X
সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪
১৭ আষাঢ় ১৪৩১

চলছে দূষণের মহোৎসব, অথচ পরিবেশ আদালতে মামলা কমছে

আরিফুল ইসলাম
০৫ জুন ২০২৪, ১১:০৪আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ১১:৪০

রাজধানীসহ সারা দেশে পরিবেশ দূষণের যেন মহোৎসব চলে বছরজুড়ে। তবে পরিবেশ অধিদফতর ঢাকার পরিবেশ আদালতে মামলা দায়েরের সংখ্যা একবারেই নগণ্য। বর্তমানে ঢাকার পরিবেশ আদালতে পরিবেশ সংক্রান্ত ১১৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পরিবেশের মামলা কমতে থাকায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের মামলা দিয়ে এই আদালতকে সচল রাখা হয়েছে। আদালতটিতে যেখানে পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা মাত্র ১১৫টি, সেখানে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ৯ হাজার ৬৮৯টি।

পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যর্থ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখনও তলানির দিকে। এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০২৪ অনুসারে ২৩ দশমিক ১০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে নিচ থেকে চতুর্থ স্থানে (১৭৭)। বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা একমাত্র দেশে হচ্ছে হচ্ছে ভিয়েতনাম (২০ দশমিক ১০), মিয়ানমার (১৯ দশমিক ৪০) ও ভারত (১৮ দশমিক ৯০)। ১১টি ইস্যুতে ৫৮টি পারফরমেন্স ইনডিকেটরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবছর মার্কিন ইয়েল ইউনিভার্সিটি এই র‌্যাংকিং প্রকাশ করে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার (৫ জুন) সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালন করা হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য— ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা।’

এমন পরিস্থিতিতেও পরিবেশ আদালতে মামলা উল্টো কমছে। ২০০২ সালে ‘পরিবেশ আদালত আইন’ প্রণীত হলেও ২০০৩ সাল থেকে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছর ২০০৩ সালে মামলা হয় ১৭টি, ২০০৪ সালে ৭২টি, ২০০৫ সালে ২৩টি, ২০০৬ সালে ৩৭টি, ২০০৭ সালে চারটি, ২০০৮ সালে ৯৭টি, ২০০৯ সালে ৮২টি এবং ২০১০ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ৬০টি।

এছাড়া ২০১১ সালে মামলা হয় ৩৩টি, ২০১২ সালে ২৪টি, ২০১৩ সালে ৯টি, ২০১৪ সালে ৯টি, ২০১৫ সালে ১১টি, ২০১৬ সালে ৪টি, ২০১৭ সালে ৫টি, ২০১৮ সালে ১৯টি, ২০১৯ সালে ৩টি, ২০২০ সালে ২৯টি, ২০২১ সালে ১৯টি, ২০২২ সালে ১৯টি এবং গতবছর ২০২৩ সালে ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে।

আদালতের রেজিস্ট্রারের হিসেবে অনুযায়ী গত ২১ বছরে মোট মামলা হয়েছে ৫৮৭টি হয়েছে। যার মধ্যে মধ্যে ৪৭২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অধিকাংশ মামলার আসামিরা দণ্ডিত হয়েছেন।

২০০৩ সাল থেকে গত ২১ বছরে দায়ের হওয়া ৫৮৭টি মামলার মধ্যে ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে মাত্র ১৬১টি মামলা দায়ের হয়েছে। অথচ ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ৪২৬টি মামলা দায়ের হয়। অর্থাৎ দিন দিন ঢাকার পরিবেশের অবস্থা খারাপ হলেও মামলা দায়ের কমছে।

কেন পরিবেশ আদালতে মামলা হচ্ছে না— খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে’ শুধু বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি বা পরিবেশ অধিদফতরেরই মামলা করার অধিকার ছিল। তবে ২০১০ সালের সংশোধনীতে তা পরিবর্তন করা হয়। ফলে ২০১০ সালে এই আইন সংশোধনের পর যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মামলা করতে পারে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৭ ধারা মোতাবেক কোনও ব্যক্তির কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হলে উক্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তা আদায়ের বিধান রয়েছে। এটি ‘পলুটারস পে প্রিন্সিপাল’ নামেও বহুল পরিচিত। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ সংরক্ষণে এর বহুল প্রয়োগ লক্ষণীয়। 

