আমদানি নিষিদ্ধ হলেও ই-সিগারেট ‘ভ্যাপ’ আনার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির চীন ফেরত যাত্রী। গত জানুয়ারিতে দেশে ভ্যাপ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরই বিমানবন্দরে সতর্কতা বাড়ায় কাস্টমস। গত তিন মাসে প্রায় লক্ষাধিক পিস ভ্যাপ জব্দ করা হয়। এরপরও চীন ফেরত যাত্রীরা চেষ্টা করছে আমদানি নিষিদ্ধ এই ই-সিগারেট আনার।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেনটিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে ভ্যাপ আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর আমরা বাড়তি নজরদারি শুরু করি। ভ্যাপ সাধারণত চীন থেকে আমদানি করা হয়। সে কারণে আমরা চীন ফেরত যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজরদারি করি।’
তিনি বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধের পরও আমরা ভ্যাপ নিয়ে আসার একটি চেষ্টা লক্ষ্য করছি। আমাদের নজরদারির কারণে গত তিন মাসে প্রায় লক্ষাধিক পিস ভ্যাপ জব্দ করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু ভ্যাপের ক্ষেত্রে নয়, আমদানি নিষিদ্ধ প্রতিটি পণ্যের ওপরই আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমদানি নিষিদ্ধ কোনও পণ্যই বিমানবন্দর হয়ে দেশে ঢুকতে পারবে না, এমন কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চীন থেকে আসা কিছু যাত্রী নিয়মিত ভ্যাপ আনার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও কুরিয়ারের মাধ্যমে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটি যেহেতু আমদানি নিষিদ্ধ তাই নানা কৌশল অবলম্বনেরও চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে প্রায়ই ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। আর ভ্যাপ যেহেতু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে বিশেষভাবে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করছেন। এ কারণে যারাই এই পণ্য আনার চেষ্টা করছে তারাই ধরা পড়ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের পর ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২৪’ সংশোধন করে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় ই-সিগারেট অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩১ ডিসেম্বর আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরদিন তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
ওইদিন বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ রাখতে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, মিশর, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, লেবানন, কুয়েত, ওমানসহ পৃথিবীর অন্তত ৪০টি দেশে ভ্যাপ নিষিদ্ধ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘ক্যানসার উৎপাদনকারী বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থও ই-সিগারেটে পাওয়া গেছে। ই-সিগারেট থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর ধোঁয়া ফ্রি রেডিক্যালস এবং ফুসফুসে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। হিটিং এলিমেন্ট যে তরল জুসের মতো থাকে, সেটা এরোসলে রূপান্তর হয়। আর এই হিটিং এলিমেন্টের ফলে বিষক্রিয়ার পথটা সুগম হয়। ওটার মধ্যে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের ওপর পরিচালিত কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট নেওয়ার পর তাদের ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ডের ওপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সেখানে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়েছে। আর তারা পরবর্তীকালে নানা ধরনের রোগাক্রান্ত হয়েছেন।’