পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ জসিম উদ্দিনের কলেজপড়ুয়া মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। রবিবার (২৭ এপ্রিল) মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর সই করা এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে, পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে একজন শহীদের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ মেয়েটি তার বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়ি ফিরছিল। পথে অভিযুক্ত সাকিব ও সিফাত তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সাকিব ও সিফাত ওই মেয়েটিকে রাস্তা থেকে তুলে তার মুখ চেপে ধরে পাশের বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা ওই মেয়েটিকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে না জানানোর জন্য ধর্ষণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। বর্তমানে অভিযুক্তরা জামিন পাওয়ায় মেয়েটি কিছুদিন হতাশ ছিল। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর আদাবরের শেখেরটেকের বাসায় মেয়েটি ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মহিলা পরিষদ জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও কন্যার প্রতি ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তাঘাটে চলাচলের পথে নারী ও কন্যারা দলবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হচ্ছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে, যার ফলে তাদের নিরাপত্তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে-বাইরে চলাচলের পথে নারী ও কন্যাশিশুরা কোথাও নিরাপদ নয়। সংঘটিত এসব ঘটনা তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করছে এবং তাদের অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ উপরোক্ত ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানায়। সেই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে নারী এবং কন্যার প্রতি সহিংসতার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, একইসঙ্গে নারী ও কন্যার নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে আশু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে নারীর প্রতি সব প্রকার সহিংসতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।