয় শহরকে এর আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে এই সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫ শতাংশই লেনদেন ক্যাশলেস হবে বলে গভর্নর আশা ব্যক্ত করেছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক। স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে নতুন করে কী কী সেবা চালু করবে ইসলামী ব্যাংক?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকের অবদান অনেক। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা অপরিসীম। স্মার্ট অর্থনীতি গড়তে ইসলামী ব্যাংকে ডিজিটাল সেবা প্রদান বৃদ্ধি করা হবে, যার মধ্যে ডিপোজিট অটোমেশন, পর্যায়ক্রমে ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), বিগ ডাটা অ্যানালাইসিস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পেমেন্ট পরিচালিত হবে।

ব্লকচেইন যেহেতু একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ নিরাপদ প্রযুক্তি, ব্যাংক পর্যায়ক্রমে এই টেকনোলজি গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। স্মার্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে এবং স্মার্ট ব্যবস্থায় সব হিসাবধারীর ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল স্বাক্ষর থাকবে, যার মাধ্যমে রিয়াল টাইম ভেরিফিকেশন সম্ভব হবে। ফলে অনলাইনে চুরি ও প্রতারণা থেকে ব্যাংকিং সিস্টেম নিরাপদ থাকবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাশলেস লেনদেনে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিনের ভূমিকা যদি বলেন।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: সেলফিন একটি দ্রুত, নিরাপদ এবং কার্যকর ইনস্ট্যান্ট প্রি-পেইড ভার্চুয়াল ভিসা বা মাস্টার কার্ডযুক্ত স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ। সেলফিন ব্যবহার করে গ্রাহক ক্যাশলেস লেনদেন, যেমন- রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা, ই-কমার্স পেমেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে এমএফএসের (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস) মতো অ্যাকাউন্ট- এমক্যাশ, বিকাশ ও নগদ নম্বরে সরাসরি টাকা পাঠানো যায়। সেলফিন ব্যবহারের কারণে বর্তমানে নিবন্ধিত ৪০ লাখ গ্রাহক ক্যাশলেস লেনদেনের সুবিধা ভোগ করছেন। সেলফিনের মাধ্যমে বর্তমানে দৈনিক প্রায় দুই লাখ লেনদেন হয়, টাকার হিসাবে যা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যবসায়ী সমাজ কতটা স্মার্ট হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ব্যবসায়ী সমাজ স্মার্ট অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। যেমন- বর্তমানে বেশিরভাগ শপে ব্যবসায়ীরা পিওএস মেশিন দিয়ে লেনদেন করছেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্যের বাজারজাতকরণ, পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য নিবন্ধন গ্রহণ ও পারমিট নেওয়ার কাজ ঘরে বসেই করছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: বৈশ্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ব্যাংক খাত কতটা স্মার্ট হয়েছে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে ব্যাংক অনেক কাজ অটোমেশনে নিয়ে আসছে। ব্যাংকে বর্তমানে অধিকাংশ কাজ হচ্ছে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায়। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ এবং ব্যাংকগুলোর আগ্রহের কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। সত্যিকার স্মার্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে দেশ এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

বাংলা ট্রিবিউন: অচিরেই দেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালু হচ্ছে, এতে প্রচলিত ব্যাংকগুলো কীভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: ডিজিটাল ব্যাংক ও বর্তমান প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে তফাত হচ্ছে, ডিজিটাল ব্যাংকের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও স্থাপনা থাকবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনও ওভার দ্য কাউন্টার সেবা দেবে না। এর নিজস্ব কোনও শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তেমন প্রতিযোগিতা থাকবে না। কারণ প্রচলিত ব্যাংকগুলো অনেক আগ থেকেই ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় লেনদেনের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। বরং ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যাংকের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এখনও দেশে মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত। মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে এসেছে আরও ৩০ শতাংশ মানুষ। ডিজিটাল ব্যাংক চালু হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে। প্রচলিত ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংককে প্রতিযোগী হিসেবে দেখে না। বরং ডিজিটাল ব্যাংকের কারণে ব্যাপক আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কি মনে করেন ২০২৭ সালের মধ্যে অর্থনীতির সামগ্রিক লেনদেনকে ক্যাশলেস করার যে লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করেছে, তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্মার্ট অর্থনীতি পূর্ণাঙ্গতা পাবে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: অনেক সীমাবদ্ধতার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক জায়গা সত্যিকারের ডিজিটাল রূপান্তর হয়েছে। এ জায়গায় একটা বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর। মোবাইল ফোনের বিপুল প্রসারের কারণে আমরা দ্রুত ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আগামীতে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হবে। তখন মানুষের ক্যাশলেস ট্রানজেকশন আরও বাড়বে। ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠার যে যাত্রা, তা স্মার্ট অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে পুরোপুরি না হলেও ৭৫ শতাংশ লেনদেন হবে ক্যাশলেস।

বাংলা ট্রিবিউন: স্মার্ট অর্থনীতির ক্ষেত্রে আপনি কী কী সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: স্মার্ট অর্থনীতি নির্মাণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। স্মার্ট অর্থনীতি নির্মাণে এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশে ৯ মিলিয়ন এসএমই উদ্যোক্তা কৃষি, পণ্য উৎপাদনসহ ব্যবসায়ের বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। জিডিপিতে তাদের অবদান শতাংশ। এসএমই খাতের এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা দেওয়া, ফিনটেক ব্যবহারে নিশ্চিত করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা আশাবাদী যে পর্যায়ক্রমে সফল হবো।

