নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের দৈনিক ভিত্তিক পিয়ন-কাম-গার্ডরা। একইসঙ্গে আগামী সাত দিনের মধ্যে দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফরিদপুর জোনে কর্মরত আহসান হাবিব বলেন, ব্যাংকের বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি পেশ, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, সুধী সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। ২০১৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকেও আমাদের দাবি জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম উপদেষ্টা বরাবর আমরা বেশ কয়েকবার দাবি তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠানে ৪০টি জোনাল অফিসের জোনাল ম্যানেজার, কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তুলে ধরেছি। ২০১৮ সালের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। প্রধান কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়েছি। বিভিন্ন সময়ে দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করার অপরাধে গ্রামীণ ব্যাংকও আমাদের অনেক সহযোদ্ধাদের চাকরিচ্যুত, বদলির হুমকি-ধামকি দেয়। আমাদের চাকরি স্থায়ী না হলেও প্রতিষ্ঠান আমাদের স্থায়ী কর্মীর মতো করে বদলি করে, চাকরিচ্যুত করে।
গ্রামীণ ব্যাংক দেশের একটি সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে আহসান হাবিব বলেন, দেশের আর কোনও এনজিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলি। আমরা কাজ করলে মজুরি পাই, না করলে পাই না। তারপরও প্রতিষ্ঠান আমাদের নানাভাবে শোষণ করে। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী বিদায়কালীন পেনশন দেওয়ার কথা বলে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে জমা করা হয়। যার পরিমাণ বছরে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৬০০ টাকা। আমাদের ২০ বছর চাকরি বয়স হলে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান সার্কুলার জারি করেছে আমরা ২০ বছর চাকরি করলে আমাদেরকে ৫ লাখ টাকা দেবে। এই সামান্য টাকা নিয়ে আমরা কী করবো?
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। তার সুখ্যাতিও আছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের কোনও নিরাপত্তা নেই। এটা বাংলাদেশের অনেক মানুষ জানে না, আন্তর্জাতিক ভাবেও জানে না। এটা অবিশ্বাস্য যে, এরকম একটা খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের সঙ্গে এত বৈষম্য এবং অনিয়ম হয়।
তিনি আরও বলেন, আজকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছে— সেই অবস্থা এখনও অব্যাহত আছে, আমি তার নিন্দা জানাই। তাদের দাবিগুলোর প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাই।
গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো—
১. অবিলম্বে দৈনিক ভিত্তিতে পিয়ন-কাম-গার্ড হিসেবে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগের ৯ মাস পর থেকে সার্কুলার অনুযায়ী স্থায়ীকরণ এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে।
২. নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র, সবেতনে সব প্রাপ্ত ছুটি, বোনাসসহ বাংলাদেশের শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত অধিকার দিতে হবে।
৩. গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুযায়ী মাসিক বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন, গ্রাচুইটি, ঋণ সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তার যাবতীয় সুবিধা দিতে হবে।
৪. আন্দোলন ও সংগঠন দমনে শাস্তিমূলক ছাঁটাই, বদলি বন্ধ করতে হবে। আন্দোলনের কারণে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করতে হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
৫. চাকরি স্থায়ীকরণ করে নিয়োগের শুরু থেকে অদ্যাবধি সব ধরণের প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে।
এ সময় তারা আগামী ১ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা ও জোন পর্যায়ে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন আল মামুন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।