পরপর দুই বার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে বোমা রাখার ভুয়া বার্তা নিয়ে তোলপাড় হলেও এখন পর্যন্ত আইনি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনকি এই বিষয়ে কোনও তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেলেও এখনও দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থার উদ্যোগ না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
পরপর দেওয়া বার্তা দুটি ভুয়া হলেও এই ধরনের তথ্যকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বেবিচকের উচিত হবে, বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়া। প্রয়োজনে যেই দেশের নম্বর থেকে ‘হুমকি’ বা ‘বার্তা’ পাঠানো হয়েছে, সেই দেশের সহযোগিতা নিয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেবিচকের কোনোভাবেই উচিত হবে না, এ বিষয়গুলো হালকাভাবে নেওয়ার। তারা যদি দৃশ্যমান কঠোর কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এ ধরনের হুমকি আরও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সবার-ই সমস্যা হবে। তাই তাদের উচিত হবে, দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করা।’
যদিও বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে। শিগগিরই অপরাধী চিহ্নিত হবে বলেও বিশ্বাস তার।
গত ২২ জানুয়ারি ইতালির রোম থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩৫৬ এর ভেতরে বিস্ফোরক রাখার বার্তা আসে এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের নম্বরে। পাকিস্থানের একটি নম্বর দিয়ে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট থেকে ওই বার্তাটি আসার পরপরই এটি বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। পরে ঊর্ধ্বতনদের উপস্থিতিতে ফ্লাইটটির জরুরি অবতরণ করানো হয়। ফ্লাইট থেকে নিরাপদেই বের করে আনা যাত্রী ও ক্রুদের। পরে বিমান বাহিনীর কুইক রেসপন্স ফোর্স, বোমা বিশেষজ্ঞ টিম, এপিবিএনর কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড, ডিএমপির স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা ব্যাপক তল্লাশি চালায়। কিন্তু ফ্লাইটে কোনও কিছুরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। যদিও ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করতে হয় শীর্ষ থেকে নিম্নস্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
এই রেশ কাটতে না কাটতে ওই দিবাগত রাতেই একই ধরনের আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়। এবার বার্তাটি আসে মালয়েশিয়ার একটি নম্বর থেকে। বার্তায় বলা হয়, এবার বিমানবন্দরেরই কোথাও রাখা একটি লাগেজে বিস্ফোরক রাখা আছে। এই বার্তা পাওয়ার পরও যথারীতি বিমানবন্দরের নিরাপ্তা বাড়ানো হয়। কোনায় কোনায় চালানো হয় তল্লাশি। তবে এবারও কোনও কিছুর অস্তিত্ব পাননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ওই সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এ ধরনের যে কোনও বার্তা আসলে, সেটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি। এ ধরনের ঘটনা কারা ঘটাতে পারে, তাদের অবস্থান কী; সেই সব বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখবো।’
যদিও ঘটনার চার দিনেও রবিবার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত থানায় কোনও জিডিও করা হয়নি। এমনকি এই বিষয়ে কোনও ধরনের তদন্ত কমিটিও গঠন করেনি কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি যেহেতু ভুয়া, সেকারণে হয়তো বেবিচক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি হালকাভাবে নিয়েছে। তবে এটি কোনোভাবেই হালকা করে দেখা উচিত হবে না।
বিমানবন্দরে সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এই হুমকির নেপথ্যে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও মনে করছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও বেশি ব্যবহৃত এই বিমানবন্দরের সুনাম বা ক্যাটাগরিতে নিচের দিকে নামাতে এ ধরনের তৎপরতা চালানো হতে পারে।
আর এ কারণেই এর সঠিক ও যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশ থেকেই নাকি দেশের বাইরে থেকে এই ধরনের হুমকি দেওয়া হলো, সেটি খুব দ্রুত বের হওয়া প্রয়োজন। কেননা এটি বের না হলে এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখবো। কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে অপরাধীরাও বার বার এ কাজ করতেই থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনই বিষয়টি নিয়ে বেবিচকের জিডি করা উচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে আলোচনা করে যথাযথ তদন্ত করার জন্য কোনও একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া। তবে যেহেতু তারা এটি করেননি, এখনও যে সুযোগ নেই তা নয়।’ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সবার জন্যই মঙ্গল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।