তবে দেশে সাধারণ মানুষের এই আইন সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই। সেকারণে এই আইনে মামলা হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, ‘মানুষ পরিবেশ দূষণ বিষয়ে এখনও সেভাবে সচেতন হয়ে ওঠেনি। এসব কারণে আদালতে মামলা কম হচ্ছে। এছাড়াও কেউ দূষণ করলে পরিবেশ অধিদফতর সরাসরি দণ্ড প্রদান করতে পারেন। এই ক্ষেত্রেই বিষয়টি আর আদালত পর্যন্ত গড়ায় না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ আদালত আইনে এখন সংশোধন এসেছে। সংশোধিত পরিবেশ আইনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জনগণ সরাসরি মামলা করতে পারবেন। আগে শুধু বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি বা পরিবেশ অধিদফতরই মামলা করতে পারতো।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জানে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদালতে মামলা কম হলেও পরিবেশ অধিদফতর প্রতিদিনই প্রায় পরিবেশ দূষণ, পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা এবং পলিথিন উৎপাদন ও বিক্রির জন্য জরিমানা দণ্ড করছেন। ঠিক কী কারণে মামলা কম হচ্ছে এটা আমাদের জানা নেই। পরিবেশ আদালতে মামলা হওয়া মাত্র রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করা হয়। আর যারা প্রকৃতি অপরাধী তাদের শাস্তির আওতায় এনে পরিবেশ দূষণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এদিকে পরিবেশ আদালতে আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মো. রাজিব হাসান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই আদালতে এমনিতেই মামলার সংখ্যা কম। যে কয়টি মামলা হয় তাদের মধ্যে অধিকাংশ মামলায় কারাদণ্ড ও জরিমানা হচ্ছে। দণ্ডের মাধ্যমে আদালত আসামিদেরকে পরিবেশ দূষণে নিরুৎসাহিত করেন।

২০১০ সালের সংশোধনী অনুযায়ী প্রথম বার কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠনের অবৈধভাবে পলিথিন উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ২ বছর কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রথমবার অবৈধভাবে উৎপাদিত পলিথিন বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ১ বছর কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়বার কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একই অপরাধ করলে দণ্ড সবনিম্ন ২ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর অথবা সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার  বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে পরিবেশের ছারপত্র ছাড়া কারখানা পরিচালনার জন্য ২ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

এছাড়া পরিবেশ দূষণের জন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

/এফএস/ইউএস/
সম্পর্কিত
এএসপি আনিস হত্যা মামলায় ভাইয়ের সাক্ষ্য
পরীমণির মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি
বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে মতিউরের স্ত্রীর আবেদন 
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১০ পদক্ষেপ
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১০ পদক্ষেপ
বাড়ির আঙিনায় পাওয়া অজগর ছাড়া হলো বনে
বাড়ির আঙিনায় পাওয়া অজগর ছাড়া হলো বনে
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সওজের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সওজের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ‘খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি’ গঠন
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ‘খান সারওয়ার মুরশিদ জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি’ গঠন
সর্বাধিক পঠিত
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
নরসিংদীতে সাপের কামড়ে ১৪ জন হাসপাতালে
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বললেন গবেষক ড. ফরিদ আহসান
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিস্থিতি দেখে’ সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষামন্ত্রী
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পরিস্থিতি দেখে’ সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষামন্ত্রী
পরীক্ষার্থীদের বোরকা-হিজাব পরায় বাধা, অভিযোগ বায়তুল মোকাররম খতিবের
পরীক্ষার্থীদের বোরকা-হিজাব পরায় বাধা, অভিযোগ বায়তুল মোকাররম খতিবের
সংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন
প্রতিবাদলিপির বিষয়ে বললেন এসবি প্রধানসংবাদ প্রকাশের আগে যাচাইয়ের অনুরোধ করেছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন