ঈদের ছুটিতে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়েছেন লাখো মানুষ। ফলে ঈদের আগের দিনেই ফাঁকা হয়ে গেছে ঢাকা। দীর্ঘ সরকারি ছুটিতে এবার আগেই পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি গেছেন অনেকে। ফলে ঈদের একদিন আগেই কর্মব্যস্ত এই শহর অনেকটাই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঘরমুখো মানুষের ভিড়। যারা এখনও ঢাকা ছাড়েননি, তারা শেষ মুহূর্তের ছুটছেন কমলাপুর, গাবতলী, সদরঘাট কিংবা মহাখালী বাস টার্মিনালের দিকে। তবে বেশিরভাগ মানুষ আগেই শহর ছেড়ে যাওয়ায় এই চাপ অনেকটাই কমে এসেছে।
এদিকে শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোর অবস্থা এখন একেবারেই আলাদা। যেখানে প্রতিদিন গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যেতো, সেখানে এখন স্বাভাবিক গতিতে চলছে যানবাহন। অফিসপাড়া প্রায় জনশূন্য, ফুটপাতেও নেই কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড়। বিপণিবিতানগুলোতে ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষ, ফলে কিছু কিছু এলাকার দোকানপাটেও তেমন ভিড় নেই।
তবে ঈদের দিনে কিছু মানুষ ঢাকায় থাকছেন। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের পাশাপাশি হাসপাতাল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংবাদকর্মী ও জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। রিকশাচালক ও পরিবহন শ্রমিকদের কেউ কেউ ঢাকায় থেকে যাত্রী পরিবহন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, ঢাকার এই ফাঁকা পরিবেশকে উপভোগ করছেন যারা শহরে রয়ে গেছেন। যানজটমুক্ত রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন তারা। অনেকে পরিবার নিয়ে বের হচ্ছেন ঘুরতে।
মিরপুরের বাসিন্দা মজুন আমিন বলেন, ‘সবার ঈদ আনন্দ শুরু হয় গ্রামে যাওয়ার পর। আর আমদের ঈদ আনন্দ শুরু হয় ঢাকা ফাঁকা হওয়ার পর। ফাঁকা ঢাকা দেখতেই ভালো লাগে, চারদিকে কোনও শব্দ নেই, ধাক্কাধাক্কি নেই; শান্তি শান্তি ভাব আসে।
বনশ্রীর বাসিন্দা শরিফ আহমেদ বলেন, ‘এটা তো স্বাভাবিক, ঈদে ঢাকা ফাঁকা হবে। আর এই ফাঁকা ঢাকাতেই যারা স্থানীয়, তাদের ঈদ আনন্দ।’
আগারগাঁও যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি ঈদে ঢাকায় থাকি। আমার পরিবার গ্রামে চলে যায়। নতুন রিকশা চালকরা আবার ফাঁকা ঢাকায় সুবিধা করতে পারে না। আমরা যারা দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকি, তারা এরকম ফাঁকা ঢাকা দেখে অভ্যস্ত। আর ঈদ ঢাকায় রিকশা চালিয়ে আরাম আছে যেমন, মোটামুটি আয়ও হয়।’
অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে গেলেও যারা ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা বিভিন্ন কারণে গ্রামে যেতে পারেননি, তাদের জন্য বাজার ও মার্কেটগুলোতে এখনও কিছুটা ব্যস্ততা দেখা গেছে। নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, বসুন্ধরা সিটি, জামান শপিং মল ঘুরে চাঁদ রাতেও কিছু ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও অন্য সময় ব্যস্ত নগরবাসী এদিন কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন।
সাইনবোর্ড এলাকা থেকে রাজধানীর পল্টনে টুপি কিনতে এসেছেন ব্যবসায় আবুল কাশেম। তিনি জানান, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ততা থাকায় কেনাকাটা করা হয়ে ওঠেনি। অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পরিবারের লোকজন কিনলেও বাকি আছে ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ টুপি, আতর। নিজের এবং সন্তানদের জন্য টুপি কিনতেই চাঁদ রাতে মার্কেটে আসা।
রাজধানীর ফুটপাতের দোকানগুলোতে গত কয়েকদিনের ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। তবে শেষ দিনও ক্রেতা সমাগমে জমে উঠেছে পোশাকের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলো। রাজধানীর অন্যতম আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানীতে রয়েছে পোশাকের নামিদামি ব্র্যান্ডের বেশ কিছু আউটলেট। সেখানেও ক্রেতাদের সমাগম হতে দেখা গেছে।
এবার ঈদের নতুন আকর্ষণ আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে এবার ঢাকার সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। গ্রামের ঈদগাহের পাশে ছোট করে যেমন মেলা থাকে, বাণিজ্য মেলার মাঠেও এবারের ঈদ আয়োজনে তেমন মেলা থাকবে বলে জানিয়েছেন।