স্থায়ী জাতীয় ভূমি ও কৃষি সংস্কার এবং পরিবেশ সুরক্ষা কমিশন গঠনে ৩৬টি সংস্কার প্রস্তাব জানিয়েছে ১৩ সংগঠন। রবিবার (২০ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘সার্বিক ভূমি ও কৃষি সংস্কারের নাগরিক প্রস্তাবনা উপলক্ষে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে এএলআরডি, নিজেরা করি, টিআই-বি, বেলা, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, ব্লাস্ট, এইচ ডি আর সি, আইন সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বারসিক, নাগরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং কাপেং ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্রের হার জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে ২৩ দশমিক ১৯ শতাংশ আর সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের হিসাব মতে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে এই চরম দারিদ্রের হার ৩৫ শতাংশ। আর পার্বত্য তিন জেলা, চরাঞ্চচল, সমতলে আদি জাতিগোষ্ঠী এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকাতে এই হার আরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠীর এই দারিদ্রের প্রধান কারণ হচ্ছে কৃষিজীবি মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনের কোনও জমি নেই, খাসজমি, খাস জলায় তাদের যে অধিকার থাকার কথা, তাও বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমল থেকে অকার্যকর। অল্প জমির মালিক কৃষিজীবিরা তাদের ফসল-ধান, গম, আলু, সবজি যখন যা উৎপাদন করেন তার ন্যায্য মূল্য তারা পান না। উৎপাদনের ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তারা কৃষি ঋণ থেকে বঞ্চিত হন। নারী কৃষকদের কৃষিতে অংশগ্রহণ ও অবদান ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কৃষিতে তাদের শ্রমই ৭২ থেকে ৭৪ শতাংশ। অথচ জমি, ঋণ, বাজার ব্যবস্থা কোনখানেই তাদের অধিকার স্বীকৃত নয়। বঞ্চনা ও বৈষম্য তাদের পদে পদে বাধাগ্রস্ত করছে।
শামসুল হুদা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আশু করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনার মধ্যে আছে—
১। একটি স্থায়ী জাতীয় ভূমি ও কৃষি সংস্কার এবং পরিবেশ সুরক্ষা কমিশন গঠন।
২। সিএস রেকর্ডসহ নির্ভরযোগ্য রেকর্ড অনুযায়ী খাস জমি এবং নগরের অকৃষি খাস জমির পূর্ণাঙ্গ জেলা-উপজেলা, পৌর এলাকা ও মহানগর-ভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন।
৩। অবিলম্বে খাস কৃষি জমি গ্রামীণ ভূমিহীন, প্রান্তিক কৃষক, কৃষিজীবী দলিত, সমতলের আদি জাতিগোষ্ঠীর ভূমিহীনদের মধ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বন্টনের নির্দেশনা জারি করা।
৪। নারীদের ক্ষেত্রে সক্ষমপুত্র সন্তান থাকার অবৈধ, বৈষম্যমূলক বিধানটি অবিলম্বে বাতিল করা।
৫। কৃষি জমি সুরক্ষা আইন অবিলম্বে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা এবং কৃষি জমি সুরক্ষার কঠোর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৬। ভূমি জোনিং ব্যবস্থা সুচারু রূপে সম্পন্ন করে নগরায়ন, শিল্পায়ন, আবাসন এবং অন্যান্য প্রয়োজনে নিরিখে অকৃষি জমি শনাক্ত করা এবং একই সঙ্গে দুই থেকে তিন ফসলা কৃষি জমিতে যে কোনও সরকারি, বেসরকারি প্রকল্প না করা এবং থাকলে তা বাতিল করা, কৃষি জমিতে আবাসন কিংবা ইটের ভাটা অবিলম্বে উচ্ছেদ করা।
এছাড়া মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবনাও তিনি তুলে ধরেন।
এসময় এএলআরডি'র চেয়ারপারসন খুশী কবির বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এর আগেও কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। আমরা আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কার বিষয়ক একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেবো।
তিনি বলেন, আমরা স্বপ্রনোদিত হয়ে আজকে সরকারের কাছে সংস্কার বিষয়ক ৩৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক উদ্যোগের পরিচালক জাকির হোসেন, বেলা পরিচালক তাসনিম ইসলাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।