হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মারধরের শিকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নরওয়ের গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশে তার ছেলেকে (সাঈদ উদ্দিন) মারধরের বিচার না পেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বিচার দেবেন। শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি এ কথা জানান।
গিয়াস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে। তিনি বলেন, ‘শনিবার বিকাল ৩টায় সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তাদেরও একই কথা জানাবো।’
তিনি বলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, আমার ছেলে মহিউদ্দীন, সাঈদ উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাত আরা আমরা সবাই নরওয়ের নাগরিক। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বুধবার (৮ জানুয়ারি) আমরা ঢাকায় অবতরণ করি। আমাদের ইমিগ্রেশন শেষ করে বাইরে আসি। আমি খেয়াল করে দেখি, আমার ছোট ছেলে সাঈদ নাই। এরপর গেটের ডানপাশে দাঁড়ালে নিরাপত্তাকর্মী আমাকে সরে দাঁড়াতে বলে। রূঢ় আচরণ করে। এক পর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দেয়। এই অবস্থায় আমার ছোট ছেলে চলে আসে। পরিস্থিতি দেখে সে রেগে যায়। তার সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীর বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তারা সবাই মিলে আমার ছেলেকে মারপিট করে।’
গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে এক প্রকার জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত আমাদের বসিয়ে রাখা হয়। ওই ঘটনার পর আমরা সবাই আতঙ্কিত। এক ধরনের ট্রমায় ভুগছি।’
জানা গেছে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে গিয়াস উদ্দিন তার ছেলে সাঈদ উদ্দিনসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন। সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের ২ নম্বর ক্যানোপি গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। গেট সংলগ্ন ডানপাশে দাঁড়ানো অবস্থায় এক এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় সাঈদ উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে তাকে ধাক্কা দেন। এর পরপরই অন্যান্য এভসেক সদস্য ও আনসার সদস্যরা সাঈদকে ভেতরে কনকর্স হলের দিকে নিয়ে যান। তাকে মারপিট করা হয়। পরে গভীর রাতে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয় সাঈদকে।
এদিকে ঘটনার পর বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার রাত সোয়া ৭টার দিকে বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনী ক্যনোপি ২ এর সামনে দুই জন যাত্রী দ্বারা বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে কামরুল ইসলাম জানান, পাঁচ জন যাত্রী বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে ক্যনোপি ২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ গেটের সমানে অবস্থান করলে সব যাত্রীর জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করতে গেলে তিনি রাগান্বিত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে উল্লেখিত যাত্রীর ছেলে ঘটনাস্থলে এসে নিরাপত্তাকর্মীকে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। পরে আনসার ও এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন।
আরও পড়ুন...
বিমানবন্দরে নিরাপত্তাকর্মীর পিটুনিতে রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা