আইনের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করেছিল তৎকালীন (আওয়ামী লীগ) সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে উচ্চ আদালতে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশনা অনুসারেই প্রতিবেদনটি দাখিল করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
প্রতিবেদনটি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়, আদানির সঙ্গে নিয়ম মেনেই বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়েছিল।
প্রধান প্রকৌশলী প্রাইভেট জেনারেশন (আইপিপি) এবিএম জিয়াউল হককে প্রধান করে গঠন করা একটি তিন সদস্যের কমিটি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ওই কমিটিতে অপর দুই সদস্য ছিলেন পিডিবির কোল পাওয়ার জেনারেশন পরিদফতরের পরিচালক মো. রুকন উদ্দিন এবং কোল পাওয়ার জেনারেশন পরিদফতরের উপপরিচালক মো. নাজমুল হক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাইকোর্ট এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা প্রতিবেদনটি তৈরি করে পাঠাই। পরে মন্ত্রণালয় হাইকোর্টে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে।’
এই প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে— বিল্ট ওন অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে ভারতের গড্ডা, ঝাড়খণ্ডে ১৪৯৬ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে আদানি পাওয়ারের প্রস্তাব বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০১৫ (পরবর্তীকালে বাতিলকৃত)-এর অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করেছে। প্রতিবেদনেটিতে বলা হয়, আদানি চুক্তির ক্ষেত্রে কোনও অসামঞ্জস্য পায়নি কমিটি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ বিধান ২০১৫ বাতিল করে। অভিযোগ ছিল, সাবেক সরকার (আওয়ামী লীগ) বিনা দরপত্রে চুক্তির মাধ্যমে বিপুল দুর্নীতি করেছে। এছাড়া দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়টিও চুক্তিতে উপেক্ষিত বলে সমালোচনা ওঠে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা মহলের আলোচনার মধ্যে বিষয়টি আদালতে গড়ালে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি গঠনসহ তিন দফা নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির সব নথি ও প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
ওই চুক্তির বৈধতা নিয়ে করা রিট ও সম্পূরক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৯ নভেম্বর রুলসহ আদেশ দেন। এরপর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর পিডিবির এই কমিটি আদানির বিষয়ে রিপোর্ট দাখিল করে।
এই ধারাবাহিকতায় কোল পাওয়ার জেনারেশন পরিদফতর বিউবো, ঢাকার পরিচালক মো. রুকন উদ্দিন, উপ-পরিচালক (নির্বাহী প্রকৌশলী) মো. নাজমুল হক এবং প্রধান প্রকৌশলী, প্রাইভেট জেনারেশন (আইপিপিপিপিপি) এবিএম জিয়াউল হকের সই করা একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে আসে।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আব্দুল কাইয়ুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদানির সঙ্গে চুক্তিতে ভারতের আইন ও রাজনৈতিক পরিবর্তন জনিত কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলেও বাংলাদেশকে টাকা পরিশোধ করার শর্ত ছিল। এমন কিছু বিতর্ক ও দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে রিটটি দায়ের করা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বিদ্যুৎ বিভাগ চুক্তির প্রক্রিয়াটি আদালতকে জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আগামী মাসে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন আসবে। সেখানে বিস্তারিত থাকবে বলে আশা করছি।