বেসাকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে দায়ের করা বেশকিছু মামলায় সমন্বয়হীনতা বা অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আসক বলছে, এসব মামলায় আসামি গ্রেফতারের নামে হয়রানির অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করায় ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দায়ের করা মামলাগুলো। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সংস্থাটির সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের পাঠানো বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা করার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। তবে
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলায় কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আসামি করা হলে, তা মানবাধিকারের পরিপন্থি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতাদের গোয়েন্দা হেফাজতে আটক রাখার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বরেণ্য মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না আদালতে আইনগত পদক্ষেপ নেন। অথচ তাকেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিব। এ ঘটনায় মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন মামলা দায়ের করেন, একই ঘটনায় মো. মাছুম বিল্লাহ নামের এক ব্যক্তিও মামলা দায়ের করেছেন। বাদীর সঙ্গে ভিকটিম পরিবারের কোনও পূর্ব পরিচয় নাই বলে নিহতের বাবা দাবি করেছেন, যা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সম্প্রতি একটি মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করাই আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা কখনও কখনও আইনকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের হয়রানির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন সময়ে ‘গায়েবি’ মামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়েও ‘গায়েবি মামলা’ ফিরে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা, ঘটনাস্থলে কখনোই উপস্থিত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কিছু মামলার এজাহার ও আসামি একই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই- আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি অপরাধের বিচার করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেভাবে ঢালাও মামলা হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। হত্যা মামলার বিচার হয় সুষ্ঠু তদন্ত, সাক্ষ্য প্রমাণ ও আলামতের ভিত্তিতে। অথচ অনেক মামলায় আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে, অথবা ভিন্ন উদ্দেশ্যে। কেননা, মামলায় এমন অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যার সঙ্গে ঘটনার ন্যূনতম সম্পর্ক নাই।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নাই, এমনকি বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত এবং গণমাধ্যমকর্মী যারা আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনতিবিলম্বে তদন্তসাপেক্ষে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে হবে।