X
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২

পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধের রায়ে সংবিধানে যা ফিরলো, যা ফিরলো না 

বাহাউদ্দিন ইমরান 
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:০০আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৩

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সরাসরি না ফেরানোসহ পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তা পরবর্তী সংসদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে ওই রায়ের মাধ্যমে আনা সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদ ফিরলেও আপাতত কিছু বিষয় বাদ পড়েছে।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।  

তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর চলতি বছরের ১৯ আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট দায়ের করেন। অন্য চার জন হলেন— তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এরপর এ রুলের ওপর মতামত দিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও ইনসানিয়াত বিপ্লব যুক্ত হয়। 

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারি করে হাইকোর্ট। কিন্তু দুর্নীতি ও আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে বিচারপতি নাইমা হায়দারকে ছুটিতে পাঠানো হলে আবেদনকারী পক্ষ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে ‍উপস্থাপন করেন। এরপর মোট ২৩ কার্যদিবস হাইকোর্টে রুলটির ওপর শুনানি হয়। 

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। 

মামলাটির শুনানি শেষ হওয়ায় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক অবৈধ ঘোষণা করে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা করলেন। 

রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ 

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সংবিধান হচ্ছে একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন। অন্য সব আইনই সংবিধানের নিরিখে বিচার্য হবে। আর সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। যেকোনও আইনের বৈধতা-অবৈধতা নিরূপণ করবে সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধান কেবল অতীত এবং বর্তমানকে নিরূপণ করে না। এটা ভবিষ্যতের জন্যও। একইভাবে সংবিধান কেবল দালিলিক বিষয় নয়, এটি একটি জীবন্ত… একটি সংবিধান একটি জাতির ভিত্তি এবং মৌলিক নির্দেশক। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংবিধান হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকাশমান এবং পরিবর্তনশীল। সময় এবং সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী বিকাশমান এবং পরিবর্তনশীল। সাংবিধানিক ও আইনগত পরিবর্তনগুলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অনুযায়ী করতে হবে। সেখানে সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সংসদকে অবারিত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সংসদের ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে মৌলিক কাঠামোর মাধ্যমে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যদিও মৌলিক কাঠামো অসংশোধনযোগ্য। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ ৫৪টি বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। পঞ্চদশ যে সংশোধনী আনা হয়েছে তা আপিল বিভাগের ত্রয়োদশ সংশোধনীর সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একমাত্র গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা যায়। গণতন্ত্র হচ্ছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। এটি কোনোভাবেই সংশোধন করা যাবে না। গণতন্ত্র বিকশিত হয় একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মূল সংবিধানে ছিল না। কিন্তু একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের অভিপ্রায়ে ১৯৯৬ সালে তা সংবিধানে যুক্ত করা হয়। ফলে এই ব্যবস্থাটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশে পরিণত হয়েছে। কারণ, এই ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জনগণের আস্থার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি। এই তিনটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নির্বাচনি ব্যবস্থার পাশাপাশি জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। এর সর্বশেষ প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি, সর্বশেষ সরকারকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। সরকারকে বিতাড়িত করতে গিয়ে হাজার হাজার হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটি নতুন গণতন্ত্র, নতুন স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশ, যা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনী জনগণের এসব আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।  

রায়ের সিদ্ধান্তে যা বলেন হাইকোর্ট 

রায়ের সিদ্ধান্তে হাইকোর্ট বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত ৫৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেহেতু সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে গণভোট বাধ্যতামূলক, সেহেতু সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন আনাও অসাংবিধানিক হয়েছে। ফলে ১৪২ অনুচ্ছেদ হুবহু পুনঃস্থাপন করা হলো। অষ্টম সংশোধনীর মামলার রায়ের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্বকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৭(ক) অনুচ্ছেদ বাতিল ও সংবিধানের অসংশোধনযোগ‍্য বিধান সংক্রান্ত ৭(খ) বাতিল ঘোষণা করা হলো। অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ের সঙ্গে ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সাংঘর্ষিক। 

রায়ের পর আদালত বলেন, আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোটা বাতিল করিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বিধান বাতিল করা হলো, যা ভবিষ্যতে কার্যকর হবে। ১৪২ অনুচ্ছেদ বাতিল করার মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছাকে বাতিল করা হয়েছিল। যে কারণে ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করা হলো। সংশোধনীর বাকি বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলো। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী তা পরিবর্তন করা যেতে পারে।  

রায়ের পর আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া  

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করেনি, কিছু জিনিস রেখে দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিরাপত্তায় বিষয়টি সংরক্ষণ করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে যে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল তা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোট পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়ার বিষয়টিও পুনরুজ্জীবিত করা হলো। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ৭(ক) এবং ৭(খ) অনুচ্ছেদের বিষয়ে সংসদে যদি সংবিধানের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করে তাহলে সেটাকে সাংবিধানিক রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয়টিও বাতিল করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে ৪৪ অনুচ্ছেদ অধস্তন আদালতের কাছে উচ্চ আদালতের কিছু ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিষয়টিও বাতিল করা হয়েছে। এর বাইরে সংবিধানে জাতির পিতা, ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাসহ পঞ্চদশ সংশোধনীতে আরও যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছেন হাইকোর্ট। যেগুলো ভালো মনে করেন সেগুলো রাখবেন, যেগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে করবেন সেগুলো বাতিল করবেন। 