বাংলা ট্রিবিউন: দেশের অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা কেমন?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা ব্যাপক। ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বৃহৎ শিল্প, সিএমএসএমই তথা কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগে যেমন অবদান রেখেছে, তেমনি নির্মাণ খাত, সেবা শিল্প, ভোক্তা বিনিয়োগ, কৃষি খাত, মৎস্য খাতে বিশেষ অবদান রাখছে। ইসলামী ব্যাংক বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে, আবার কনভেনশনাল পদ্মা ব্যাংক সম্প্রতি শরিয়াভিত্তিক একটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হয়েছে। এতেও বোঝা যাচ্ছে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইসলামি ব্যাংকগুলো ভালো করছে। এর পেছনে আসল কারণ কী?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ইসলামী ব্যাংকের দিকে ধাবিত হওয়ার মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ, যারা সুদমুক্ত ব্যাংকিং লেনদেনে আগ্রহী। তাছাড়া, ইসলামী ব্যাংক একটি কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা হওয়ায় গ্রাহকের কাছে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইসলামী ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ ধারার ১০টি ইসলামী ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোও যুক্ত হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে। অনেক ব্যাংক তো বিশেষায়িত শাখা ও উইন্ডোর মাধ্যমে চালাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম।

বাংলা ট্রিবিউন: রেমিট্যান্স, আমদানি, রফতানি, আমানত বৃদ্ধি, বিনিয়োগে ইসলামী ব্যাংকের অবদান কতটুকু।

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: রেমিট্যান্স, আমদানি, রফতানি, আমানত বৃদ্ধি ও বিনিয়োগে ইসলামী ব্যাংকের সাফল্য অনেক। ইসলামী ব্যাংক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম ব্যাংক, যার ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আমানত ছিল ১৫৩,৪৩০ কোটি ও বিনিয়োগ ছিল ১,৫০,৪৭২ কোটি টাকা। আমদানি-রফতানিতেও ইসলামী ব্যাংকের অবদান ব্যাপক।২০২৩ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি ছিল ৫৭,৩৪১ কোটি আর রফতানি ছিল ৩৩,৮০৬ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স আহরণে ইসলামী ব্যাংকের অর্জন সারা দেশে প্রথম। বিগত বছরে ৫৬,৬১২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স আহরণ করে ইসলামী ব্যাংক, যা সারা দেশে আহরিত রেমিট্যান্সের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বাংলা ট্রিবিউন: ইসলামী ব্যাংকের বদৌলতে অর্থনীতির কোন কোন সেক্টর আজও শক্তিশালী হয়ে আছে?

মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা: বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণে ইসলামী ব্যাংকের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিগত বছরে সারা দেশে আহরিত রেমিট্যান্সের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক রেমিট্যান্স আহরণ করে ২৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের। দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৬ শতাংশ ও টেক্সটাইল খাতের ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ২ হাজারের বেশি কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে। দেশের ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার বিকাশ ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। পল্লি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক এ পর্যন্ত দেশের ৩৩ হাজার গ্রামের প্রায় ১৭ লাখ প্রান্তিক পরিবারের মাঝে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যার ৯২ শতাংশ সুবিধাভোগী হচ্ছেন নারী।

৪০ বছরের পথচলায় ইসলামী ব্যাংক সবসময়ই আপন মহিমায় উজ্জ্বল। এ ব্যাংক জনসাধারণের আস্থা ও ভালোবাসায় সদা অগ্রসরমাণ। এই ব্যাংকে সবার গচ্ছিত আমানত সবচেয়ে নিরাপদ এবং ব্যাংকের বিনিয়োগও প্রয়োজনমুখী খাতের জন্য অবারিত। আগামী দিনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ অবদান রেখে যাবে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এবার নিলামে এস আলম গ্রুপের স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভোজ্যতেল কারখানা
ভবনসহ এস আলমের ১১ একর জমি নিলামে, উদ্ধারের লক্ষ্য ৯৯৪৮ কোটি টাকা
ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুনিরুল মওলাকে বাধ্যতামূলক ছুটি
সর্বশেষ খবর
স্কুল শেষে শিশুদের ক্যাম্পে গাড়ি ঢুকে নিহত ৪
স্কুল শেষে শিশুদের ক্যাম্পে গাড়ি ঢুকে নিহত ৪
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু
আজ আর্সেনাল-পিএসজি দ্বৈরথ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সেমিফাইনালআজ আর্সেনাল-পিএসজি দ্বৈরথ
উত্তর আমেরিকায় দারুণ সূচনা
উত্তর আমেরিকায় দারুণ সূচনা
সর্বাধিক পঠিত
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
মানবিক করিডোরের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে সরকার
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
পর্যটককে মারধর করে ২৪ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন বিএনপি নেতারা
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন ১৪ বছরের বৈভব
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে ইমামকে গণপিটুনি, কারাগারে মৃত্যু
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়
আদালতে সাবেক আইনমন্ত্রীকে কিলঘুষি, বাধা না দিয়ে পুলিশের দৌড়