পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল এলাকায় ভিড় করছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। গত কয়েকদিন যাত্রীর চাপ না থাকলেও বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুপুর থেকে নৌযাত্রীদের চিরচেনা ভিড় দেখা গেছে সদরঘাটে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর একরকম অকেজো হয়ে পড়া সদরঘাটে ফিরেছে চাঞ্চল্য। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট টার্মিনাল ও পন্টুন এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রী-ঠাসা লঞ্চগুলো ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। ঈদের দুদিনের মতো বাকি থাকতেই ডেক ও কেবিনে পরিপূর্ণ যাত্রী থাকায় সন্তুষ্ট লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা। পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোতে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন যাত্রীরা। আর বাইরে হাঁক-ডাক করে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন লঞ্চের স্টাফরা।
এদিকে যাত্রীদের ভিড়ে গুলিস্থান থেকে সদরঘাট সড়কেও তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে ঘাটে আসতে বেগ পেতে হয়েছে যাত্রীদের। অনেকেই পুরো রাস্তা হেঁটে এসেছেন ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে। বিশেষ করে ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি। তবে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা থাকায় সহজেই টিকিট পেয়েছেন সবাই।
বরিশালগামী যাত্রী সোহান ফরাজি বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্যাপক যানজট। এইটুকু আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। রায় সাহেব বাজার থেকে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে এসেছি পরে। গাড়ির চাকায় নড়ে না। তবে আগে কেবিন বুক করে রেখেছিলাম। তাই ভোগান্তি হয়নি।’
চাঁদপুরগামী যাত্রী সাখওয়াত হোসেন বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছি। সড়কে ভোগন্তি হলেও তার থেকে বাড়ি ফেরার আনন্দ বেশি। অগ্রীম টিকিটি শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যবস্থা করতে পারিনি, একারণে ডেকে যেতে হচ্ছে। ঘাটে ভিড় আছে, তবে অন্য যেকোনও বছরের তুলনায় পরিবেশ ভালো।’
এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার কালাম হোসেন বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, গতবার ঈদের আগের দিন যাত্রী হইছিল। এবার দুইদিন আগেই অনেক যাত্রী। কেবিন সবগুলো বুক, আর ডেকও প্রায় ভড়ে গেছে। যাত্রীই আমাদের ঈদ, যাত্রী না হলে আমাদের ঈদ হয় না।’
কর্ণফুলী ১৩ লঞ্চের টিকেট মাস্টার ফাহিম মিয়া বলেন, ‘গত চার-পাঁচদিন ফাঁকা লঞ্চ নিয়ে গেছি। আজ অনেক যাত্রী। কেবিন সব বিক্রি হয়ে গেছে। ডেকেও যাত্রী আছে।’
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেছেন, নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি বরদাশত করা হবে না। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. একরাম উল্ল্যাহ বলেন, ‘যাত্রীর চাপ বেশি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় কোনও বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। এছাড়াও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা ঘাট এলাকায় তৎপর রয়েছে। আশা করছি সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর সদরঘাট থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকে। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস থাকবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সদরঘাট থেকে ৫০টি রুটে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে ১৭৫টি লঞ্চ। ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।