জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি করা হচ্ছে। অনেকে এ নিয়ে অপব্যাখ্যা করছেন। কিছু লোক ধর্মের নামে ভিন্ন মতাদর্শীদের সরাসরি কতল করার হুমকি দিচ্ছেন, যা দুঃখজনক।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকাল পৌনে ৩টায় রাজধানীর বিজয়নগরে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ইউনিটি হলরুমে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস: ভূমিকা, সংস্কার প্রস্তাব পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘নারী সংস্কার কমিশনের বেশিরভাগ প্রস্তাবের সঙ্গে আমাদের দাবির মিল রয়েছে। বিশেষ করে উত্তারিধকার আইনের যে ধারাগুলোর প্রস্তাব কমিশন দিয়েছে, সেগুলো আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। কিছু কিছু কাজ সরকার চাইলেই পারে। সব ক্ষেত্রেই নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে তা বলা অপ্রয়োজনীয়। জুলাই আহতদের দ্রুত চিকিৎসা ও নারী অধিকার নিয়ে কিছু সমস্যার সমাধান সরকার নিজ উদ্যোগেই করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনকে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখনও যদি আগের মতো আইনি বৈষম্য তৈরি করা হয়, তাহলে জুলাই আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।’
এখনও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বের আট মাস অতিক্রম করলেও ত্বকী, তনু ও সাগর-রুনি হত্যার বিষয়ে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এটাকে আমরা ব্যর্থতা বলতে পারি। পার্বত্য এলাকায় অশান্তি, নারী নিপীড়ন কোনোকিছুতেই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেই। মডেল মেঘনার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। হিমাগার ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা, শিক্ষাকে বাণিজ্যকীকরণ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গোপন চুক্তি উদ্বেগজন। স্টারলিঙ্কের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে, তা জানাতে হবে। জাতীয় সক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের তেল, গ্যাস নিজেরাই ব্যবহার করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রামপালসহ আধিপত্যবাদবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে। যারা আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবেন, তারাও সুস্পষ্ট কোনও নীতিমালা করতে পারেননি। ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে বহুত্ববাদ কায়েম করা সম্ভব নয়।’
সভায় গত আট মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সেক্টরভিত্তিক আলাদা-আলাদা মূল্যায়ন ও নতুন সুপারিশ তুলে ধরেন অন্য বক্তারা।
জুলাই আহতদের চিকিৎসা নিয়ে স্থপতি আরিফুল হক শাওন, সংবিধান ও বিচার বিভাগ নিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিককর্মী বাকি বিল্লাহ, শিল্প ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে শ্রমিক নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস, কৃষি নিয়ে লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, শিক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে ড. হারুন উর রশীদ, পাহাড় ও সমতলের জাতিগোষ্ঠী নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী হেনা চাকমা, নারী ও লৈঙ্গিক বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, অর্থনীতি নিয়ে ঢাবি শিক্ষক মোশাহিদা হক ঋতু এবং হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত।