বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ৬ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) মামলার শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এর আগে এই মামলায় তদন্ত সংস্থার জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে দাখিল করতে আজ চার সপ্তাহ সময় চান চিফ প্রসিকিউটর। এরপর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্র্যাইব্যুনাল সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৫ মে এই মামলায় পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
গত ২১ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছিলেন, ‘জুলাই আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এটিই প্রথম দাখিল করা কোনও তদন্ত প্রতিবেদন এবং আশা করি, এই প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে ট্রাইব্যুনালে প্রথম ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) হিসেবে দাখিল করা হবে।’
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। এই তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। এই তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয়েছে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনকে। যাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন- ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
এই তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়।
গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। জাজ্বল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।