মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামে মঙ্গলবার দিনগত রাতে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার জন্য স্বৈরাচারের মুখাবয়ব মোটিফটির নির্মাতা চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ভেতরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বাগছাসের ঢাবি সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল কাদের বলেন, চারুকলায় যখন ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে তখন সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এবার শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আব্দুল কাদের বলেন, আমরা ইন্টেরিম সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, মানবেন্দ্র ঘোষের যে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। মানবেন্দ্র ঘোষসহ সকল শিল্পী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বার বার বলছি, আমরা রাবণ চেঞ্জ করতে চাই না, আমরা লঙ্কার সিস্টেম চেঞ্জ করতে চাই। হাসিনা চলে গেলেও তার দোসররা এখনও সাবোটেজ করছে। আমরা বারবার অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান করছি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ছাত্র ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ন্যাক্করজনক আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম এবং অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানান তারা।
বিবৃতিতে সাদা দলের নেতারা বলেন, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে আগের দিন দষ্কৃতকারীদের দ্বারা চারুকলা নির্মিত ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি ও পায়রার মোটিফ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরও সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ করার মাধ্যমে আনন্দ শোভাযাত্রা পুরো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে ওই একই দুষ্কৃতকারীদের হামলায় গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে চারুকলা অনুষদের বিশিষ্ট অ্যালামনাই শিল্পী ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কারণ তিনি অ্যালামনাই শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে মোটিফ নির্মাণে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেছেন। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ন্যাক্করজনক।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শোভাযাত্রা কার্যক্রমে যুক্ত বেশ কয়েকজনকে ভিনদেশি ফোন নম্বর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা ধরনের কটূ কথা প্রচার অব্যাহতভাবে চলছে। এমতাবস্থায় আমরা ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ বিষয়ে অতি দ্রুত অপরাধীকে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ব্যবস্থা নিয়ে আহ্বান জানাচ্ছি।