আরেক আইনজীবী ব‍্যারিস্টার শরীফ ভূঁইয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল, একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাও ধ্বংস করা হয়েছিল। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার ফলে দেশে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করা হলো। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে শুধু সাংবিধানিকই নয়, একইসঙ্গে সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ বলে রায় দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলকে শুধু অবৈধই নয়, আদালত বলেছেন—যেহেতু নির্বাচন গণতন্ত্র সংবিধানের মূল কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের মূল কাঠামোরও একটি অংশ। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতন্ত্র এবং নির্বাচনকে সুসংহত করে, সেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানের একটি মূল কাঠামো। 

পঞ্চদশ সংশোধনীর এই অবৈধ ঘোষণার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে জানিয়ে ব‍্যারিস্টার শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এখনই ফিরে এসেছে বলা যাবে না। কারণ এই ব্যবস্থাকে দুভাবে বাতিল করা হয়েছিল। প্রথমত, আপিল বিভাগ, বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে একটি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিলেন। পরবর্তীকালে সংসদ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে। আপিল বিভাগের ওই রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) রায়ে পরিবর্তিত হতে হবে। এ বিষয়ে একটি রিভিউ শুনানিতে আছে। 

অ‍্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায় প্রসঙ্গে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ আজকের রায়ের মধ্যে আদালত বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। ১০৬ অনুচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে মতামত নিয়ে করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ফুল বেঞ্চ মতামত দিয়েছেন, এটি সাংবিধানিক ওপিনিয়ন। আপিল বিভাগ সাংবিধানিক মতামতে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ওনাদের কাছে বলেছেন, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন, অন্য কাউকে ডেকে সরকার ঘটন করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে আইনি কোনও বাধা আছে কিনা। সুপ্রিম কোর্ট গোটা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বলছে, এটা বৈধ ও সাংবিধানিক সরকার হবে। এটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক কোনও প্রভিশন নেই। 

এক প্রশ্নের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামকরণ হবে মত তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রিনেমড হবে, যেমন আমি বলি— জেলা ও দায়রা জজের নাম শুনেছেন। একই ব্যক্তি যখন সিভিল মামলা করেন তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ। ওই একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন, তখন তাকে জেলা জজ বলা যায় না, তখন তিনি দায়রা জজ। এই ব্যক্তিগুলোই যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেমে চলে যাবে ওনারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হবেন। এটা সাংবিধানিক সাংঘর্ষিকের কোনও জায়গা নেই। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে অ‍্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগে যে রিভিউ পেন্ডিং আছে তা বাইপাস করেই এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেন আছে, তত্ত্বাবধায়কের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দুটি রেশিও, এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বৈধ নাকি অবৈধ। এই পার্টে চার জন বলছেন অবৈধ, তিন জন বললেন বৈধ। দ্বিতীয় পার্টে সবাই বললেন—পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে। এই যে পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে, তার আগেই পঞ্চদশ সংশোধনী চলে এসেছে, তাহলে ধরে নেওয়া হবে, ওই জাজমেন্ট রেশিও এখনও অপারেটিভ আছে, কার্যকর আছে। তাহলে কমপক্ষে আগামী দুটি নির্বাচন তো আপিল বিভাগের অ্যাটেনশন লাগে না। 

এদিকে রায় ঘোষণা শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা নিয়ে আপনারা একজন নারী বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এসেছিলেন। একজন নারী বিচারপতির ওপর আস্থা রেখেছেন, এ কারণে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। এ রায় দিতে পেরে আমি গর্বিত। আমি মনে করি নারী জাতির জন্য এটি গর্বের বিষয়। এ রায় দেওয়ার সময় আমরা জনগণের চাওয়া ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেছি। পরে আইনজীবীরাও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুন:

বিচারপতি খায়রুল হক জ্ঞানপাপী, মাহমুদ হোসেন বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছেন: অ‍্যাটর্নি জেনারেল

পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় ঘোষণার পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বললেন, ‘আমি গর্বিত’

পঞ্চদশ সংশোধনী আংশিক অবৈধ: হাইকোর্ট

 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক শাস্তিযোগ‍্য অপরাধ, আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
গাজায় গণহত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ব্যর্থ: সাইফুদ্দীন মাইজভাণ্ডারী
বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি বিএসপির আহ্বান
সর্বশেষ খবর
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মার্কিন অর্থায়ন বাতিলের প্রস্তাব
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মার্কিন অর্থায়ন বাতিলের প্রস্তাব
চা বাগানে ছাত্রলীগ কর্মী খুন
চা বাগানে ছাত্রলীগ কর্মী খুন
গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের ভিডিও ভাইরাল, অভিযুক্ত যুবক আটক
গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের ভিডিও ভাইরাল, অভিযুক্ত যুবক আটক
ভুল করে ১৬৩৭ বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর বিতরণ, আট মাস পর নেওয়া হলো ফেরত
ভুল করে ১৬৩৭ বিদ্যালয়ে প্রজেক্টর বিতরণ, আট মাস পর নেওয়া হলো ফেরত
সর্বাধিক পঠিত
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে কিছু পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা
ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে কিছু পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা
আউটসোর্সিং-কর্মীদের জন্য সুবিধা বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার
আউটসোর্সিং-কর্মীদের জন্য সুবিধা বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার
দুর্নীতির মামলায় নুরুল আমিনের ৫ বছরের কারাদণ্ড
দুর্নীতির মামলায় নুরুল আমিনের ৫ বছরের কারাদণ্ড
জনপ্রশাসনের সাবেক সচিবের ছেলে মোরসালিনের ৫৪ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ
জনপ্রশাসনের সাবেক সচিবের ছেলে মোরসালিনের ৫৪ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