ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় চারুকলায় নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকাদের কোনও আবহেলা ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। কোনও ধরনের আবহেলার প্রমাণ পেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে রমনা বটমূলে ‘বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উৎসব উদযাপনে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
চারুকলায় ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব ডিজি বলেন, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে তার তদন্ত হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব কর্তৃক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা এই অনুষ্ঠান উৎসাহ-উদ্দীপনা আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করবো। এ জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র্যাব। আমাদের মোটরসাইকেল পেট্রোল, গাড়ি পেট্রোল, চেকপোস্ট, অবজারভেশন টাওয়ার এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই অনুষ্ঠানটি যাতে সুন্দরভাবে করা যায়, তার সব রকম ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ব্যান্ড শো আছে আজ। কাল সকাল থেকে ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠান হবে। মূল অনুষ্ঠান থাকবে রমনার বটমূলে। এরপর চারুকলা থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হবে। রবীন্দ্র সরোবরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আছে। মানিক মিয়া অভিনিউতে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান আছে। এছাড়া ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় এই অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে। আমরা ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডেও মনিটরিং করছি, যাতে সাইবার ওয়ার্ল্ডে বৈশাখের অনুষ্ঠানের বিষয়ে কেউ অপপ্রচার চালাতে না পারে। বৈশাখের আয়োজনে ব্যাপক জনসমাগম হয়। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার পাশাপাশি মা, বোন, শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তার দিকে আমরা বিশেষ নজর রাখবো। যাতে কোন ধরনের ইভটিজিং না হয়।’
এ সময় তিনি সাধারণ জনগণের প্রতি র্যাবকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে চাই। আমরা আমাদের নিরাপত্তাবলয় বিস্তৃত করবো সব জায়গায়।’
নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মাথায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তখনও নিরাপত্তার প্রশ্ন এসেছিল। পূজা হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। আমরাও হিন্দু ধর্মের নেতৃস্থানীয় যারা আছেন, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি, তাদের আশ্বস্ত করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর খুব সুন্দরভাবে পূজা উৎসবটি সম্পন্ন হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশে এবং নিরাপত্তার দিক থেকে কোনও ধরনের সমস্যা হয়নি। এরপর বিজয় দিবস, বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রমজান ও ঈদ সবগুলোই আমরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। আমার মনে হয় পূর্ববর্তী যেকোনও বছরের তুলনায় এবারের সবগুলো অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় আমরা নববর্ষের অনুষ্ঠানও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশা করি।’
রমনা বটমূলে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভেতর আমাদের ফুট পেট্রোল থাকবে, সাদা পোশাকে নজরদারি থাকবে, রাস্তায় আমাদের মোটরসাইকেল গাড়ির টহল থাকবে। এই ভ্যালুটিকে আমরা সুইপিং করবো। আমাদের ডগ স্কোয়াড আছে বোম ডিসপোজাল ইউনিট আছে। সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি এবং নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা হবে না।’