কারিগরি শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি আদায়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘শেষবারের মতো সতর্কবার্তা’ দিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, বারবার বলার পরও তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। এসি রুমে বসে বৈঠক করে তাদের এই দাবি বাস্তবায়ন হবে না। তারা এসি রুমের সব বৈঠক বাতিলের দাবি জানান। সময় মতো দাবি মানা না হলে পরবর্তী কর্মসূচি আরও কঠিন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামানের পর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল শেষে ‘মেধা চত্বরে’ আয়োজিত সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সময় মতো দাবি মানা না হলে পরবর্তী কর্মসূচি আরও কঠিন হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে ‘কারিগরি শিক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশের’ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি তাসনীম ইসলাম বলেন, ‘প্রয়োজনে দেশের রেলপথ, সড়কপথ অবরোধ করে দাবি আদায় করবো। আমরা জীবন দিয়ে হলেও কারিগরি শিক্ষার সম্মান রক্ষা করবো।’
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য আর সহ্য করা হবে না। বছরের পর বছর অবহেলা, বঞ্চনার শিকার হয়ে এসেছি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। গাজীপুরের সাবেক শিক্ষার্থীদের বৈঠকের পর কঠোর কর্মসূচি আসবে। রেল অবরোধ, রাস্তা অবরোধসহ সব ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।’
দেশের দক্ষ জনশক্তি গড়ার প্রধান হাতিয়ার কারিগরি শিক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অথচ এই শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে বারবার খেলা করা হচ্ছে। পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষক এবং সচেতন নাগরিকদের আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।'
এ সময় আন্দোলনের অন্য নেতা মাসফিক ইসলামও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি ঐক্য প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—
১. জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে অবৈধভাবে পদোন্নতি পাওয়া ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল ও নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সসীমা নির্ধারণ এবং চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করে একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ডিপ্লোমা পাস শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং যারা নিয়ম ভেঙে নিচু পদে নিয়োগ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ বন্ধ করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের পদে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, বুধবার (১৬ এপ্রিল) শিক্ষার্থীরা ঢাকার সাত রাস্তা মোড়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন। এরপর বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে বৈঠক হলেও সেখানে শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।