হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে চোরাকারবারিরা। স্বর্ণসহ অবৈধ পণ্য বিমানবন্দর দিয়ে পার করাতে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। প্রায়শই তাদের এই নতুন নতুন কৌশল ধরা পড়ছে। তাদের এমন নিত্যনতুন কৌশলে হতবাক খোদ কাস্টমসের কর্মকর্তারাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকি দিতে এমন তৎপরতা আগে চোখে পড়েনি। আগে যেমন লাগেজ, শরীর কিংবা ফ্লাইটের সিট ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন রোগী সেজে, কিংবা স্বর্ণ গুড়া করে সেগুলো অন্য কোনও পদার্থ উল্লেখ করে পার করার যে অভিনব চেষ্টা করা হচ্ছে; সেটি দেখে অবাক-ই হতে হয়। তবে আমাদের এখন যে নজরদারি তা এড়িয়ে মালামাল বাইরে নেওয়া চোরাকারবারিদের জন্য কঠিন। এ কারণে তাদের নিত্য নতুন কৌশল কাজে আসছে না, ধরা পড়ছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবৈধ পণ্য ও স্বর্ণ ধরা পড়ছে এই কারণে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে আমরা বলেছি, অবৈধ পণ্য যেন কোনোভাবেই বের হতে না পারে; সেই মোতাবেক তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।’
প্রিভেনটিভ টিমের কর্মকর্তারা তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, ‘এছাড়াও আমাদের গোয়েন্দা সোর্স আরও বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে চোরাকারবারিরা অভিনব কৌশলগুলো যেভাবে কাজে লাগাতে চাইছে, তাতে করে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা তাদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘কাস্টমসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিমানবন্দরে অন্য সংস্থার লোকজনও আমাদের সহায়তা করছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এসব কাজ করতে সক্ষম হচ্ছি।’
বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, গত শুক্রবার প্রায় আড়াই কেজি ‘গলিত স্বর্ণ’ পাচারের চেষ্টা করা হয়। অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হয়েছে, আটক হয়েছে কাস্টমসের হাতে।
এদিন এক যাত্রী দুবাই থেকে সিলেট (ফ্লাইট-বিজি২৪৮) হয়ে সকাল সোয়া ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় প্রিভেন্টিভ টিমের কর্মকর্তারা তাকে অনুসরণ করতে থাকে। গোপন সংবাদ আসে যাত্রী স্বর্ণ গলিয়ে বা পেস্ট আকারে তার পরিধেয় পোশাকের মধ্যে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমন খবরে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে যাত্রীর পোশাক খুলে হাতে নিলে স্বাভাবিকের থেকে ওজন বেশি মনে হয় টিমের সদস্যদের কাছে। পরে তার পরিধেয় চারটি আন্ডার গার্মেন্ট, একটি ফুলপ্যান্ট ও তিনটি টি-শার্ট আগুনে পুড়িয়ে ও অন্যান্য কৌশলে গলিয়ে বা পেস্ট আকারে থাকা স্বর্ণসদৃশ বস্তু পাউডার আকারে ২ কেজি ৫৬০ গ্রাম (ডাস্টসহ) পরিমাণ উদ্ধার করা হয়।
পরে কাস্টমস এবং অন্যান্য এজেন্সির সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এবং আটক করা ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা প্রদানের সময় সুবিধার্থে পাউডার আকারের স্বর্ণকে নাইট্রিক অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা গলিয়ে ২৪ ক্যারেটের পরিশুদ্ধ পাঁচটি স্বর্ণপিণ্ড ও কিছু গুঁড়ায় পরিণত করা হয়। এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কাস্টমস কর্মকর্তা বরুণ দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় শার্ট, প্যান্ট ও আন্ডার গার্মেন্টে স্বর্ণ পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল, তাতে আমরা অবাক। অর্থাৎ আমাদের তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে এমন কৌশল সচরাচর চোখে পড়েনি। চোরাকারবারিরা যে অভিনব কৌশল ব্যবহার করছে আমরা তা প্রমাণ পাচ্ছি।
তিনি বলেন, এর আগে রোগী সেজে হুইল চেয়ারের ভেতরে করেও অবৈধ পণ্য পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল, ওমরা করে আসা যাত্রীর শরীর থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে স্বর্ণ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। চার্জার লাইটের ভেতরে সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা ও ল্যাপটপের ভেতরে রাখা স্বর্ণ আমরা উদ্ধার করি।
কাস্টমসের এই কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম শরীরের ভেতরে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ১০টি মূল্যবান পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ইদানীং আমরা দেখছি, অভিনব কৌশল করে পাচারের চেষ্টা হচ্ছে। আমরা কমিশনারের স্যারের নির্দেশে যে পরিমাণ নজরদারি করছি তাতে চোরাকারবারিদের জন্য এই নিরাপত্তা ভেদ করে পাচার করা দুরূহ। আমরা অর্থাৎ কাস্টমস, কাস্টমস প্রিভেনটিভ টিম এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে অন্যান্য যে কোন সময়ের তুলনায় নজরদারি এখন অনেক বেশি। আমরা অবৈধ পণ্য যেন কোনোভাবে বেরুতে না পারে তার জন্য বদ্ধ পরিকর।