ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রতিবারের মতো এবারও দর্শকদের জন্য নিয়ে এসেছে দেশি-বিদেশি নানান পণ্যের সমাহার। তবে মেলায় কেনাকাটার পাশাপাশি দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে নানান মুখরোচক খাবারের আয়োজন এবং বিনোদনের ব্যবস্থা। এ বছর মেলার ভিন্নধর্মী কিছু আয়োজন দর্শকদের অভিজ্ঞতায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
মেলায় প্রবেশ করতেই এর উত্তর পাশে চোখে পড়ে খাবার ও বিনোদনের কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি বিদেশি খাবারের স্টল। জনপ্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানি, কাবাব, ফাস্ট ফুডসহ নানাবিধ খাবারের পসরা সাজিয়েছে বিভিন্ন স্টল। স্বাস্থ্যসচেতন দর্শকদের জন্যও রয়েছে দেশীয় খাবার চেইন শপগুলোর নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশন ব্যবস্থা। মেলায় ঘোরাঘুরির মাঝে এসব খাবার দর্শনার্থীদের জন্য এনে দিচ্ছে এক অন্যরকম স্বাদ।
শিশুদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে বাহারি আয়োজন। নাগরদোলা, চরকি, ওয়াটার গেম, স্লাইডারসহ বিভিন্ন খেলাধুলার ব্যবস্থায় শিশুদের সঙ্গে উৎসবমুখর সময় কাটাচ্ছেন তাদের অভিভাবকরাও। মেলায় ঘুরতে এসে শিশুদের আনন্দময় মুহূর্তগুলো হয়ে উঠছে পরিবারের সবার জন্যই এক বিশেষ অভিজ্ঞতা।
এবার মেলায় তরুণদের জন্য রয়েছে এক বিশেষ চমক। ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিকে উজ্জীবিত করতে তৈরি করা হয়েছে ‘৩৬ চত্বর’ ও 'জুলাই চত্বর'। এই দুটি সাজানো হয়েছে আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও স্লোগান দিয়ে। তরুণ দর্শনার্থীরা এখানে এসে আন্দোলনের দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করছেন। চত্বরে সেদিনের ঘটনা প্রতিফলিত হওয়ায় অনেক সিনিয়র নাগরিকও ভিড় জমাচ্ছেন।
তরুণদের জন্য আরও রয়েছে বিশেষ প্যাভিলিয়ন ‘ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন’। এখানে আন্দোলন, সংগ্রাম এবং তরুণদের উজ্জীবিত করার নানা লেখা, ছবি ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হচ্ছে। তরুণরা ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন এবং ৩৬ চত্বরে এসে ছবি তুলছেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এবং নতুন প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক বার্তা তুলে ধরছেন।
বাণিজ্য মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম বিশেষ আয়োজন হিসেবে রাখা হয়ে গানের কনসার্ট।
মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলছেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কেবল কেনাকাটার স্থান নয়, বরং এটি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিনোদন এবং তারুণ্যের উদ্যমের এক মেলবন্ধন। এখানকার প্রতিটি আয়োজন দর্শনার্থীদের জন্য হয়ে উঠেছে স্মরণীয় এবং অনুপ্রেরণামূলক।
শিশু সন্তানকে নিয়ে আসা শান্তা ইসলাম বলেন, প্রত্যেক বছরই বাণিজ্য মেলায় আসা হয়। মেলায় একটা সময় কাটে এইখানে। আমার দুই বাচ্চাও জানে মেলায় গেলে খেলাধুলার সুযোগ হবে। তাদের আনন্দ দেখে আমাদেরও ভালো লাগে।
তুরকিয়ে জনপ্রিয় আইসক্রিম প্যাভিলিয়নে আসা রুকাইয়া রহমান বলেন, 'এটি এখন প্রায় শপিং মলে পাওয়া যায়। তবু বাণিজ্য মেলায় আসবো আর খাবার খাবো না তা হয় না। অন্য যেকোনও মেলা থেকে এখানের বিষয়টাই আলাদা। কেনাকাটা ও খাবার এটাই এই মেলার আকর্ষণ।
৩৬ চত্বরে বনানী থেকে আসা তরুণ আসাদুল করীম শাহিন বলেন, তখন তো আমিও রাজপথে ছিলাম আমরা তরুণরা জানি কী রিস্কের মধ্যে ছিলাম। যেকোনও সময় মরে যেতে পারি এমনটাই মনে হতো। তবু বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ি নাই। আমরা জানি, জুলাই-আগস্ট আমাদের জন্য কী। মেলায় এটা এবং জুলাইকে নিয়ে প্যাভিলিয়ন দেখে ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগবে যদি দেশটা দুর্নীতি মুক্ত হয়।