বাংলাদেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) উদ্যোগে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫: বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী, যার আহ্বান হলো— সবাইকে একত্রিত হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষে দাঁড়ানো। যাতে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে সবুজ জ্বালানির পরিমাণ তিন গুণ বাড়াতে পারি।
তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট-২০২৪ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বায়ুদূষণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয় এবং দূষিত শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয় স্থানে। আবার, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণ বিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩ (একিউএলআই-২০২৩)’ এ বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত আইকিউএয়ার -এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ একাধিক বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২১, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয়। একইসঙ্গে ২০২৪ সালে দূষিত শহর হিসেবে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলার বায়ুর মানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর হচ্ছে গাজীপুর। গাজীপুর জেলার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা— যার ব্যাস সাধারণত ২.৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়ে ছোট (পিএম ২.৫), এর পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৮৯.৮ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। এই মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানমাত্রার (অর্থাৎ ৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ১৮ গুণ বেশি এবং নির্ধারিত (বার্ষিক) মান মাত্রার চেয়ে ৬ গুন বেশি।
কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে কমপক্ষে ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বায়ু ও সীসা দূষণসহ বিভিন্ন দূষণ, যা শিশুদের আইকিউ হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এসময় বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—
বায়ুদূষণকারী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি, বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সব স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় আনা, আইইপিএমপি-সহ বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা, সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া এবং গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন প্রমুখ।