নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, এই পাঁচ মাসে সড়কে দুর্ঘটনা কি কমেছে? আছে কোনও ইনিশিয়েটিভ? সরকার কোনও কাজ করে নাই।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রাফিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন আক্ষেপ ও ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কী করেছেন তারা? যিনি আমাদের তত্ত্বাবধায়ক, যিনি আমাদের সড়কের দায়িত্বে উনি কী করেছেন? সব দায়িত্ব আমাদের ওপর ছেড়ে দেবেন! আমি জীবনের ৩২টা বছর শেষ করেছি। আমি নিরাপদ সড়ক ক্যাম্পেইন করেছি। এতে কী হয়েছে। কিছুই হয়নি। আপনি রিকশায় মোটর লাগিয়ে দিলেন, রিকশার লাইসেন্স দিলেন, কিন্তু চালকের তো লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেন নাই।
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে আমি আন্দোলন শুরু করেছি। আজ আপনারা যারা নিজেদের তরুণ ভাবছেন, তারা ভাবেন আমি কেমন তরুণ ছিলাম। আমার তরুণ বয়সটাই এখানে কেটেছে। সড়কে চার লেন, হাইওয়ে পুলিশ—এগুলো কিন্তু আমাকে চাইতে হয়েছে। এখানে বুয়েটের যিনি শিক্ষক (সাইফুন নেওয়াজ) আছেন তাকে জিজ্ঞাসা করুন এক্সিডেন্ট রিসার্স ইন্সটিটিউট (এআরআই) আমার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। ২০১০ সালে নিরাপদ সড়ক নিয়ে আইন করার কথা আমি বলেছিলাম। হয়নি। এখন ২০১৮ সালে হয়েছে। আমি যে রাস্তা তৈরি করেছি সেটি দিয়ে আপনারা হাঁটছেন। এটা ভালো লাগছে।
নিসচা চেয়ারম্যান বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের ছাড়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সফল করা সম্ভব না। আমরা দাবি তুলতে পারি কিন্তু সেটা সফল করবে সরকার। এখানে বিরোধী দলের কথা সরকার শোনে না। এ জন্য আমাকে ৩২ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি সবার কাছে গিয়েছি। বলেছি এটা জাতীয় ইস্যু। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এসব ইস্যু নিয়ে সবাই এক হয়। আমাদের দেশে এক হতে পারে না। যখন সরকার আইন পাস করে তখন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বিরোধীদলীয়রা সম্পৃক্ত হয়। এই খেলা চলছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? তাদের কাজ সড়ক তৈরি করা। তাদের সড়ক ২৪ হাজার। আর স্থানীয় সরকারের আওতায় পৌনে দুই লাখ সড়ক। কই তারা কী কিছু দেখছে। তারা বসে আছে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব শহরের সব কিছু দেখা। এখানে কার কী দায়িত্ব সেটিই জানে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? তারা কী করছে। কোনও সমন্বয় নেই।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে বাইরে থাকলে আমি চিন্তিত থাকি। সব বাবা-মা’ই চিন্তিত থাকেন। আমরা মনে করি রোড সেফটি ল থাকা প্রয়োজন। সে মোতাবেক রোড সেফটি আইন করার প্রস্তাবনা আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমন আয়োজন করলে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষকেও উপস্থিত রাখতে হবে। উনারা আমাদের সঙ্গে থাকুক। আমরা যখন বাসে উঠি, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় যে ড্রাইভারটা খারাপ। আবার ওরাও মনে করে আমরা কম ভাড়া দেবো। আমরা চাই একটা সম্মানজনক সহাবস্থান তৈরি হোক।
তিনি আরও বলেন, আমার অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি আছে, কিন্তু আমি সেসব করি না। আমি কিছু ভলান্টিয়ার চাই, যারা সেবাগুলোকে সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করবে। একজন ড্রাইভার লাইসেন্স করতে এলো, সে যেন নির্বিঘ্নে, ঝামেলা বা ঘুষ ছাড়াই কাজটা করতে পারে। এক্ষেত্রে ভলান্টিয়াররা থাকলে কাজটা অনেক সহজ হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শিক্ষক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়কে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুহার কমানো। কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুহার তরুণদের। স্কুল-কলেজগুলোতে অনেক ক্লাব থাকে, এসব ক্লাবের পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক নিয়ে ক্লাব করতে হবে। যারা সড়কের সচেতনতা নিয়ে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নিসআ’র সভাপতি আব্দুল্লাহ মেহেদি দীপ্তি ও সাধারণ সম্পাদক তানজিদ মোহাম্মদ সোহরাব রেজা প্রমুখ।