X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৫ বৈশাখ ১৪৩২

নববর্ষ উদযাপনে ‘আতশবাজি-ফানুস’ পোড়ানো বন্ধের সুপারিশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:০১

ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে ‘আতশবাজি-ফানুস’ পোড়ানো বন্ধের সুপারিশ জানিয়েছে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ক্যাপস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশ করা হয়। ‘নববর্ষ উদযাপনের সময় আতশবাজি পোড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং আতশবাজি ও ফানুস মুক্ত নববর্ষ উদযাপনের দাবি’তে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানোর সময় ২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশ ও ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ১০২ শতাংশ ও ২০২৪ সালে ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে এই সুপারিশ জানায় ক্যাপস।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ এই সময়ের মধ্যে বায়ুমান সূচক কখনোই ভালো অবস্থানে ছিল না। বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে ভালো বায়ু বলা হয়, সেক্ষেত্রে গত ৭ বছরে নির্দিষ্ট দুই দিনে (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি) কখনোই বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে ছিল না। তবে উল্লেখ্য ২০২১-২২ সালে করোনাকালীন সময়ে কম আতশবাজি, পটকা, ফানুস পোড়ানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, এই বছর ৩১ ডিসেম্বর রাতে নববর্ষ উদযাপনের আগে ৩ ঘণ্টার গড় বায়ুমান হতে, নববর্ষ উদযাপনের শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর মানের অবনতি হতে শুরু করে। রাত ১২টা বাজার আগে থেকে আতশবাজি, ফানুস পোড়ানোর শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বায়ু দূষণও বাড়তে থাকে। বস্তুকণার এর দূষণের মাত্রা রাত ১টায় প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে ২৪৯ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছায় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

শব্দদূষণ প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলেন, ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের ফলে যে শুধু বায়ু দূষণ হচ্ছে— এমনটি নয়। এর ফলে মারাত্মক শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ১১টা থেকে শুরু করে ১টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকার তীব্র শব্দ শোনা যায়। ক্যাপসের গবেষণা দল গত ৭ বছর যাবত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে শব্দ দূষণের তীব্রতাও পর্যবেক্ষণ করে আসছে। ফলাফলে বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১টার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় গড়ে (Leq) শব্দের মান ৪৮ থেকে শুরু করে ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু এই শব্দের মাত্রা ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে সর্বনিম্ন ৮৫ ডেসিবল থেকে শুরু করে গড়ে সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত বা আরও বেশি অতিক্রম করে।

ক্যাপসের গবেষণা দলের মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয়েছে রাত ১২ থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দ দূষণের আগের দিনের (৩০ ডিসেম্বর) তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বেশিরভাগ সময় শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে ছিল। যদি আমরা ঢাকা শহরকে একটি মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী মিশ্র এলাকার জন্য রাতের বেলা শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাতে এই মানমাত্রা কখনোই ৫০ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, শব্দের মাত্রা এত তীব্র যে শিল্প এলাকার জন্য নির্ধারিত শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করে। 

হিসাব করে দেখা যায় যে, গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত গড়ে ৯০ শতাংশ সময় শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করেছে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এ সময় আনন্দ উদযাপন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ৬টি সুপারিশ জানায় ক্যাপস। তাদের সুপারিশগুলো হলো— 

১. দূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

২. আতশবাজি এবং ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা যেতে পারে।

৩. গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।

৪. শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৬. দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. রাশেদুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

/এএজে/এমকেএইচ/
সম্পর্কিত
দখল-দূষণে খরস্রোতা বড়াল এখন মরা খাল
‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি-নির্ভর উন্নয়নের নেতৃত্ব দিতে হবে’
শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি নয়, ন্যায় ও পরিবেশ রক্ষার দায়বদ্ধতা: পরিবেশ উপদেষ্টা 
সর্বশেষ খবর
'আর্চারি একটি পরিবার, সবাই মিলে কাজ করবো'
'আর্চারি একটি পরিবার, সবাই মিলে কাজ করবো'
যশোরে বজ্রাঘাতে কৃষকের মৃত্যু
যশোরে বজ্রাঘাতে কৃষকের মৃত্যু
ভোলায় ব‌াস ধর্মঘট প্রত‌্যাহার
ভোলায় ব‌াস ধর্মঘট প্রত‌্যাহার
যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
রিজার্ভ আরও বাড়লো
রিজার্ভ আরও বাড়লো
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মোদি: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
‘আমার স্বামীর কোনও দোষ নাই, শুধু আ.লীগ করে বলে মাইরা ফেলাইছে’
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
ইউআইইউ বন্ধ ঘোষণা
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছেই না, বাড়ছে ক্ষোভ-অসন্তোষ