সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সাত দফা থেকে একদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন ও ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধ) কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কলেজটির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মুক্তার।
তিনি বলেন, আজ থেকে আমরা আর সাত দফা চাই না। এখন থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির একদফা দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া আটটার দিকে তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী মুক্তার।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, আমরা সেটি প্রত্যাখ্যান করছি। তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমাদের সাত দফা দাবি থেকে একদফা দাবি ঘোষণা করছি। সেটা হলো- মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনও কর্মকর্তা এখানে (কলেজ) এসে আমাদের বলবেন, আপনাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হলো। তাহলেই আমরা রাজপথ ছেড়ে আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো৷
তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে আমাদের চারজন শিক্ষার্থী অনশন থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এরপরও রাষ্ট্রের কোনও মাথাব্যথা নেই। সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না। এতে করে যদি আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন দিতে হয়, তাতেও আমরা প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের কোনও ক্ষতি হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। এছাড়াও আন্দোলনের প্রভাবে রাষ্ট্রের কোনও ক্ষতি কিংবা সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগের বিষয়টিও সরকারকে নিতে হবে৷ আমরা জনসাধারণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। যার ফলে গতকাল ঘোষিত বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিকাল থেকে একটি মিছিল মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর সড়ক সাময়িকভাবে অবরোধ করে। তবে আমরা বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধ করা হবে। পর্যায়ক্রমে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর অবস্থানে যাবে।
এরআগে, শুক্রবার রাতে কলেজের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে শনিবার বিকাল চারটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে প্রথমে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং ঘুরে আবারও কলেজের সামনে হয়ে গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করেন। পরে প্রায় পৌনে একঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর রাত আটটার দিকে কলেজের সামনে ফিরে আসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এরআগে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত থেকে কলেজের সামনে অনশনে বসেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে শুক্রবার রাতে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় দুইজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শনিবার বিকালে অনশনরত অবস্থায় আরও দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরও ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আগামীকালের কর্মসূচি
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে অনশন ও বারাসাত ব্যরিকেড টু নর্থ সিটি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত তাদের একদফা কর্মসূচি চলবে। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) কলেজের সামনে থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর মহাখালী থেকে গুলশান সড়ক অবরোধ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পুরো এলাকা অবরোধ করা হবে বলেও জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মুক্তার।